নগর-জঙ্গলে মৌচাক
কাইয়ুম উল্লাস :: চারপাশে গাছে -গাছে পাখির কিচিরমিচির। একটি কেব্ল তার বেয়ে জাম গাছের ডালে ওঠেছে কাঠবিড়ালি। নিস্তব্ধ এই বনে নানা প্রজাতির গাছ। সবচেয়ে বেশিই বোধহয় আমগাছ। এখানে একটি আমগাছের ডালে বিরাট মৌচাক। ডালের মৌচাকে সারাক্ষণ মৌমাছি ভোঁ ভোঁ করে উড়াউড়ি করছে। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ভালো আমি ছিলাম এবং ভালোই আমি আছি/হৃদয়পদ্মে মধু পেল মনের মৌমাছি।’ সত্যি, এরকম বন যান্ত্রিক মনে মধু ছড়ায়।
সিলেট নগরের যান্ত্রিকতার কোলাহলে তালতলা টেলিকম ভবনের পেছনের জঙ্গলে একটি আমগাছে লাখো মৌমাছি। প্রাকৃতিক নিয়মেই এরা বাসা বেঁধেছে। টেলিকম ভবনের স্টাফ কোয়ার্টারের সংরক্ষিত বন হওয়ায় মৌচাকটি নির্বিঘেœ দিন দিন বড় হচ্ছে। এই বনটি গুন্গুন্ শব্দে যেন নির্জনতায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
ঘুরে দেখা গেল, সিলেট টেলিকম ভবনের এই বনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। চারদিকে দেয়ালবেষ্টিত বনে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠেছে গাছগাছালি। বনের বাইরে স্টাফ কোয়ার্টারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে থাকেন। কিন্তু কারোরই বনের দিকে যাওয়ার দরকার হয় না। এই বনের আমগাছে আম ধরলে তা বাদুড় খায়। জাম খায় পাখি। কাঠবিড়ালি সারাক্ষণ গাছের ডালে-ডালে খাবারের সন্ধানেই ঘুরে। কেউ তাকে বিরক্ত করছে না। তাই এখানে কাঠবিড়ালির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রাণী-উদ্ভিদের একটি আবাস গড়ে ওঠছে দিন দিন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার মৌমাছির একটি বিশাল চাক জমেছে আমের ডালে। মৌচাকটি এতই ভারী যে, এই বুঝি ছিঁড়ে মাটিতে পড়বে।
পাশের একটি হোটেলের কর্মচারী রুস্তম আলী জানালেন, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে আছেন। একটা সময় টেলিকম ভবনের পেছনের জঙ্গলে তেমন কোনো গাছ ছিল না। ছোট ছোট চারাগাছ আপনা-আপনিই বেড়ে ওঠেছে। এখন জঙ্গলে নানা রকমের গাছ। পশু-পাখিরাও ভিড় জমাচ্ছে। আগে তিনি কখনোই এই বনে মৌচাক দেখেননি। জঙ্গলে আগে কখনো কাঠবিড়ালিও ছিল না। এই দুবছর ধরে কাঠবিড়ালি দেখছেন। গাছগাছালি ও পশুপাখি জঙ্গলে এবার প্রাণের সঞ্চার করেছে। তৈরি হয়েছে সুন্দর আবহ ।
জঙ্গলে গিয়ে দেখা গেল, চারপাশে নবঋতুর কল্লোল। ,আর পাখিদের গান। মাতোয়ারা বাতাসে মৌ-মৌ গন্ধ। হাজারো মৌমাছি আমগাছে চাক কামড়ে আছে । পাশেই উড়ছে দলছাড়া আরও শত মৌমাছি। হলদে রোদে খেলা করছে তারা।
টেলিকম ভবনের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই জঙ্গলের চারপাশেই দেয়াল। কেউ ওখানে যাচ্ছে না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এখানে এক চিলতে বন তৈরি হয়েছে। বনটি এখন পশুপাখির জন্য নিরাপদ অভয়আশ্রম। এবারই প্রথম মৌমাছির এত বড় মৌচাক দেখে তারাও বিস্মিত!
সিলেট টেলিকম ভবনের সহকারী প্রকৌশলী এজাজুল হক বলেন, এখানে কোনো বন ছিল না। জায়গাটি পরিত্যক্ত। চারপাশে দেয়াল। সংরক্ষিত থাকায় কেউ এখানে ঢুকতে পারছে না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই বন হয়েছে। এখন এই এক চিলতে বনের গাছে মৌচাক বাসা বেঁধেছে। কাঁঠবিড়ালি ঘুরছে। এ যেন নিরাপদ বন। মৌচাকটি অনেক বিরাট। এটি প্রাকৃতিক নিয়মেই ভাঙবে। আমরা কেউ ভাঙব না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, নগরে অসংখ্য পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে বনায়ন গড়ে তোলা উচিত। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ফাঁকা স্থানেও বনায়ন হতে পারে। এতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশে নির্মলতা আসবে।