জিহাদের মোহভঙ্গ : দেশে ফিরতে চায় ২ কিশোরী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মা-বাবাকে চিরকুট লিখে জিহাদ করতে সিরিয়ায় যাওয়া অস্ট্রিয়ার দুই কিশোরী এবার দেশে ফিরতে চায়। দ্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস/আইএস) জঙ্গি বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইসলামি জিহাদ করতে সে জীবন বেছে নিয়েছিলেন তারা। পরে আইএস জঙ্গি সদস্যদের জীবনাচরণ দেখে তাদের মোহভঙ্গ হয়। এরপর তারা দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা তাদের পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন। সে সময় জিহাদের উন্মাদনায় তারা দেশ-ঘর ও আপনজন ছেড়েছিলেন। এরা হলেন- সামরা কেসনোভিক (১৭) ও সাবিনা সেলিমোভিক (১৫)।
এ বছরের এপ্রিল মাসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে চিরকুটে তারা লিখেছিলেন, ‘আমাদের খোঁজ করবেন না’। আমরা আল্লাহর সেবা করবো। আমরা তার জন্য জীবন উৎসর্গ করবো।
এই দুই কিশোরী শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসনিয়া থেকে অস্ট্রিয়া অভিবাসী হয়। এরপর তারা স্কুলে পড়ার সময় ইসলাম নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতো। এই চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তথাকথিত জিহাদ করতে আইএস জঙ্গি বাহিনীতে যোগ দেয় তারা।
সামরা ও সাবিনা এরপর সিরিয়ায় গিয়ে আইএস জঙ্গি বাহিনীর দু্ই সদস্যকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে তারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এদিকে, স্থানীয় পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, এই দুই কিশোরীর সামাজিক সাইটের অ্যাকাউন্ট আইএস জঙ্গিরা দখল করে অস্ট্রিয়ার মেয়েদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিরিয়ায় আসার জন্য পোস্ট দিচ্ছে। অপরদিকে, সামরা ও সাবিনা গোপনে অস্ট্রিয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এ সময় তারা জানিয়েছে, আইএস জঙ্গিদের জীবনাচরণে মোহভঙ্গ হয়েছে। সে কারণে তারা দেশে ফিরে আসতে চায়। তারা তাদের পরিবারকে জানিয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়, এবার তারা দেশে ফিরে আসতে চায়। তবে তারা এটাও সতর্ক করে জানিয়েছে, চাইলেও তাদের পক্ষে দেশে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। কারণ, এই নতুন জীবন ছেড়ে আসাটা তাদের জন্য বিপজ্জনক।
এরপর তাদের স্বজনেরা সামরা ও সাবিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত তারা কোনো উপায় বের করতে পারেননি। তবে তারা আশাবাদী, কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগের উপায় বের করতে পারবেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এই দুই কিশোরী আইএস জঙ্গি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ার রাকা শহরে অবস্থান করছে। অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র কার্ল-হেইনজ বলেছেন, এই দুই কিশোরীর পক্ষে দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, মূলত যারা একবার দেশত্যাগ করে, তাদের পক্ষে দেশে ফেরার আর সুযোগ থাকে না। এদিকে, এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুই কিশোরীর একজন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই কিশোরী সিরিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে কীভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, তা জানা যায়নি।
তবে জানা গেছে, তারা সিরিয়ায় যাওয়ার আগে জঙ্গিদের সঙ্গে ভিয়েনার একটি মসজিদে দেখা করে। এই দুই কিশোরীর দেখাদেখি আরো দুই কিশোরী জিহাদে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়ার আগমুহূর্তে পুলিশ তা ব্যর্থ করে দেয়। এদের একজনের বয়স ১৬ ও আরেকজনের বয়স ১৪। তাদের মা-বাবা ইরাক থেকে অস্ট্রিয়া এসেছেন। পুলিশ এখন জানার চেষ্টা করছে, এই দুই কিশোরী কীভাবে জঙ্গিপনায় উদ্বুদ্ধ হলো, কাদের সঙ্গে কোথায় বসে তারা পরিকল্পনা করেছে এবং তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যেতে চেয়েছিল। এভাবে আগের দুই কিশোরীও একই রুট ব্যবহার করে সিরিয়ায় গিয়েছিল। আটকদের আরেক কিশোরী বন্ধুর মা তিনজন একই সঙ্গে ভ্রমণে বের হন। পরে কিশোরীদের লাগেজের ধরণ দেখে তিনি সন্দেহ করেন, এরা সিরিয়ায় যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, একশ ৩০ জন অস্ট্রিয় নাগরিক জিহাদে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছেন। যারা জিহাদ করতে দেশ ছেড়েছেন, তাদের অর্ধেকই ককেশীয় অঞ্চল থেকে এসেছেন ও তাদের অস্ট্রিয়ায় থাকার স্থায়ী অনুমতি রয়েছে।