সালমান শাহ মিউজিয়াম করবেন আলমগীর কুমকুম

kumkum 1 copyআলমগীর কুমকুম। এককালে ছিলেন সিলেটের খ্যাতিমান ছাত্রনেতা। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেট তথা তৎকালীন সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর আরেকটি পরিচয়, তিনি একজন নীরব সমাজসেবক। তিনি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক অকাল প্রয়াত সালমান শাহ’র মামা। এই হিসেবেও সালমান ভক্তদের কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। নগরীর দাড়িয়াপাড়াস্থ তাঁর বাসভবনে তিনি সালমান শাহ জাদুঘর করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তাঁর বাসভবনে তিনি একটি প্রাণী আশ্রমও গড়ে তুলেছেন। সার্বিক বিষয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাইয়ুম উল্লাস।
এক সময় সিলেটের ছাত্ররাজনীতিতে দাপুটে নেতা আলমগীর কুমকুম এখন রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি প্রথমে এইডেড স্কুলে, তারপর পাইলট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। এরপর এমসি কলেজে ভর্তি হই। সেখান থেকেই আমার ছাত্ররাজনীতি শুরু হয়েছিল। মরহুম সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সিলেট বিভাগ ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। জিয়াউর রহমান মারা যাবার পর রাজনীতিতে নোংরামি ঢুকে যায়। আমি তিন মাস কারাবন্দি ছিলাম। বের হয়ে স্ত্রী নুরুন নাহার বেবী ও বড় ছেলে আলিজাকে নিয়ে বিদেশ চলে যাই। আমি লন্ডন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, মেক্সিকো ও আমেরিকা ঘুরেছি। এক বছর পর দেশে আসি। এবার একা আমেরিকা যাই। তারপর স্ত্রী- বাচ্চাদের নিই। প্রবাসে যাবার পর রাজনীতি একদম ছেড়ে দিই।
বিদেশ থেকে বার বার দেশে ফিরে আসা সম্পর্কে বলেন, আসলে দেশের মাটি টানে বার বার দেশে আসি। তাছাড়া পৈতৃক জমিজমা দেখাশোনা এবং সালমানসাহ ভবন দেখতেও বাড়িতে ছুটে আসি। এখানে দেশে ৫/৬ মাস থাকি আবার চলে যাই।
আলমগীর কুমকুম তাঁর বাসভবনে প্রাণী আশ্রম গড়ে তোলা সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে আমার তিন ছেলে এক মেয়ে। তারা আমেরিকাতেই পড়ালেখা করছে, চাকরিও করছে। আমার বড় ছেলে আলিজা একটি ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে মারা যায়। তার মৃত্যু আমাকে আজও কাঁদায়। তাই ওর প্রতি ভালোবাসা থেকেই এখানে তার নামে একটি প্রাণী আশ্রম করেছি। তবে, আমি পশুপাখিকেও ভালোবাসি। কারণ, পশুপাখি ভালোবাসা বুঝে। তাছাড়া এখানে সৌন্দর্য-শখও কাজ করেছে। এখন পাখির ডাক ওঠে গেছে। আমি খুব কাছ থেকেই এখানে পাখি দেখি, ডাক শুনি। বাঘ-সিংহ কিন্তু সজারুকে ভয় পায়, ওর গা-ঝাড়া দিলে ফলা বিদ্ধ হবার ভয়। আমার এখানে একটি সজারু আছে। আমি তাকে ভয় পাই না। কারণ, ওটা আমার ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে।
তাঁর প্রাণী আশ্রমে বর্তমানে চিল, টিয়া, তিতর, কালিম, সাদা বক, বালিহাঁস, বানর আছে। আছে টাইগার নামে একটি কুকুর । এটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে করার ইচ্ছা আছে। কেননা, আশ্রমটি দেখার জন্য অনেক মানুষ আসেন।
আলমগীর কুমকুম একজন নীরব সমাজসেবকও। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি টাকার অভাবে একটি গরিব শিশু পড়তে পারছে না। আশপাশে এরকম দেখলেই আমি সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করি। ৬-৭ জন শিক্ষার্থীকে আমি নিয়মিত বেতন দিই। কারো স্কুল ব্যাগ নেই, আমি ব্যাগ কিনে দিই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। এই দেশে প্রকৃত ভিক্ষুক নেই। ভিক্ষাবৃত্তি একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই জিনিসটা দেশের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করছে। ইচ্ছে করে দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি তুলে দেব। কিন্তু এটা তো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাবলে দেশবাসী কাজ করতেন।
আলমগীর কুমকুমের বাড়ির নাম সালমান শাহ ভবন। বাড়িটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে সালমানের জন্য ছোট্ট একটি ঘরে তার ছবি আছে। ভবিষ্যতে তার কিছু ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে সিলেটে একটি সালমান মিউজিয়াম করবো।
সালমান শাহ’র রহস্যজনক মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সামিরা চক্র। ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় সালমান আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘মামা, আমি কালই সিলেটে আসছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছি , সামিরাকে (স্ত্রী) ডিভোর্স দেব।’ ওই রাতে সামিরা ওই বাসায় ছিল। পরদিন প্রতিবেশী একজন ফোন করে জানাল, সালমান সাহেব খুব অসুস্থ।’ গিয়ে দেখা গেল, সালমান পৃথিবীতে নেই। সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আত্মহত্যাই যদি করে থাকে, প্রথমেই প্ররোচিত কারার দায়ে সামিরাকে কেন আটক করা হয়নি? আসলে সালমানকে সামিরা চক্র ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে। সালমান যে ব্রান্ডের সিগারেট খেত, সেদিন তার রুমে অন্য ব্র্যান্ডের সিগারেটের টুকরো পাওয়া যায়। যে দড়িতে ফাঁস লাগানো হয়েছে বলা হচ্ছে, ওটা একটি মোটা রশি, অথচ সালমানের গলায় ছিল চিকন একটি দাগ। আমার ধারণা, ওটা জব্দকৃত টেবিল ফ্যানের তারের দাগ, যা দিয়ে সালমানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সালমান হত্যার রহস্য উদঘাটন না হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে, সালমান হত্যা নিয়ে অনেক লোক রাতারাতি ধনী হয়ে গেছে।
সালমান শাহ হত্যা মামলা সম্পর্কে আলমগীর কুমকুম বলেন, সালমান শাহ যেহেতু জাতীয় ব্যক্তি। তাই তার মামা হিসেবে নয়; রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমার দাবি, আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা দিয়ে ঘটনাটি আবার তদন্ত করানো হোক। বর্তমানে এই হত্যা মামলাটি বিচারাধীন আছে।
সালমান শাহ ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কম সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান ভক্তদের হৃদয় জয় করে। তার ভক্তরাই আজ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেউ কেউ দক্ষ আইনজীবী হয়ে বের হয়েছেন, ভবিষ্যতে তারাই সালমান হত্যা নিয়ে লড়বেন। ভক্তরা একদিন বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবেন-এটাই প্রত্যাশা।
সবশেষে ছেলেবেলার স্মরণীয় একটি ঘটনার কথা বলতে গিয়ে আলমগীর কুমকুম বলেন, তখন মুক্তিযুদ্ধ শেষে মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। চারপাশে ঝোপজঙ্গলে অস্ত্র-গ্রেনেড পরিত্যক্ত পড়েছিল। তখন এই দাড়িয়াপাড়ার বাসায় ছিলাম। ক্লাস সিক্সে পড়তাম। কাজের ছেলে রমজান আর আমি ঘুরে বেড়াতাম চারদিক। জঙ্গলে কুড়িয়ে পেলাম একটি ডিনামাইট। আমি কিন্তু থ্রিলার বই পড়তাম খুব।  তো রমজান আর আমি ডিনামাইটটি নিয়ে আসি বাড়ির গুদাম ঘরে। নাড়াচাড়া করতে গিয়ে ডিনামাইটটি বিস্ফোরণ ঘটল। রমজান ছিন্নভিন্ন। সেদিনই সে মারা যায়। আমি দুবছর হাসপাতালে ছিলাম। বেঁচে যাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন বিদেশ যাওয়ার সময় প্রায়ই আমার শরীওে থাকা স্পিøন্টার স্কেনারে ধরা পড়ে। তখন আমাকে বলতে হয়, আমার শরীরে স্পিøন্টার আছে।