যে কারণে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর ব্রাসেলস

6ডেস্ক রিপোর্ট :: জমজমাট ব্যস্ত একটা শহর, কিছু জায়গা আবার খুব শান্ত৷ ছবির মতো সুন্দর সব পার্ক আর স্কোয়ার। হীরা, চকোলেট, খেলা আর বিয়ারের জন্য বিখ্যাত শহরটা৷ তবে এই মুহূর্তে ইউরোপের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহর।

মঙ্গলবার দফায় দফায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে এই শহর। পুলিশের ধারনা, নভেম্বরে প্যারিস হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই শহরেই। হামলার পর এখানেই এক অ্যাপার্টমেন্টে লুকিয়ে ছিল প্যারিস হামলার মূলহোতা সালাহ আবদেসালাম৷

জানা যায়, সালাহের সহকর্মী ফিদায়েঁরা প্যারিসের রাস্তায় মারা গেলেও, তিনি নিজে সুইসাইড বেল্টটা ফেলে পালিয়ে এসেছিলেন এই ব্রাসেলসে।

গত চারমাসের পুলিশি চেষ্টায় অবশেষে গত শুক্রবার সালাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মাত্র চার দিনের মধ্যেই ব্রাসেলসে ঘটে গেল ভয়াবহ হামলা। সালাহকে ফ্রান্সের কাছে প্রত্যাপর্নের আইনি প্রক্রিয়া চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলা আসলে সালাহর মস্তিষ্কপ্রসূত৷

দেখা যায়, আল-কায়দার যখন বাড়বাড়ন্ত, তখনও বেলজিয়ামের রাজধানীকে ঘাঁটি হিসেবে বেছে নিয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের সহযোগীরা। কিন্তু বার বার কেন ব্রাসেলসই জঙ্গিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হচ্ছে? এর পিছনে বেশ কিছু কৌশলগত কারণ রয়েছে।

প্রথমত, প্যারিস, আমস্টারডাম, কোলোন, স্ট্রাসবুর্গ, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, বার্লিন-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় শহরের ব্রাসেলস থেকে গাড়ি বা ট্রেনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ৷ ব্রাসেলস থেকে শহরগুলোয় যেতে কোনও চেকিংয়ের প্রয়োজন ছিল না। তবে প্যারিস হামলার পর ইমিগ্রেশনে কড়াকড়ি হয়েছে৷

দ্বিতীয়ত, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো মধ্যে বেলজিয়াম থেকে আইএসে যোগ দিতে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক জিহাদিরা সিরিয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, ২০১২ সাল থেকে কমপক্ষে ৫শ’ নারী-পুরুষ জঙ্গি হিসাবে সিরিয়া এবং ইরাক পাড়ি দিয়েছে৷

তৃতীয়ত, মুসলিমদের একাংশকে প্রান্তিক করে রাখা এবং চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগের অভাবকেও পুরোদমে কাজে লাগাচ্ছে আইএস৷ বেলজিয়ামে জন্ম নেওয়া অনেক মুসলিমই মনে করেন, তাঁরা নিজভূমে পরবাসী৷ এদেরই মগজধোলাই করে ইরাক আর সিরিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো৷

বেলজিয়ামের এক ইমাম শেখ সুলেইমান ফন অ্যাল সখেদে বলেন, ‘আমরা এমন একযুগে বাস করি, যখন প্রতিবাদী হয়ে রুখে দাঁড়ানো বিপদেরই নামান্তর৷’  বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যখন অ্যালের সঙ্গে কথা বলেছেন , তখন তাঁর চারপাশে মোতায়েন কয়েকজন দেহরক্ষী৷ তা সত্ত্বেও ধর্মান্তরিত এই ইমাম বলেন , ‘আমি কিন্তু ভয় পাই না৷ আমি শুধু সতর্ক থাকছি, লুকিয়ে থাকছি না৷ যা হওয়ার তা তো কেউ ঠেকাতে পারবে না৷