পরীক্ষামূলকভাবে কুশিঘাট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু
সুরমা টাইমসঃ অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলো সিলেট নগরবাসীর বহু প্রতীক্ষিত কুশিঘাটের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সুইচ টিপে প্ল্যান্টের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে এই প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন ৫০ লক্ষ লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ঈদের আগেই আরও ৫০ লক্ষ লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর আশা করছে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে নিয়োজিত জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর পর এক প্রতিক্রিয়ায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পানির সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এটি। ঈদের আগেই এখান থেকে ১ কোটি লিটার পানি নগরীতে সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে প্ল্যান্টের অপর অংশের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হলে প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লক্ষ লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। এতে করে নগরীর প্রায় ৬০ ভাগ চাহিদা পূরণ করা যাবে।’
‘স্বল্পমেয়াদী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ৭টি প্রোডাকশন টিউবওয়েল (উৎপাদক নলকুপ) স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটির কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। এই ৭টি এই টিউবওয়েল প্রোডাকশন টিউবওয়েল তাড়াতাড়ি চালু হলে পানির সংকট অনেকটাই সামাল দেওয়া যাবে। মেয়র বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীও পানি সংকট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী পানি সংকট নিরসনের লক্ষ্যে চলমান প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন।’
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরেকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরীর জন্য ৩২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরী করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র জানান, ইতোমধ্যে এই প্রকল্পটি প্ল্যানিং কমিশনে অনুমোদনও হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আরেকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা হলে আরও প্রায় ৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা যাবে।
পাবলিক হেলথ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হানিফ জানান, এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ৪/৫ দিন চলবে। পাইপের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহের কারণে পাইপের মধ্যকার ময়লা পরিস্কার হওয়ার পর পানির নমুনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষাশেষে নগরীজুড়ে পানি সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে উত্তর সুরমা জুড়ে ৮ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ সুরমায় ১ কিলোমিটার ডাকটাইল পাইপ লাগানো সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানান, ‘এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ একপর্যায়ে থমকে গিয়েছিল। মাননীয় মেয়র মহোদয়ের কার্যকরের পদক্ষেপের কারণে মাস চারেক আগে থেকে জোরেশোরে কার্যক্রম শুরু হয়ে এখন প্রায় শেষপর্যায়ে চলে এসেছে। ইতোমধ্যে এই কাজের জন্য পাইপও নগরীতে লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে এবং নগরীজুড়ে ১৭.২ কি.মি. (দক্ষিণ সুরমায় ৩ কি.মি.) ডাকটাইল পাইপ বসানো সম্পন্ন করা হবে। তবে ইতোমধ্যে যেসব পাইপ লাগানো হয়েছে তাতে এমসি কলেজের ওভারহেড ট্যাংকি এবং মাছিমপুরের সুইচ বাল্বের মাধ্যমে সপ্তাহখানের পরই পানি সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালুকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সম্মানিত কাউন্সিলরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছয়ফুল আমিন বাকের, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জল, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিরর দিনার খান হাসু, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন। উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন। উল্লেখ্য, প্রায় ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ চলছে। ২০০৬ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে।