পিলখানা ট্রাজেডির সাত বছর: আজও শেষ হয়নি বিচার
ডেস্ক রিপোর্ট :: পিলখানা ট্রাজেডির সপ্তম বার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো একটি দিন। ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে এক মর্মান্তিক ও নৃশংস ঘটনা ঘটে। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে তৎকালীন বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে এবং তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে।
চারটি প্রধান প্রবেশপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে। অবতারণা ঘটে বীভৎস দৃশ্যের। সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে শুরু হওয়া ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর বিদ্রোহের অবসান ঘটে। ততোক্ষণে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তার জীবনাবসান ঘটে। নিহত হন আরও একজন সৈনিক, দুইজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও ৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি।
ঘটনার পর পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। পিলখানায় এ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগাঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। বিডিআরকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বাহিনীটির নাম, পোশাক, লোগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতিতে আনা হয় পরিবর্তন। নতুন নামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্ম হয়। পরিবর্তন করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের আইন। বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড।
বিজিবি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিশেষ আদালত ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। ২৭১ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহের (বর্তমান বিজিবি) ঘটনার ৪ বছর ৮ মাস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লালবাগে অবস্থিত আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে এ হত্যা মামলার রায় দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান।
রায়ে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৭১ জনকে খালাস দেয়া হয়। অন্যদের ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন পিন্টু এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও পিলখানা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আসামিদের মধ্যে ৬ জন ডিএডি রয়েছেন। ওই দিন ৮২৩ আসামির উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। পিলখানা হত্যা মামলার ২৩৩তম কার্যদিবসে ৬৫৪ জন সাক্ষী আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে সারাদেশে ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। বিডিআর আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা ছিল সাত বছর কারাদণ্ড। বর্তমানে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।
বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত বছরের ৮ নভেম্বর শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে গত ২৯ নভেম্বর। পর দিন থেকেই আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয় যা এখনো চলছে।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চে পিলখানা হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক চলমান।
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলায় সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ৭ম বার্ষিকীতে যোগাযোগ করা হলে বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, মোট ১২৪ কার্যদিবসে মামলায় পেপারবুক উপস্থাপন করা হয়। হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি তর্ক চলছে।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির করা আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্টে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। সেখানে শুনানি চলছে।
তিনি বলেন, ‘বিচারিক ব্যাপার। মামলার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সপ্তাহের ৫ দিনই আদালত বসছেন। সেখানে স্পেশালি বিচারকও দায়িত্বে রয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।