পুত্রের লাশের পাশে নির্বাক মা : পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত নাজিম

(শেষ বিদায়ে পুত্র নাজিমের লাশের পাশে নির্বাক অসুস্থ মা তয়রুন নেছা)
(শেষ বিদায়ে পুত্র নাজিমের লাশের পাশে নির্বাক অসুস্থ মা তয়রুন নেছা)

ডেস্ক রিপোর্টঃ বুধবার রাতে খুন হওয়া জগন্নাত বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিম উদ্দিনের মরদেহ গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপারা ইউনিয়নের টুকা বরাউট গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নাজিমের চাচাতো ভাই ইংল্যান্ড প্রবাসী বদরুল ইসলাম সূত্রাপুর থানা থেকে লাশ গ্রহণ করেন। লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্স করে নাজিমের মরদেহ সকালে বাড়ি আসার পর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সকাল ১১টায় নিজ গ্রাম মাটিঝুরার টুকা বরাউট জামে মসজিদে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
অসুস্থ মা তয়রুন নেছা (৭৫) নাজিমকে শেষ দেখার সময় নির্বাক ছিলেন। পলিতিনে মোড়ানো মুখে হাত বুলিয়ে শুধু উপর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। স্বজনরা পুত্র শোকে পাথর তয়রুন নেছাকে ধরাধরি করে নিজ কক্ষে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন।
নাজিমের আদরের ছোট বোন নাসিমা বেগম বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। ভাইয়ের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি নাসিমা। বড়বোন পারুলের বুকে মুখ রেখে নাসিমা বলেন, ভাই ঢাকা থেকে মৃত আসবে জানলে আমি যাইতে দিতাম না। আমার ভাইয়ের খুব শখ ছিলো ব্যারিস্টার হওয়ার। আজ সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেলো।’
বুধবার রাতে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া নাজিম উদ্দিন (২৬) ছোটবেলা থেকেই ছিলেন লেখাপড়ায় মনোযোগী। মেধাবী হওয়ায় পরিবারের সবার মায়া মমতায় বড় হয়েছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় পেয়েছিলেন বৃত্তিও।
নাজিমকে নিয়ে মা ও ভাই-বোনদের অনেক স্বপ্ন ছিল। শান্ত স্বভাবের এ ছেলেটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর পর যখন আইনশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরিবারের সবাই উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে তাকে উৎসাহ যোগান। স্বপ্ন দেখেন নাজিম একদিন বড় আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাড়াবে।
নাজিম উদ্দিন নিজের ও স্বজনদের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে পড়াশুনা চালিয়ে যান একাগ্রচিত্তে। তিনি আইন বিষয়ে সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করেন স্নাতক ডিগ্রি।
উচ্চশিক্ষার জন্য সিলেট থেকে পাড়ি দেন রাজধানী ঢাকায়। স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হন ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাকালীন ব্যাচে। গত জানুয়ারি তিনি ঢাকায় গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। এই তিন মাস বাড়ি আসি আসি করেও তার আসা হয়নি। (গতকাল) আজ শুক্রবার তার বাড়ি আসার কথা ছিল। অসুস্থ মাকে দেখার ইচ্ছার কথা জানিয়ে ছোট বোন নাসিমার সাথে কথা বলেন। বড় বোন পারুলের সাথে মৃত্যুর আগেও তার কথা হয়।
প্রসঙ্গত, বিয়ানীবাজার উপজেলা তিলপারা ইউনিয়নের মাটিঝুরা এলাকার টুকা বরাউট গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ৪র্থ পুত্র নাজিম উদ্দিন। তারা পাঁচ ভাই ও দুই বোন ছিলেন।