‘তাল-বেতাল’ পড়শীকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দিলেন উত্তেজিত জনতা!
বিনোদন ডেস্কঃ মারমুখী ঘটনার মুখোমুখী হলেন জনপ্রিয় সংগীত তারকা পড়শী। উতাতেজিত দর্শক সরাসরি স্টেজ থেকে নামিয়ে দিলেন এই শিল্পীকে। জানা যায়, ২২ ফ্রেব্রুয়ারি রাতে নাটোরের বড়াইগ্রামে নব নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলারদের আমন্ত্রণে সেখানকার পৌরসভা মাঠে এক কনসার্টে গাইতে গিয়েছিলেন ক্ষুদে গানরাজ খ্যাত এই কণ্ঠশিল্পী। কিন্তু সেখানে তার ব্যবহার ও গায়কীতে অসন্তুষ্ঠ হয়ে তাকে স্টেজ থেকে নামতে বাধ্য করেছেন স্থানীয় শ্রোতারা।
আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, কনসার্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৭টায়। পড়শী বিকেল ৪টায় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাত ৮টায় স্টেজে ওঠার কথা থাকলেও তিনি স্টেজে ওঠেন রাত ১০টার পর। তাকে স্টেজে দেখেই শ্রোতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কোনো রকমে গান শুরু করলেও দর্শক মজাতে পারেননি।
এক প্রতক্ষদর্শী অভিযোগ করে জানান, ‘পড়শী তার ‘তোমার চোখে আকাশ আমার’, ‘একা একা লাগে’, ‘খুঁজে খুঁজে’সহ পাঁচটি গান গান। কিন্তু শুরু থেকেই তার অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত শ্রোতারা তাকে নেমে যেতে বলেন। সেইসঙ্গে পড়শীর তাল-সুরের কোনোই মিল ছিল না গানে। ফলে দর্শক-শ্রোতারা ক্ষেপে যায়। পড়শীও তখন উল্টো ক্ষেপে যান। তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন- ‘আমি কী নর্তকী না বাঈজি যে নেচে নেচে আপনাদের মন ভরাব। আমি গান করতে এসেছি। শুনতে ভালো না লাগলে চলে যান’! তখন উপস্থিতিরা ভীষণ ক্ষেপে যান। একপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহয়তায় কোনোরকমে পড়শী স্টেজ ছাড়তে বাধ্য হন।’
তিনি আরো বলেন, ‘পড়শী নেমে গেলেও পরিস্থিতি ছিলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র বারেক সরদার উত্তেজিত দর্শকদের শান্ত করতে না পেরে নিজেই স্থান ত্যাগ করেন। পরে উপজেলা নির্বাহি অফিসার এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তারা দর্শক-শ্রোতাদের কথা দিতে বাধ্য হন- বড়াইগ্রামে আর কখনো পড়শীকে গান গাইতে আনা হবে না।’
জানা গেছে, পড়শীকে ওই কনসার্টের জন্য দেড় লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ করা হয়। সেই মতেই তিনি বিকেলে এসে পৌঁছান। আয়োজকরা তখন পড়শীকে এক লাখ টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা কনসার্ট শেষে দিবেন বলে জানান। কিন্তু পড়শী তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি গান গাওয়ার আগেই পুরো টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলে প্রায় তিন-চার ঘণ্টা। অন্যদিকে পড়শীর অপেক্ষা করতে করতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন উপস্থিত শ্রোতা-দর্শক। অবশেষে মেয়র বারেক সরদার বুঝিয়ে পড়শীকে গান করতে পাঠান। কিন্তু পড়শী মঞ্চে উঠে দায়সারাভাবে গান করতে থাকেন। তার গানে তাল-সুরের কোনো ঠিক ছিলো না। এতে ক্ষেপে যান বিরক্ত শ্রোতারা। অনেকে শিল্পীকে গালাগালিও করেন। তখন পড়শীও মঞ্চে থেকে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কটুক্তি করেন। ফলে পুরো কনসার্টে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। একপর্যায়ে মেয়র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে পড়শীকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আর স্থানীয় শিল্পীরা গান গেয়ে কনসার্ট শেষ করেন।’
এ প্রসঙ্গে মেয়র বারেক সরদার জানান, ‘গতকাল রাতে যা ঘটে গেল সেটি সত্যি দুঃখজনক। পড়শীকে আমি একজন ভদ্র তারকা বলেই জানতাম। কিন্তু কাল সেই ধারনাটা ভেঙ্গে গেল। তারমধ্যে শিল্পীসুলভ কোনো আচরণই পায়নি বড়াইগ্রামের মানুষ। তার গান ও ব্যবহারে এতটাই অসন্তুষ্ঠ ছিলো সবাই আমি নির্বাচিত মেয়রও তাদেরকে শান্ত করতে পারিনি। সে টাকা নিয়ে যেসব কাণ্ড করেছে সেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।’
এদিকে এ ঘটনার পর বিস্তারিত জানার জন্য পড়শীর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। একইসাথে পড়শীর ফেরিভায়েড ফেসবুক, ফ্যান পেজ সবকিছু ডি-অ্যাক্টিভ করে রাখা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছিল সোমবার রাতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্যই এসব বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সংগীতাঙ্গনে।