ছাত্রলীগের ‘সুপারিশে’ প্রত্যাহার হচ্ছে এসআইইউ’র ১৪ শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ!

sylhet international universityডেস্ক রিপোর্টঃ ছাত্রলীগের ‘সুপারিশে’ ১৪ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার, হুমকি ক্যাম্পাসে উশৃঙ্খল আচরণের দায়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তাদের সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছিলো। বহিস্কৃতদের প্রায় সকলেই ছাত্রলীগের কর্মী।
শনিবার সকালে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার এসআইএউ ক্যাম্পাসে গিয়ে ১৪ শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন। এসময় উপাচার্য ড. সুশান্ত কুমার দাশ বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন।
সাময়িক বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক উদ্দিন তাজ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ীই এই সিদ্ধান্ত পুণর্বিবেচনা করা হচ্ছে। কারো সপারিশে নয়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সুপারিশ নয়, বহিস্কারাদেশ প্রত্যহারে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছ্ েএই চাপের কাছেই নতি স্বীকার করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, শনিবার সকালে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার ৮/১০টি মোটর সাইকেলযোগে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে এসআইইউ ক্যাম্পাসে যান। এসময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের ক্যাম্পাসে বাধা দেয়। এনিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদককে ভেতরে ডেকে নেন। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাশের সাথে বৈঠক করে আব্দুল আলীম তুষার। বৈঠকে ১৪ শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার এই প্রতিনিধিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে আগের পরিবেশ ফিরে আসে, বিশ্ববিদ্যালয় যাতে সুন্দরভাবে চলে এসব নিয়ে আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি।
তুষার বলেন, আমি বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারেরও অনুরোধ করেছি। উপাচার্য আমার কাছে প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন।
এসআইইউ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, সাময়িক বহিস্কারের পর ১৪ শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের শোকজের জবাব দিতে হবে। এছাড়া এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তারাও একই দিনে প্রতিবেদন দিবেন। তদন্তে কোনো ফৌজদারী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না পেলে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হতে পারে।
তারেক বলেন, শনিবার ক্যাম্পাসে তুষার এসেছিলেন। বহিস্কৃতদের কেউ কেউ হয়তো ছাত্রলীগ করে। তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। তবে কারো সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রভাবিত হবে না।
উল্লেখ্য, এরআগে এসআইইউ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিব খুন হ্ওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলো তাদের ক্যাম্পাসে কোনো রাজনীতি নেই। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে তাদের কোনো শাখা নেই। খুন হ্ওয়া হাবিব ছাত্রলীগের তুষার গ্রুপের কর্মী ছিলেন। এসব ব্যাপারে কথা বলতে এসআইইউ উপাচার্য ড. সুশান্ত কুমার দাসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এসআইইউ’র বিবিএ’র সুমন সুত্রধর, আবুল হাসনাত শুভ, মো. সাইফুল আলম রাহেল, আব্দুল কাদের জেবু, হিমেল দাশ, অভিত রায় ঝলক, মো. আলমগীর হোসেন খান, কৃষাণ বিশ্বাস, এলএলবি’র ছাত্র রুবেল মিয়া, আক্তারুজ্জামান ইমন, ইংরেজির ছাত্র জাফর আহমেদ, মুহিউদ্দিন, সিএসই’র ছাত্র রাজু পাঠান ও হাওনান আহমদ নাহিয়ানকে সাময়িক বহিস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য গঠিত কমিটিতে শিক্ষার্থীদের না রাখায় ক্ষুব্ধ হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকদের সাথের অসদাচারণ করেন। একপর্যায়ে তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথেও দুর্ব্যবহার করেন। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।