সিলেটে বনফুলের দুই কর্মী খুনের নেপথ্যে…
টার্গেট ছিলেন রাসেল, খুন হন রাজু-তপু
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়া বিসিক শিল্প এলাকায় বনফুলের দুই কর্মী খুনের ঘটনার পেছনে মূলত মিনি ফুটবল খেলা নিয়ে কথাকাটাকাটির বিরোধ ছিল বলে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে জানিয়েছেন হামলায় বেঁচে যাওয়া রাসেল। বনফুলের বিস্কুট সহকারী রাসেলকেই টার্গেট করে এসেছিল হামলাকারীরা। কিন্তু রাসেলকে বাঁচাতে এসে হামলাকারীদের সামনে পড়ে যান বনফুলের অপর দুই কর্মী রাজু ও তপু। এসময় রাজু ও তপুকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় খুনি চক্র। এই চক্রে অন্তত ৮ থেকে ১০ জন জড়িত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই’র পরিদর্শক ইমরান হোসেন জানান, খাদিম বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় রাতে মিনি ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছিল। সেখানে খেলা দেখতে যান বনফুলের বিস্কুট বিভাগের সহকারী রাসেল আহমদ। ছাত্রলীগ কর্মী পংকীর ছেলেরাও খেলছিল। এসময় রাসেলের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় পংকী পক্ষের একজন কর্মীর। রাসেল তাকে একটি লাথিও মেরে চলে এসেছিলেন। এ ঘটনার জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ছাত্রলীগ কর্মী পংকী ও তার ভাই রকি মিলে দলবল নিয়ে বিসিকে বনফুলের কারখানায় এসেছিল রাসেলকে টার্গেট করে। তারা রাসেলকে বনফুলের রাস্তার সামনে একা পেয়ে ধরে কোপ দিতে থাকে। এসময় রাসেল দৌড় দেন, কিন্তু রাসেলকে বাঁচাতে এসে বনফুলের দুই কর্মী রাজু-তপু হামলাকারীদের সামনে পড়ে যান। দুর্বৃত্তরা দুজনকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে দেয়। ঘটনার পর সদর্পে হামলাকারীরা চলে যায়।
শাহপরাণ থানা সূত্র জানায়, এ ঘটনায় নিহত রাজু মিয়ার ভাই মাসুদ পারভেজ বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে, পুলিশ প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত চার সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। তারা হচ্ছে, খাদিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী পংকী, রকি, জামাল ও জুম্মান। গতকাল শনিবার সকালে জগলুলকে ধরতে এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে শাহপরাণ পুলিশ তার বড় ভাই জুম্মানকে থানায় নিয়ে যায়। তবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আটককৃতদের কাউকেই আদালতে চালান দেয়নি পুলিশ। তার ভাই জগলুলকে ধরতেই তাকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে।
এদিকে, দুই কর্মচারী খুনের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করেছেন বিসিকের শ্রমিক, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তারা সিলেট-তামা্িবল মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেন।
খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বেলাল বলেন,‘ দুজন নিরীহ শ্রমিককে সন্ধ্যারাতেই প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা মর্মান্তিক এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির সংকেত। এলাকাবাসী ও শ্রমিকরা এই জোড়া খুনের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করেছিলেন। এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তারা। পুলিশের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে।’
বনফুল এন্ড কোম্পানির এজিএম মাসুদ আহমদ জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত রাজু ও তপুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। নিহত রাজুর দুই ভাই ও তপুর ভাই এসে লাশ নিয়ে গতকাল রাতেই গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। নিহত রাজুর বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ দরদাহ গ্রামে ও তপুর বাড়ি শরিয়তপুরের ধামড্যা উপজেলার ধনই গ্রামে।
মাসুদ আহমদ বলেন,‘ মামলায় বিরোধের প্রকৃত কারণ উল্লেখ করেননি নিহত রাজুর ভাই। কারণ, প্রকৃত কারণটা আমরা কেউই জানি না। তবে, মামলায় বলা হয়েছে, রাসেলের সাথে বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটনা ঘটেছে। আর রাসেলকে বাঁচাতে গিয়েই রাজু ও তপু খুন হয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন,‘ এ ঘটনায় তিনজনকে আটক দেখানো হয়েছে। তবে, অন্য আসামি ধরতে তাদের পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটন ও জড়িত সবাইকে আটকে অভিযান চলছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা বলেন, দুইজন নিহতের ঘটনায় বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা ও স্থানীয় এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করেছিলেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেয়ার পর তারা অবরোধ তুলে নেন।