শ্রদ্ধা প্রদর্শণের নামে এ কেমন অশ্রদ্ধা!

indexডেস্ক রিপোর্ট :: প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকলে মেতে ওঠেন আনুষ্ঠানিকতায়। রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শহীদ মিনারে ফুল দিতে শুরু হয় হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কি। অথচ শহীদ মিনারে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নামে চলে অশ্রদ্ধা প্রদর্শণ।

শহীদের ফুল দিতে শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে ওঠার ঘটনা ঘটছে প্রতিবছরই।

রোববার মহান একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করতে গিয়ে একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটেছে। জুতা পায়ে বেদীতে ওঠার তালিকায় কেবলমাত্র রাজনৈতিক দল বা তাদের অংগসংগঠন নয়, এ তালিকায় রয়েছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দও।
সিলেট জেলা বিএনপি, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ, সিলেট মহানগর আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ ও দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সহ আরো অনেক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা শহীদ বেদীতে জুতা নিয়ে ওঠে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।
বারবার করে শহীদ মিনারের ঘোশণা মঞ্চ থেকে মাইকে নিষেধ জানানোর পরও শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে ওঠার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ মিনারের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা জানান, মাইকে অসংখ্যবার বলা হয়েছে জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে না উঠতে, এছাড়াও প্রত্যেকটা সংগঠন ও তাদের কর্মীদের জুতা পায়ে বেদীতে উঠতে নিষেধ করা সত্ত্বেও অসংখ্য রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন এ নিষেধাজ্ঞা মানেনি। মানুষের সচেতনতার অভাব এবং এ সম্পর্কে বড় পরিসরে প্রচারণার অভাবই এ ঘটনার পূণরাবৃত্তির জন্য দায়ী বলে জানান তাঁরা।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ 1মিনারের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, এটা নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে না ওঠাটাই নিয়ম। অথচ এ কথাটা মঞ্চ থেকে বারবার বলতেও লজ্জ্বা লাগে। তারপরও বলি। এ ধরণের ঘটনার অতীত অভিজ্ঞতাও রয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা ও সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। তারপরও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে না। যারা জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে ওঠেন, তাদের অনেকেই সমাজের অনেক গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের জুতা পায়ে বেদীতে ওঠার বিষয়টি লজ্জ্বাজনক। এতকিছুর পরও যারা জুতা পায়ে বেদীতে ওঠেন, তাদেরকে ধিক্কার জানানো ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই, আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারি না। শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে ওঠার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী জাহিদুল ইসলাম বলেন, মিনার প্রাঙ্গণে মঞ্চ থেকে বারবার বলা হয়েছে জুতা পায়ে না ওঠার জন্য তবুও অসংখ্য সংগঠনের মানুষ জুতা পায়ে ওঠেছে। শহীদ মিনারে যারা ফুল দিতে আসে, তারা বেশিরভাগই আসে ছবি তোলার জন্য। তারা জানে না শহীদদেরকে কিভাবে সম্মান জানাতে হয়, কিভাবে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হয়। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে যদি ছবি তোলা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়, এরা কেউই আর আসবে না শ্রদ্ধা জানাতে।
17258
সংস্কৃতিকর্মী ও সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনকারী বর্ণা ব্যাণার্জী বলেন, প্রতি বছর শহীদ মিনারে অসংখ্য মানুষ আসে, যাদের বেশিরভাগই লোক দেখানোর জন্য আসে। তাদের মধ্যে কোন চেতনা নেই, শহীদদের প্রতি, ভাষার প্রতি কোন শ্রদ্ধা নেই। তারা জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে ওঠে, ফুল দিতে এসে সেলফি তোলে, ফটোসেশন করে; এদের বিবেকবোধ জাগেনি, তারা শ্রদ্ধা জানাতে জানে না।