পান্তা-ইলিশের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের কী সম্পর্ক?

9210_x3ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের জন্য চড়া দামে ইলিশ কেনার প্রতিযোগিতায় শামিল হওয়া কতটা সমীচীন তা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশে।
এই প্রথম এভাবে ইলিশ কেনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রচারণায় নেমেছেন বাংলাদেশের একদল সংস্কৃতি কর্মী। তারা বলছেন, বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের ঐতিহ্যের সঙ্গে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে এখন সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য পণ্য হয়ে উঠেছে ইলিশ। পহেলা বৈশাখের আগে অনেকেই একজোড়া ইলিশ মাছ কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। আর মাছ বিক্রেতারাও এর সুযোগ নিচ্ছে পুরোদমে। ঢাকার হাতিরপুল বাজারের এক বিক্রেতা দাবি করলেন পৃষ্ঠা ৯ কলাম ১
, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দামে তিনি ৪টি ইলিশ বিক্রি করেছেন। এগুলোর ক্রেতা কারা তা তিনি বলতে চাননি। এছাড়া ৫শ’ থেকে তিন/চার হাজারে মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। দাম বেড়ে যাবে- এমন আশঙ্কায় অনেকে অবশ্য আগে-ভাগেই মাছ কিনে রেখে দিয়েছেন ফ্রিজে।
ধানমন্ডির বাসিন্দা শাহনাজ পারভীনের কাছে পহেলা বৈশাখে ইলিশ একেবারে অপরিহার্য।
“গরমের কারণে পান্তা খেলে অনেকে মনে করে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। আমারও ওই রকমই মনে হয়। তাছাড়া, আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, তাই পান্তার সঙ্গে নববর্ষে ইলিশই পছন্দ করি”।
কিন্তু নববর্ষে ইলিশ মাছ খাওয়া কতটা জরুরি? আর বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে তার সম্পর্কই বা কতটা? এমনই প্রশ্ন এখন তুলছেন অনেকেই।
ইলিশের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় পহেলা বৈশাখে ইলিশ বর্জন করে মাছ বাঁচানোর আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বেশ ভালোভাবেই চলছে এমন প্রচারণা।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এই প্রচারে শামিল হয়েছেন ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় একজন শিল্পী মাকসুদুল হক। তিনি মনে করেন, গ্রাম বাংলায় পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপনের যে ঐতিহ্য তার সঙ্গে ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই।
‘বৈশাখের সঙ্গে ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। গ্রামবাংলায় গিয়ে দেখবেন সেখানে এখন ইলিশ নেই। তাদের খাওয়ার সামর্থ্যও নেই। আর আমরা মাছও খাচ্ছি, ডিমও খাচ্ছি। ভবিষ্যতের ইলিশগুলোকে শেষ করে দিচ্ছি।’
বাংলার ঐতিহ্য নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। কিন্তু ইলিশ খাওয়ার সঙ্গে বাংলা নববর্ষের কি আদৌ কোনো যোগাযোগ আছে? জানতে চাইলে মিস্টার খান বলেন, বাঙালির নববর্ষ উদ্‌যাপনের চিরায়ত সংস্কৃতির সঙ্গে ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই।
‘বৈশাখে যখন খরার মাস যখন কোনো ফসল হতো না তখন কৃষকদের হাতে পয়সাও থাকতো না। সুতরাং তাদের পক্ষে ইলিশ কিনে খাওয়া সম্ভব হতো না। সুতরাং এটা মোটেও সত্যি নয় যে, কৃষকরা নববর্ষ উদ্‌যাপনে পান্তা ইলিশ খেয়ে বছর শুরু করতো। গ্রামবাংলায় নববর্ষের উৎসবই ছিল খুব ছোট আকারে। কৃষাণী আগের রাতে একটি নতুন ঘটে কাঁচা আমের ডাল ভিজিয়ে রাখতো, চাল ভিজিয়ে রাখতো। সকালে কৃষক সেই চাল পানি খেত, এবং শরীরে কৃষাণী পানিটা ছিটিয়ে দিতো। তারপর সে হালচাষ করতে যেত। দুপুরবেলায় পান্তা খেতে পারতো কাঁচা মরিচ, পিয়াজ দিয়ে। কখনও কখনও একটু শুঁটকি, একটু বেগুন ভর্তা ও একটু আলু ভর্তা দিয়ে খেত’।(মানবজমিন)