এদেশে সানী লিওনের আগমন সুস্থ রুচির জন্য পীড়াদায়ক : আখতার হোসাইন জাহেদ

jahedগত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে একটি পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে ভারতের বিখ্যাত পর্ণোস্টার সানীলিওন নাকি আগামী মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে একটি কনসার্টে আসছে। ঢাকার বসুন্ধরা সিটির কনভেনশন হলে আয়োজিত এ কনসার্টে সে নৃত্য পরিবেশন করবে। তার নৃত্য উপভোগ করতে সর্বনিম্ন টিকিটের মূল্যও নাকি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। খবরটি যখন দেশের সামাজিক নেটওয়ার্ক ও গণমাধ্যমগুলোতে ফলাও হয়েছে তখন থেকেই একটি প্রতিবাদী হৈচৈ শুরু হয়েছে গোটা দেশের সুশিল সমাজে। সবার একি কথা সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের এদেশে কোনো নর্তকীকে এসে বেলেল্লাপনা-বেহায়াপনা করতে দেয়া হবে না।

সানীলিওন কে? অনেকে জানেন আবার অনেকের মনে এই কৌতুহলী প্রশ্ন। সনীলিওন হচ্ছে বিশ্বের পরিচিত একজন নায়িকা ও পর্ণোস্টার। সে তার পুরো শরীর প্রদর্শন করে পর্ণোগ্রাফি নির্মাণ করে। অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় তার চূড়ান্ত পর্যায়ের খোঁজ মিলে সানীলিওনের কাছে। সানীলিওন পশ্চিমা বিশ্বের সকল অশ্লীল সংস্কৃতি ধারণ করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের এ উপমহাদেশে। কাম ও প্রভৃত্তিপরায়নতায় নারকীয় গহ্বরে নিমজ্জিত পাশ্চাত্যের স্বল্প পোষাক পরিহিতা সানীলিওন অবাধ যৌনতার উন্মত্ত স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে পশ্চিমা পর্নোগ্রাফি সংস্কৃতি ধারণ চর্চা ও অনুশীলনে অভ্যস্ত। সে অশ্লীল নৃত্য ও দেহবল্লী প্রদর্শন করে মুক্ত জীবনের নামে পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করতে চায়। যৌন ভাবোদ্দীপক অপতৎপরতা ও নগ্ন বীভৎসতার প্রতীক এই সানীলিওন যদি বাংলাদেশে আসে তা হলে তা হবে আমাদের মতো ইসলামপ্রিয় রক্ষণশীল দেশের জাতীয় আদর্শ, সমাজ-সংস্কৃতি ও ইসলামী মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সুস্থ রুচির জন্য পীড়াদায়ক।

এমনিতেই আমাদের দেশ আজ অসামাজিকতার অবয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে। নগ্ন অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, পর্ণো ও রম্য পত্র-পত্রিকার সয়লাব, তরুণ-তরুণীদের অবাধ চলাফেরা অন্যদিকে মাদক সেবন ইত্যাদি আমাদের সমাজে বিস্তার লাভ করায় একশ্রেণীর উচ্ছৃঙ্খল মানুষের কুপ্রবৃত্তি জেগে ওঠার ফলে ইভটিজিং, নারী ধর্ষন, খুন, অপহরণ, ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংবাদপত্র খুললেই প্রতিনিয়ত প্রথমেই বড় হরফে চোখে পড়ে কোননা কোন ধর্ষন, খুন, অপহরণ ও এসিড নিক্ষেপের মতো গা শিওরে ওঠা আরোও অনেক ঘটনা। সম্প্রতি বিবিসির দেয়া তথ্য মতে ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৮০টি শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে।

পরিস্থিতি এতটা ভায়বহ হওয়া সত্বেও আমাদের দেশে আজ বিকৃত চরিত্রের সানীলিওনকে এনে যৌন উদ্দীপক অনুষ্ঠান করার আয়োজন চলছে। এটা স্পষ্ট বাংলাদেশকে একটি অসামাজিক অশ্লীল দেশ হিসেবে পরিচিত করার জন্যই এধরণের অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন। যাতে করে সানীলিওনের মতো একজন পর্ণো তারকাকে এনে এদেশের জনমনে, তরুণ-তরুনীদেও মগজে-মননে, যৌনতার বিষ ঢুকিয়ে দেয়া যায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। আর সেখানেই সানীলিওনের চরণভূমি, সেখানকার খবর হচ্ছে সেখানে প্রতি ২২ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়। আর সেটা তাদের সানীলিওনদের বদৌলতেই হচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে আমাদের এদেশকেও কি ভারতের মত একটি ধর্ষনের দেশ বানানোর কোন পায়তারা চলছে। যদি কোন মহলের এরকম কোন ভ্রান্ত চিন্তা থাকে তাহলে তাদের জানা থাকা উচিত এদেশ মুসলমানদের দেশ, এখানকার মাটি অসংখ্য ওলী-আউলিয়দের পদধুলিতে ধন্য। এ মাটির প্রতিটা কনায় কনায় এখনও ইসলামের গন্ধ পাওয়া যায়। এখানে তোমাদের কোন ষড়যন্ত্রের বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে দেয়া হবে না।

সবশেষে বলতে চাই, সারাবিশ্ব যখন পর্ণোগ্রাফির ক্ষতি থেকে বাঁচতে ব্যস্ত। একে নিন্দা জানাচ্ছে, বিভিন্ন দেশে পর্ণোগ্রাফি নিষিদ্ধের জন্য আইন হচ্ছে, সে সময় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে পর্ণোস্টার এনে যৌনতার পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্টের জন্যে একাট বড় ষড়যন্ত্র। এবং যুব সমাজকে পর্ণো তারকা সানীলিওনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদেরকে যৌনতার দিকে ভাসিয়ে দিয়ে তাদেরকে চরিত্র বিনাষী করতেও এটি একটি দূরভীসন্ধি। আমাদের উচিত, বিশেষ করে সকল মুসলমানদের। যার যার অবস্থান থেকে ঈমানী চেতনায় উদ্বোদ্ধ হয়ে একি আওয়াজ তোলা এদেশে কোন নর্তকীর প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। অন্যদিকে জাতির এ নৈতিক অধঃপতন ঠেকাতে আমাদের সরকার ও প্রশাসনের উচিত এরকম অনুষ্ঠান বন্ধ করে পর্ণোগ্রাফি নিষিদ্ধের আইন প্রণয়ন করা। যাতে করে দেশ, সমাজ, জাতি এর কুফল থেকে বাঁচতে পারে।