ঝিনাইদহে ৯৫ মামলায় বিএনপির ৩৮ হাজার নেতাকর্মী আসামী ॥ কারাগারে ২শ জন

mamlaআহমেদ নাসিম আনসারীঃ সরকার বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় বিএনপির ৩৮ হাজার একশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানী মুলক মামলা হয়েছে। গনহারে দায়ের করা এ সব মামলায় গ্রেফতার বানিজ্য এখন তুঙ্গে। আদালত থেকে জামিন হলেও পুলিশ হয়রানী কমছে না। এছাড়া আওয়ামী লীগের নির্যাতন ও মারধর যেন নিত্যসঙ্গী। ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত জেলার ৬ উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মোট মামলার সংখ্যা ৯৫টি। এসব মামলায় মোট আসামী ৩৮ হাজার ১০০ জন। বর্তমান কারাগারে দুইশ নেতাকর্মী আটক আছেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বিএনপির প্রথম সারির নেতা থেকে গ্রাম পর্যায়ে সাড়ে ৮ হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা আছে। এ সব মামলায় এখনো পর্যন্ত ২০ জন নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি রয়েছেন। শৈলকুপা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান খান দিপু জানান, শৈলকুপা উপজেলায় মোট ১১টি মামলায় ১৬শ নেতাকর্মীর বিরুদ্দে মামলা রয়েছে। কারাগারে আটক আছেন ১১ জন। হরিণাকুন্ডু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড এম এ মজিদ জানান, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় বিএনপির নামে ২১টি মামলায় দশ হাজার আসামী রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার নেতাকর্মীর নাম উলে¬খ করে পুলিশ মামলা করেছে। কারাগারে বর্তমান হরিণাকুন্ড উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৭০ জন বিএনপি কর্মী বন্দি আছেন। কোটচাঁদপুর উপজেলা বিএনপির নেতা সিরাজুল ইসলাম জানান, কোটচাঁদপুর উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৯টি মামলায় দুই হাজার পাঁচশ জন আসামী রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০০ জনের নাম উলে¬খ করে মামলা হয়েছে। বর্তমানে কারাগারে আটক আছেন ১০ জন। মহেশপুর বিএনপি নেতা মহিউদ্দীন জানান, সেখানে বিএনপির নামে ২১টি মামলায় আসামী প্রায় ১২ হাজার। কারাগারে ৭০/৮০ জন আটক থাকলেও তিনিসহ শত শত নেতাকর্মী পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কালীগঞ্জ বিএনপি নেতা হামিদুল ইসলাম জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০টি মামলায় ১৬শ জনের নাম উলে¬খ করে প্রায় ৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছে পুলিশ। তবে সব মামলায় আদালত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা জামিনে আছেন। এদিকে বিএনপির প্রচার সেল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে হয়রানী মুলক এ সব মামলা দায়ের করে পুলিশের এক শ্রেনীর কর্মকর্তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগান বনে যাচ্ছেন। আসামী গ্রেফতারের নামে জামায়াত বিএনপির টাকায় কতিপয় ওসি লাখপতি হয়ে গেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে সাবেক কয়েকজন ওসি গ্রেফতার বানিজ্য করে ঢাকায় বেনামে ফ্লাট কিনেছেন। কালীগঞ্জ থানার সাবেক ওসি মনিরুদ্দীন মোল¬া, কোটচাঁদপুর থানার ওসি শাহজাহান, মহেশপুর থানার ওসি আকরাম হোসেন, শৈলকুপা থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও হরিণাকুন্ডু থানার বর্তমান ওসি মহ্বিুল ইসলামের বিরুদ্ধে গনহারে বানিজ্য করার খবর বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় গ্রেফতার বানিজ্য করা ওসিদের নামের তালিকাও প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও বানিজ্য থেমে নেই। অজ্ঞাত নামা আসামীদের স্থানে নতুন নতুন ব্যক্তিদের ঢুকিয়ে বেশুমার বানিজ্য করা হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশ হত্যার পর জেলার হরিনাকন্ডু, ভাংচুর ও ভোট কেন্দ্রে জালিয়ে দেওয়ার পর মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনের রেশ ধরে কালীগঞ্জ থানায় নজীরবিহীন অবস্থা সৃষ্টি হয়। মামলা হামলার ফলে গ্রামে গ্রামের সামাজিক অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। মহেশপুর, কোটচাদপুর ও হরিণাকুন্ডুর অনেক গ্রামের মানুষ জমি, ঘরের জিনিস আর গরু ছাগল বিক্রি করে পুলিশ ও কোট সামলাচ্ছেন। মাসের পর মাস এ সব মামলার চাজসিট না দিয়ে বানিজ্য করার জন্যই জিইয়ে রাখা হচ্ছে এমন প্রশ্ন উঠছে। তদন্তের নামে কালক্ষেপন করে মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছে। এদিকে কোটচাদপুর থানায় নতুন ওসি হিসেবে ফজলুর রহমান যোগদান করেই জামায়াতের ভাইস চেয়ারম্যান মোয়াবিয়া হুসাইনকে বুধবার আটক করে নতুন করে আতংক সৃষ্টি করেছেন। মোয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা থাকলেও তিনি সব মামলায় জামিনে ছিলেন বলে জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার দুধরাজপুর গ্রামে ৫০ লাখ টাকা চাঁদার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গ্রাম ছাড়া করেছে সরকারদলীয় কর্মীরা। এ ভাবে জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিনিয়ত মারধর করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। অনেক চাঁদা দিয়ে গ্রামে বসবাস করছেন। এ সব বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতার বানিজ্যের খবর অস্বীকার করে বলা হয়েছে, তারা কেবল সরকারী আইন ও নিদের্শ পালন করছে। অন্যায় ভাবে কাউকে হয়রানী করা হচ্ছে না।