সিলেটে শেয়ার ব্যবসার নামে প্রতারনা : ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সিডিবিএল কর্মকর্তা জেল হাজতে

শেয়ার ব্যাবসার নামে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতকারী ফারুক আহমেদ
শেয়ার ব্যাবসার নামে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতকারী ফারুক আহমেদ

সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সি.ডি.বি.এল কর্মকর্তাদের প্রাইভেট শেয়ার ব্যবসার ফলে শেয়ার বাজারে ধবস নামার পরও তারা থেমে নেই । শেয়ার বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর এবার হাতিয়ে নিয়েছে এক গ্রাহকের ৫কোটি ১১লাখ টাকা। বিপুল পরিমানের এ অর্থ আত্মসাতের দায়ে সি.ডি.বি এল কর্মকর্তা ফারুক আহমদ এখন কারাগারে। তবে থেমে নেই ফারুকের সহযোগীরা। তারা উল্টো ক্ষতিগস্থ ব্যবসায়ীকে নানা ভাবে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। এঘটনায় সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা দায়েরর পর আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি ফাস হলে শেয়ার বাজারে তোলপাড় শুরু হলেও প্রতারকরা এখন নিজেদের রক্ষায় বিভিন্ন সাস্থানে দৌরঝাপ শুরু করেছে। পুলিশ বলছে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হলে শেয়ার ব্যবসার প্রতি বিনিয়োগ কারীদের আস্থা ফিরে আসবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে নগরীর আখালিয়ার মৃত হাজী জহুরুল ইসলামের প্রত্র ব্যবসায়ি জাফর কিবরিয়া সুজন ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর জালালাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৭। -মামলায় রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারস্থ বিডিএল ভবনের সিডিবিএল কর্মকর্তা ও কানাইঘাটের ঝিদাবাড়ীর রফিক আহমদের পুত্র ফারুক আহমদ ও তার ৪ সহযোগীকে আসামী করা হয়েছে। তদন্ত শেষে গত ১৮ মার্চ পুলিশ আদালতে মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করে। অভিযোগ পত্রে ফারুক সহ ৫জনকেই অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রে বলাহয়েছে প্রধান আসামী ফারুক অন্য আসামীদের সহযোগীতায় ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। ২০১১ সালের আগষ্ট মাসের পর এই টাকা দেয়া
হয়েছিল্ শেয়র ব্যবসায়ী সুজনের কাছ তেকে শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য ফারুক এই অর্থ নিয়েছিলেন। কথা ছিল, ১১০ টাকা দরে আর এ কে সিরামিকের ২ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার, ২ শা টাকা দরে এম,জে এল বাংলাদেশ লিঃ এর ৭৫ হাজার শেয়ার, ১৬৩ টাকা দরে এম, আই সিমেন্টের ৭০ হাজার শেয়র সুজনের নামে কিনে দেবেন। এজন্যে ফারুকের কথামতো তারই সহকর্মী সাবিরুল ইসলামের ঢাকা ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখার এ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৪৫ লাখ জমা দেয়া হয় । এটাকার মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা এস বি আই বিল্ডার্স এর অনুকুলে অঞ্জীকার করে তুলে নেয় ফারুক । বাকী ২০লাখ টাকাও ফারুক তুলে নেয় । ফারুকের নামীয় এ্যকাউন্টে(শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক , কারওয়ান বাজার শাখায় ও নগদে বাকী ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দেয়া হয় । কিছু টাকা ফারুকের সহোদর মালিক আহমদ ও জামিল আহমদ সিলেটের এস আর ক্যাপিট্যাল এর এম ডি সিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে নিয়ে ফারুকের এ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয় । জমার রশিদ ফারুকের সহোদররা নিয়ে যায় । এভাবে ৫ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয় প্রতারক বেশী ফরুকের হাতে। টাকা দেয়ার পরও সুজনের নিজ বি. ও এ্যাকাউন্টে কোন শেয়র এসে যোগ না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। এরপর দফায় দফায় যোগাযোগ করেও ফারুকের কাছ থেকে শেয়ার কিংবা নগদ অর্থ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত থানার মামলা দায়ের করেন। গত ২ মার্চ সিলেট মহানগর চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে জি.আর মামলা নং ২২৪/১৩ এসে ফারুক আত্মসমর্পন করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এরপর ১১ মার্চ মহানগর দায়রা জজ আদালতে (বিবিধ মামলা ১৭৩/১৪) জামিন আবেদন করলেও প্রতারক ফারুকের আবেদন আদালত না মঞ্জুর করেন। কিন্তু মামলার অপর দু আসামী মনিক আহমদ ও জামিল আহমদ আদালত তেকে জামিন নিয়ে এসেই মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্যে হুমকি দিচ্ছে।
জানা গেছে, ফারুকের এই প্রতারনার ব্যপারে সি.ডি.বি.এলের সিইও এর নিকট ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আবেদন করা হলেও আজো এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, দূর্নীতিদমন কমিশন, অর্থ মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও কোন পদক্ষেপ না নেয়ারর ঘটনার পর দু বছর পর ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী সুজন নিরুপায় হয়েই জালালাবাদ থানার মামলাটি দায়ের করেন। এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালীন অন্য প্রতিষ্ঠানে তাকার সুযোগ না থাকার পরও ফারুক আহমদ নিজেকে এসবিআই বিল্ডার্স লিঃ নামক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিযুক্ত হন । । এর ফলে অবৈধ ও বেআইনি ভাবে অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। ধারণা করা হ”েচ্ছ সিডিবিএল এর শীর্ষ কর্মকর্তারা এর সাথে জড়িত থাকতে পারেন । এ ছাড়া ঢাকায় ফারুকের দুটি বিলাস বহুল ফ্ল্যাট রয়েছে । শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখার হিসাব ( ৪০০৭ ১২১০০০০২৯১৯)নং তদন্ত করলে কোটি কোটি টাকার লেনদেন বেরিয়ে আসবে ।
জানা গেছে, প্রাইভেট প্লেইসমেন্ট শেয়ার ব্যবাসয় জড়িত হয়ে প্রতারকচক্র ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শেয়ার বাজার থেকে কোটি কোটি টাক হাতিয়ে নেয়ার পর থেকেই মূলত শেয়ার বাজারে ধস নামতে থাকে। ২০০৩ সালের শেষ দিকে শেয়ার বাজারে ধস নামা শুরু হলে প্রতারকচক্রের প্রতিরোধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর ফলে আজো শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে লোকজন নিরাপদ মনে করেননা। ফারুক আহমদের মতো প্রতারক চক্র নিজেদের কোটিপতি বানালেও নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জালালাবাদ থানার এস.আই আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, তদন্তে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে তা ভয়ংকর। কৌশলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। ন্যায় বিচার নিশ্চিত হলে ক্ষতিগ্রস্থরা শেয়ার ব্যবসায় আবারো আগ্রহী হবেন। তিনি বলেন, ফারুক চক্রের প্রতারনার সকল প্রমানাদি তদন্তে পাওয়া গেছে।