কোম্পানীগঞ্জে ক্রাশার মিলে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ
বাস্তবায়ন নেই জেলা প্রশাসন ও এমপি’র নির্দেশের
বিক্ষুব্ধ জনতা ॥ বিচ্ছিন্নে ইউএনও’র কালক্ষেপন
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফুসে উঠছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক ও সাধারণ জনতা। বিদ্যুৎ গ্রাহক ও উপজেলাবাসীর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় সরকারি খাস জায়গায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফলে পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলনরত জনতা ও সাধারন মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সচেতন মহলের দাবি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির। তাদের দাবি প্রভাবিত হয়ে তিনি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
সরকারি খাস জায়গায় স্টোন ক্রাশার মিলের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারনে কোম্পানীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকগণ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় জনসাধারনের দাবি ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ বাস্তবায়নে কোন ভুমিকা পালন করছেন না। বিগত আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের দাবিতে তীব্র আন্দোলন করেন বিদ্যুৎ গ্রাহক ও স্থানীয় জনতা। এসব আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি পত্র প্রদান করেন। এতে তিনি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান। ১৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থ্নাীয় সরকার শাখার সহকারী কমিশনার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি পত্র (স্মারক নং ০৫.৬০.৯১০০.০০৯.০১.০০১.১৫-১১৭০) প্রদান করেন। ঐ পত্রে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সেপ্টেম্বর,২০১৫ এ বিবিধ (ণ) নং আলোচনায় তার উপজেলায় সরকারি খাস জায়গায় স্থাপিত ষ্টোন ক্রাশার মিলে বেআইনীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত পূর্বক মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অতএব এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
তাছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সদ্য স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া জিএম আবুল কালাম আজাদ সরকারি খাস জায়গায় স্থাপিত ক্রাশার মিল হতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা চেয়ে পত্র প্রদান করেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হতে চললেও রহস্যজনক কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরনে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। যে কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী অসংখ্য মানুষ। তাদের দাবি সরকারি খাস জমিতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকারী ও অবৈধ মিল মালিকদের রক্ষা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে বড় ধরনের সুবিধা আদায় করে বসে আছেন।
উল্লেখ্য গত কয়েক মাস ধরে কোম্পানীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসহ স্থানীয় জনতা সরকারি খাস জায়গায় স্থাপিত ষ্টোন ক্রাশার মিল থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পল্লী বিদ্যুতের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও বিষয়টি তুলে ধরেন। কিন্তু তাতেও সাড়া দেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফলে জনমনে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকায়ও এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির সাংবাদিকদের জানান, ষ্টোন ক্রাশার মিল থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সে লক্ষে এখন অভিযুক্তদের কাছ থেকে বক্তব্য গ্রহণ করা হচ্ছে। তদন্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রেরিত পত্র তিনি পেয়েছেন। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তিনি কাজ করছেন। তিনি কোনভাবেই প্রভাবিত হচ্ছেন না বরং নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিচ্ছেন।