সিলেটের জাতীয় বাঁশ উদ্যান: বাঁশ নেই, আছে শুধু ঘাস

16195ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটে জাতীয় বাঁশ উদ্যান এ বাঁশ নেই, শুধুমাত্র সাইনবোর্ডটি দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যানের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় বিলীন হওয়ার পথে বাঁশ উদ্যানটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ জুন ২৩ টি প্রজাতির প্রায় ৭০০টি বাঁশের চারা রোপণের মাধ্যমে ১.৪১৭ হেক্টর জমিতে দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যানের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু তিন বছর না যেতেই এখন এ উদ্যানে বাঁশের অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাঁশের বদলে উদ্যানজুড়ে এখন ঘাসের রাজত্ব।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরো উদ্যানে সর্বসাকুল্যে থেকে ১৫/২০টি বাঁশের চারা কোনো রকমে টিকে আছে। অযত্ন আর অবহেলায় এগুলোর আধমরা অবস্থা। পুরো উদ্যানজুড়েই এই অযত্নের ছাপ। উদ্যানে অনেক গাছপালা রয়েছে, কিন্তু পরিচর্যা নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তিন বছরের মধ্যেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এ বাঁশ উদ্যানটি।

‘জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের (এফএসটিআই) চত্বরে টিলা ভূমিতে গড়ে তোলা হয় এ উদ্যানটি।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটে একসময় বাঁশের উৎপাদন বেশি হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অতিপ্রয়োজনীয় এ বাঁশ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে।

পরিবেশগত কারণে সিলেট বাঁশ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সিলেটে যত প্রজাতির বাঁশ রয়েছে, তা দেশের অন্য কোথাও নেই। তাই সিলেটে গড়ে তোলা হয় বাঁশ উদ্যান। বাঁশের উৎপাদন বাড়ানো, বিলুপ্ত প্রায় বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণ ও সিলেটে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই গড়ে তোলা হয় জাতীয় বাঁশ উদ্যান।

এছাড়া এ উদ্যানটি একসময় উদ্ভিদ ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের গবেষণাকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেছিলের বন বিভাগীয় উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

তবে সে আশার গুড়েবালি। অযত্ন-অবহেলায় বড় হওয়ার বদলে মরে গেছে সব বাঁশ। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে উদ্যানটি। এখন কেবল উদ্যানের প্রবেশ পথের প্রধান ফটকে জাতীয় বাঁশ উদ্যানের নাম সংবলিত সাইনবোর্ডে বাঁশের জাত, নাম ও উদ্যানের তথ্যাদি ছাড়া বাঁশের অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া দুষ্কর।

এই সাইনবোর্ডে মধ্যে ২৩ প্রজাতি বাঁশের নামও রয়েছে। যা উদ্যানে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- কলসি, পেঁচা, রুপাহি, টেংগা, জাই, মুলি, থাই বরুয়া, কাটা বরুয়া, পলি মরকা, কঞ্চি, বুদুম, কালী, সোনালি, ডলু, মাকাল, মৃতিঙ্গা, তেতুয়া, ওড়া, বেতুয়া, পরুয়া, বরুয়া, বোতম, রঙ্গন ও পারুয়া বাঁশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ‘জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ সাইনবোর্ডে ২৩ প্রজাতির বাঁশের চারার কথা লেখা থাকলে আদতে শুরুতেই এখানে ২০টি প্রজাতির চারা লাগানো হয়েছিল।

পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমি সন্তান, বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, সিলেটের জন্য বাঁশ উদ্যানটি বড় একটি উদাহরণ হতে পারত। তবে বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে উদ্যানটির আজ করুণ দশা। এটি এখন বনবিভাগের প্রকল্পবাজি আর প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে গেছে।

সিলেটের ফরেস্ট রেঞ্জার নলিনী কান্ত দাস বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে এই উদ্যান একটি অনন্য নজির হতে পারত। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতেও উদ্যানটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারত। তবে বিভিন্ন সঙ্কট ও সীমাবদ্ধতার কারণে এটি এখন ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আর এস এম মুনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।