টেস্টটিউব বেবী!! কী বলে ইসলাম?

test-tube-babiesডেস্ক রিপোর্ট: বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতি ও আবিষ্কার মানবসন্তান প্রজননের বেশ কিছু নতুন পন্থা উদ্ভাবন করেছে। তন্মধ্যে টেস্টটিউবের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান অন্যতম। সাধারণত টেস্টটিউবের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের দুটি পদ্ধতি হতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী নয়- এমন দুজন নারী ও পুরুষের বীর্য এবং শুক্র যদি মিশ্রিত করে সন্তান জন্মদানের ব্যবস্থা করা হয়, এ ব্যবস্থাকরণ টেস্টটিউবের ভেতরও হতে পারে অথবা স্বয়ং সে নারীর গর্ভাশয় অথবা তৃতীয় কোনো নারীর গর্ভাশয়ে অথবা এই পুরুষের শরিয়ত সম্মত স্ত্রীর গর্ভাশয়েও হতে পারে। উল্লিখিত সবগুলো পন্থাই যেহেতু সন্তানের বংশ পরিচয়কে মিশ্রিত করে ফেলে, যে বংশ পরিচয়ের যথার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই শরিয়তে ব্যাভিচার নিষিদ্ধ হয়েছে, তাই এই পন্থা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ। এ ক্ষেত্রে শরিয়তের সুস্পষ্ট ঘোষণাও রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তির পক্ষে নিজের পানি (বীর্য) দ্বারা অন্যের জমি সিঞ্চিত করা বৈধ নয়। [তিরমিজি]

দুই. স্বয়ং স্বামী-স্ত্রীর শুক্রকে মিশ্রিত করে যদি সন্তান প্রজননের ব্যবস্থা করা হয় তারও কয়েকটি পদ্ধতি হতে পারে। যথা:

১. স্বামীর শুক্র ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে গ্রহণকরত স্ত্রীর গর্ভাশয়ে পৌঁছে দেয়া হবে।
২. স্বামী-স্ত্রী উভয়ের শুক্রকে গ্রহণ করত টেস্টটিউবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তরেখে অতঃপর তা সেই স্ত্রীর গর্ভাশয়ে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
৩. স্বামী ও তার স্ত্রীর শুক্র সংগ্রহ করে তা অন্য স্ত্রীর গর্ভাশয়ে স্থাপন করা হবে হয়তো এ কারণে যে তার প্রথম স্ত্রী স্বাস্থ্য অথবা অন্য কোনো কারণে সন্তান ধারণ করতে অক্ষম।

উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে স্বামীকে হস্তমৈথুন এবং স্ত্রীকে নার্সের সামনে সতর ভঙ্গ করা, তাছাড়া সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বাভাবিক পন্থারও আশ্রয় নিতে হয়। তবুও স্ত্রী যদি স্বাস্থ্যগত কারণে সন্তান ধারণ করতে অক্ষম হয়, আর তাদের মাঝে সন্তান লাভের প্রতি পরম আগ্রহ থাকে তাহলে এই পদ্ধতিতে সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়া যায়। কারণ এটাও এক ধরনের চিকিৎসা। আর শরিয়ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকে। তবে এ জাতীয় পন্থাও এড়িয়ে চলতে পারলে ভালো।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দ্বিতীয় পন্থায় জন্ম নেয়া শিশু যার শুক্র থেকে সেই তার পিতা হবে। কারণ, পিতৃপরিচয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে স্বামীর শুক্র দ্বারা স্ত্রী গর্ভবর্তী হওয়াটাই যথেষ্ট। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে শারীরিক যৌনমিলন জরুরি নয়। হ্যাঁ, যদি স্বামী ও এক স্ত্রী ডিম্বাণু নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভাশয়ে রাখা হয়, আর দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তান ধারণের কষ্ট স্বীকার করে তাহলে এই দ্বিতীয় স্ত্রী এই সন্তানের মা বলে বিবেচিত হবে। কারণ, কুরআনে কারিম যে নারী সন্তান জন্ম দেয় তাকেই মা বলে অভিহিত করেছে। তবে যেহেতু প্রথম স্ত্রীর ডিম্বাণু সন্তান জন্মের মূল ভিত্তি তাই তাকেও এখানে মা বলার অবকাশ আছে। আমাদের ফকীহগণের কাছে এমন আরও অনেক নজির রয়েছে, যেখানে একই শিশুর নসব দুই ব্যক্তির সাথে প্রতিষ্ঠিত। [হালাল হারাম : পৃ. ৩০৪/৩০৫]