নগরে বৈশাখি কেনাকাটা জমজমাট

1কাইয়ুম উল্লাস :: দিন বদলেছে। আগের মতো যখন-তখন মার্কেটে কেউ আসে না। এখন কেনাকাটারও একটা বাঁধা সময় আছে। সময়টা সন্ধ্যা। সারা দিন ব্যস্ততা থাকায় ক্রেতারা স্বজন ও বন্ধুদের নিয়ে মার্কেটগুলোতে ভিড় জমান সন্ধ্যায়। ক্রেতাদের এই সান্ধ্য আগমনে কেনাকাটা চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত। আর কদিন পরেই বাঙালির পয়লা বৈশাখ। সিলেট নগরের মার্কেট ও ফুটপাতগুলো এখন বৈশাখি কেনাকাটায় মুখরিত।
একসময় ঘরে ঘরে টেলিভিশন ছিল না। সিলেট বেতারে ঘন ঘন প্রচারিত হতো একটি মার্কেটের নাম। এটি শুকরিয়া মার্কেট। ধনী থেকে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী ক্রেতা প্রিয় মার্কেট এটি। সেই থেকে এখনো শুকরিয়া মার্কেটে সন্ধ্যা হলেই নারী ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা দেয়। চলছে বৈশাখি কেনাকাটা। তাই এখন মার্কেটটিতে এখন যেন আরও বেশিই ভিড় লেগে আছে। কলেজপড়–য়া তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীরা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। তবে, তরুণীরা একটু বেশিই ভিড় জমান। একসঙ্গে দল বেঁধে তারা কেনাকাটা করতে আসেন। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত আফরোজ বলেন, নববর্ষের নতুন পোশাক কিনতে এসেছি। তাছাড়াও এখানে নারীদের দরকারি সব পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিস পাওয়া যায়।
একটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী তিন বান্ধবী সুমি, নওরিন ও সাইদা সুলতানা এসেছে শুকরিয়া মার্কেটে। এখনো তারা কোনো কেনাকাটা করেনি। বিকেলে এরকম প্রায়ই ঘুরতে আসে। বৈশাখির আনরেডি থ্রি-পিস দেখে রাখছে; দুদিন পরে কিনবে।
মার্কেটের নিচতলার তামিম ফেব্রিকসের বিক্রেতা নিবিড় আহমেদ জানান, তাদের দোকানে বৈশাখের আনরেডি থ্রি পিস খুব বেশি চলছে। আর দামও হাতের নাগালে, ৭ শ টাকা থেকে ২৫ শ টাকা। এবার একটাই রঙ সাদা-লাল বেশি চলছে। বিকিকিনিও গত বছরের তুলনায় এবার ভালো।
গোল্ড প্লেইট নামের একটা চুড়ির দোকান ঘিরে তরুণীদের বেষ্টনী। নানা রকমের চুড়ি কিনছেন তারা। তবে, কাচের চুড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানি। শুকরিয়ার বাইরে আবার তরুণদের ভিড়। এখানে ঘড়ি ও রোদ চশমা কিনছেন তরুণরা। ওয়াচ কর্নারের মালিক লাহিন খান জানান, রেভনের চশমা বেশি বিক্রি হচ্ছে। এই ব্র্যান্ডের চশমার দাম ১৫০ থেকে ৫ শ টাকা। এছাড়াও এবার ফাস্টেক ও আরমানি ঘড়ি কিনছে তরুণরা।
হাসান মার্কেট। একটি ঐতিহ্যবাহী মার্কেট। একসময় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পোশাকের চাহিদা মেটাত এই মার্কেটটি। তবে, বৈশাখির কেনাকাটা এখানে জমে ওঠেনি। মার্কেটে তেমন ক্রেতা সমাগম নেই। তবে, এই মার্কেটে শিশুদের ধুতিড্রেস বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। স্বপন ঘোষ বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছেন হাসান মার্কেটে। তারা নিজে কোনো কিছু কিনবেন না। কিন্ত দুই বাচ্চাকে তাদের পছন্দমতো ধ্যুতি ড্রেস কিনে দিচ্ছেন। এটিই তাদের বৈশাখের আনন্দ বলে জানালেন। সার্বিয়া ক্লোথ স্টোরের বিক্রেতা শামিম জানান, ১৫০ থেকে ৩৮০ টাকা দামে ধুতিড্রেস খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে। এবার বৈশাখে হাসান মার্কেটে শাড়ি বিক্রি না হলেও লুঙ্গি বিক্রি বেড়েছে। শাড়ি এখন সবাই অন্য মার্কেট থেকে কিনে থাকলেও লুঙ্গির জন্য এই মার্কেটটিই বেছে নিচ্ছেন। জাহিদ স্টোরের সুদেব রায় জানালেন, এখানে ৩৩০ থেকে ৯৮৫ টাকা দামের লুঙ্গি বেচাকেনা খুব ভালো।
নগরীর মির্জাজাঙ্গাল রোডে শাড়ি ও থ্রি পিসের ফ্যাশন হাউস ‘শী’। প্রতিষ্ঠানটির কোঅর্ডিনেটর রাজু আহমদ জানান,  বৈশাখ উপলক্ষ্যে তরুণীদের থ্রি-পিস বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখানে ১৮৫০ থেকে ৩ হাজার ৬ শ টাকা দামের থ্রি-পিস আছে। এছাড়া লাল-সাদা শাড়ি ১২৫০ থেকে ৬ হাজার ৮ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাকলি শপিং সেন্টারে হিপহপ জেন্টসে তরুণরা জিন্স কেনায় ঝুঁকেছেন। সঙ্গে টি-শার্টও। বিক্রেতা রাজিজ বললেন, হিপহপে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দামের জিন্স বেশি কেনাবেচা হচ্ছে। তরুণরা সুপার ড্রাই ব্রান্ডের ৪৫০ টাকা দামের টি-শার্টও আগ্রহ নিয়েই কিনছেন। এই শপিংমলে রিভেলে এক্সপোর্টের জিন্স কেনায় তরুণদের ভিড় দেখা গেছে।
ব্লু-ওয়াটার শপিংমলের হলি স্টোরের মালিক রাহেল আহমদ জানালেন, তার দোকান থেকে তরুণরা জিন্স অ্যালকট বেশি কিনছেন। এখানে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা দামের জিন্স প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে দেদার।
এবার বৈশাখি উপলক্ষ্যে নগরীর বিভিন্ন নিজস্ব ব্রান্ডের শো-রুমগুলোতেও বেচাকেনা হচ্ছে ভালো। দেশি, বেল,তুলনা,ক্যালকাটা ইত্যাদি ফ্যাশন হাউসগুলোর নিজস্ব ব্র্যান্ডের ক্রেতারাও নির্দিষ্ট। তারা যে-কোনো উৎসবেই এসব শো-রুম থেকে পোশাক কেনেন। নগরীর তাঁতিপাড়ারস্থ ক্যালকাটা ফ্যাশনের মালিক আবদুল মনাফ জানান, তাঁর দোকানে গোল ও কলার গলার টি-শার্ট মূল্যহ্রাসে (২ শ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। এতে তরুণরা দল বেঁধে কিনে নিচ্ছেন। তার দোকানের সব টি-শার্ট শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি আরও একটি চালান অর্ডার করেছেন।
সিলেট নগরীতে বারো মাসই টুকটাক শপিংমলে ভিড় থাকে। তবে, এবার বাঙালির বর্ষবরণ উপলক্ষে শিশু ও তরুণদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শপিংমলে ক্রেতাসমাগম দেখে মনে হয়, এ যেন আরেক ঈদ এসেছে। ঈদ না হলেও পয়লা বৈশাখ দিন দিন প্রাণের উৎসবে পরিণত হচ্ছে। তাই শপিংমলের বিক্রেতারাও বৈশাখকেও বিক্রিবাট্টার আরেক উপলক্ষ্য হিসেবেই হিসেবের খাতায় তুলে নিয়েছেন।