লাফার্জ’র পেটে যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি

Chhatak-Photo-Lafarjছাতক প্রতিনিধিঃ ছাতকের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার পেটে যাচ্ছে ফসলি জমির মাঠি। নিয়ম না মেনে মাটি উত্তোলন করে লাফার্জের কাছে বিক্রি করছেন ঠিকাদাররা। আর এসব কৃষি জমি ধ্বংসের অভিযোগ আনলেন উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ। সম্প্রতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবরে এ অভিযোগ দায়ের করা হলে এলাকায় হৈ-চৈ পড়ে যায়।
লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ বার-বার উঠে আসছে। শব্দ দূষণ, সবুজ পরিবেশ ধ্বংস ও কৃষি জমি থেকে মাটি সরবরাহে ভূমি দূষণসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ রয়েছে কারখানাটির বিরুদ্ধে। এবার ফসলি জমির মাটি কেনার অভিডোগ উঠেছে। স্থানীয় মাটি সংগ্রহ করতে লাফার্জের আবেদনের প্রেক্ষিতে কৃষি জমির ৬ইঞ্চি টপ সয়েল অপসারন করে পুনরায় অপসারিত টপ সয়েল জমিতে ফেলার শর্তে মাটি সংগ্রহের অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু শর্তের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত ফসলী জমি ধ্বংস করে মাটি সংগ্রহ করছে লাফার্জ। স্থানীয়ভাবে ফসলী জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করতে আকর্ষনীয় মুল্যে ঠিকাদার নিয়োগ করে লাফার্জ কর্তৃপ। জমির তি না বুঝে সাময়িক অর্থের লোভে স্থানীয় কৃষকরা ঠিকাদারদের কাছে ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে। এদিকে লাফার্জ কর্তৃপ প্লান্টের ভেতর বিশাল খোলা জায়গায় মাটি সংগ্রহ করে পাহাড়সম ডিবি তৈরি করছে। এভাবে প্রতি বছর ঠিকাদারের মাধ্যমে লাখ-লাখ মেট্রিকটন মাটি সংগ্রহ করায় নোয়ারাই ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টর ফসলী জমি ইতিমধ্যেই মাছ চাষের অনুপযোগী জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। আবাদি জমি অন্যকাজে ব্যবহার বন্ধের জন্য দেশে কার্যকর কোন আইন না থাকায় দীর্ঘদিন কৃষি জমির প্রতি মানুষের আগ্রাসন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
২০১১সালে কৃষি জমি রায় একটি নীতিমালা প্রনয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। ‘কৃষি ভূমি সুরা ও ভূমি ব্যবহার আইন নামে’ এই নীতিমালা প্রনয়ন করে আইন অমান্যকারীদের জরিমানাসহ কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়। সে ল্েয নীতিমালায় দেশের ভূমিকে ১১টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এতে ২ ও ৩ ফসলী জমিতে স্থাপনা নির্মাণে অনুমতি না দেয়া, শিল্প কারখানা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে অপোকৃত কম ভূমি ব্যবহার করে উর্ধ্বমুখি সম্প্রসারন করা ও ভূমি অধিগ্রহনে কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয় সে ল্েয নূন্যতম ভূমি অধিগ্রহনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইন প্রনয়নের পূর্বে ও পরে কৃষি জমি আগ্রাসন বন্ধে সংশ্লিষ্টরা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে দেখা যায়নি। নীতিমালা অনুযায়ী কৃষি ভূমির মারাত্মক তি সাধন করে যাচ্ছে লাফার্জ সিমেন্ট কারখানা। এদিকে স্থানীয়ভাবে মাটি সংগ্রহ করায় মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ার অভিযোগে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের নোয়ারাই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে টপ সয়েলসহ কৃষি জমির মাটি সরবরাহ করায় জমিটি সম্পূর্ন অনাবাদি হওয়া, অনাবাদি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করলে গোচারন ভূমি নষ্ট হওয়া, টিলা থেকে মাটি সরবরাহ করা হলে মাটির কাঠামো ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হওয়ার সম্ভাবনা, ুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা অর্থের লোভে মাটি বিক্রি করে ভূমিহীন হওয়ার আশংকাসহ ফসলী জমি ধ্বংস, প্রাকৃতিক ও সবুজ পরিবেশ বিনষ্ট রাসায়নিক ডাস্ট নির্গত হওয়ায় ফসল ও গাছপালা পুষ্টিহীনতা হওয়ার কারনসমূহ তুলে ধরা হয় অভিযোগে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার কমিউনিটি রিলেশন ম্যানেজার সাব্বির হোসেন এ ব্যাপারে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে ঢাকাস্থ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন।