সুনামগঞ্জ আ.লীগের সম্মেলন ঐক্য না বিপক্ষ

Sunamgonj picঅহী আলম রেজা :: ঐক্য না বিপক্ষ- সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে এই আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে। নেতাকর্মীরা একই প্লার্টফর্মে দাঁড়াবেন নাকি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে পুরনো কোন্দল এটি এখন দেখার বিষয়। অনেক জল্পনা কল্পনার পর সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্টিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সম্মেলন ঘিরে সুনামগঞ্জ আ.লীগে এখন উৎসবের আমেজ। অন্যদিকে দুই বলয়ের বিভক্তিও স্পষ্ট।
একদিকে আছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব বখত জগলুল। অন্যদিকে মাঠে আছেন সুনামগঞ্জ- ৩ আসনের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ- ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাহানা রব্বানী, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে- ১৯ বছর পর এবার ভারমুক্ত হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট। তবে, শেষ মূহুর্তে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট বাদ পড়লে এ পদে আসবেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব বখত জগলুল।
অন্যদিকে জেলার সভাপতি হতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিকল্প হিসেবে এ পদে মুহিবুর রহমান মানিকের নাম আসতে পারে। এ বলয়ে সাধারণ সম্পাদকের জন্য জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা পরিষদের প্রশাসক ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাহানা রব্বানী।
১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। তিন বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও ১৯ বছরেও তা সম্ভব হয়নি। সম্মেলনের মাধ্যমে পদের পরিবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ যেন নিয়তির হাতেই ছেড়ে দিয়েছিল এ পরিবর্তনের দায়িত্ব। নিয়তি সে দায়িত্ব পালনও করছে। সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুটো পদই এখন তাই চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। কমিটি গঠনের এক বছরের মাথায় সভাপতি আবদুজ জহুর মৃত্যুবরণ করলে দায়িত্ব পান মতিউর রহমান। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সুনামগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল।
তবে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী দেওয়ান সামসুল আবেদীনের পক্ষে কাজ না করায় শাস্তি হিসেবে পদ হারান জগলুল। দায়িত্ব পান সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট। সেই থেকে অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় জেলায় নিজেদের ঘরও গোছাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। জেলার ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৭টিতেই কমিটি নেই। যে ৭ টিতে কমিটি আছে সেগুলো নিয়েও বিরোধ আছে। সম্মেলনের অভাবে বিভক্তি-কোন্দলও ছড়িয়েছে দলের মাঝে। তবে, সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। সেই সঙ্গে অবশ্য বিভেদের রেখাটাও স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। তার প্রমাণ মিলেছে পালটাপালটি বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে। সম্মেলনকে সামনে রেখে পালটাপালটি বর্ধিত সভা করে দুই পক্ষ। প্রথম বর্ধিত সভাতে দুই পক্ষই উপস্থিত ছিল। কিন্তু সংগঠনের আওতাধীন উপজেলা কমিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের নেতৃত্বে একটি পক্ষ সম্মেলন স্থল ত্যাগ করে। পরদিন তারাই একই স্থানে পালটা বর্ধিত সভার আয়োজন করেন।
নেতাদের পাল্টাপাল্টি বর্ধিত সভা ও সভা সমাবেশের পর বিভ্রান্ত তৃণমূলের কর্মীরাও। আজ বহু প্রতিক্ষিত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বকে ঘিরে সুনামগঞ্জ আওয়ামী পরিবারে ঐক্য নাকি নতুন বিপক্ষ-বিভক্তি তৈরি হবে এটাই এখন দেখার বিষয।