সিলেটে জঙ্গী হামলার আশংকা : সতর্ক থাকার তাগিদ দিলেন অর্থমন্ত্রী : সতর্ক পুলিশ
ডেস্ক রিপোর্টঃ অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত বলেছেন, সিলেটে জঙ্গিদের তৎপরতা রয়েছে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গি কর্মকান্ডের কোনো খবর পেলে তা পুলিশকে অবহিত করতে হবে। মন্ত্রী আজ সোমবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সিলেটের বাদাঘাটে নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে এসে এমন মন্তব্য করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার বাদাঘাটে স্থানান্তর করা হবে। আর পুরনো কারাগারের স্থানে পার্ক নির্মাণ করা হবে। কারাগারের জন্য বাদাঘাট থেকে সিলেট শহরতলীর তেমুখী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অতীতে সিলেট অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। বর্তমানে সিলেটের অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিক সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। তার সফরকে সফল করে তুলতে হবে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মিজানুর রহমান, অর্থমন্ত্রীর ভাই ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন সেলিম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবীর ইকু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ রেনু, সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ প্রমুখ। এর আগে অর্থমন্ত্রী সোমবার পৌনে ২টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে সরাসরি বাদাঘাটে এসে পৌঁছান। পরে বিকাল ৪টার দিকে তিনি ফের হেলিকপ্টারযোগেই ঢাকায় ফিরে যান।
এদিকে সিলেটের বিভিন্ন মাজার সংলগ্ন মসজিদ, শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ, ওয়াজ মাহফিল ও জুমার নামাজের জামাতে হামলা করা হতে পারে এমন তথ্য সিলেটের পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। এমন তথ্যে জঙ্গি মোকাবেলায় পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। সন্দেহভাজনদের ব্যক্তিদের উপরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যেসব জঙ্গি সদস্য ধরা পড়ছে তাদের অনেকের বাড়ি সিলেটে। সিলেটে বসেই তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে- এমন দাবি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। জঙ্গি তৎপরতা রোধে সিলেটে পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান।
জঙ্গি কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত কয়েক মাসে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে সিলেটের বাসিন্দা কয়েকজন রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আনিসুজ্জামানকে হুমকিদাতা জকিগঞ্জের একটি মাদরাসার সাবেক শিক্ষক আইটি বিশেষজ্ঞ আবদুল হক ওরফে আবদুল হ্যাক, ব্লগার অনন্ত হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া কানাইঘাটের মান্নান রাহী ওরফে মান্নান এহিয়া, ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক সিলেট নগরীর মুন্সিপাড়ায় বসবাসকারী শফিউর রহমান ফারাবি, ফেসবুকে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর অভিযোগে আটক নগরীর কলবাখানির কাজী বাপ্পী।
সিলেটে বসবাসকারী আফগান ফেরত মুজাহিদদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ ওঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব মুজাহিদদেরও রাখা হয়েছে কড়া নজরদাড়িতে।
সিলেটে ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের উত্থান ও অপতৎপরতা ঠেকাতে শনিবার পুলিশ লাইন মিলনায়তনে পুলিশ কর্মকর্তারা আলেম মাশায়েখদের সাথে মতবিনিময় করেন। ওই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মিজানুর রহমান সিলেটে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সিলেট পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেন- সিলেটে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার নানা তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে। জঙ্গিদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মাজার সংলগ্ন মসজিদ, শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ, ওয়াজ মাহফিল ও জুমার নামাজের জামাতে হামলা করা। কিন্তু জঙ্গি মোকাবেলায় পুলিশ পুলিশ সতর্ক রয়েছে। সন্দেহভাজনদের ব্যক্তিদের উপরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয় উলেখ করে ডিআইজি আরও বলেন- জঙ্গিবাদ কারো একার সমস্যা নয়। রাষ্ট্র ও তার নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ-জনতা সম্মিলিত চেষ্টায় দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।