গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতন, সন্তানকেও হত্যা: তারপরও মামলা নেয়নি থানা!

178804_1-1ডেস্ক রিপোর্টঃ স্যার জীবনে ভিক্ষা করে খাবো, কিন্তু ওখানে যাবো না। ওরা আমার চার মাসের মেয়ে রাফিয়াকে মেরে ফেলেছে। এবার আমাকেও মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচতে দেন’ বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শারমিন আক্তার।

এরপর স্বজনদের অনুরোধে শরীরের কিছু অংশের কাপড় সরিয়ে নির্যাতনে জখমের চিহ্ন দেখান। রীতিমত শিউরে ওঠেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। শারমিন বলেন, তার শরীরে এ রকম আরও অনেক চিহ্ন রয়েছে। শুধু শারীরিক নির্যাতনই নয়, জোর করে ঔষধ খাইয়ে তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী করার চেষ্টা করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের চিন্তিরখোল গ্রামের দিনমজুর আজিম উদ্দিন ফকিরের মেয়ে শারমিন আক্তার (২৫) এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তার স্বামীর পরিবারের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

শারমিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ২০০৭ সালে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আক্কেল আলী হাওলাদারের ছেলে আইউব আলী হাওলাদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী আইয়ুব বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবি করে আসছিল। বাপের বাড়ি থেকে সাধ্য অনুযায়ী যৌতুক নিয়েও স্বামীকে দিয়ে খুশি করেছে। এমনকি পিতার বাড়ি থেকে নেওয়া সেলাই মেশিনটিও বিক্রি করে স্বামীকে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও স্বাদ মেটেনি ওই পাষণ্ডের। আরও যৌতুকের দাবিতে এই আট বছরে তাকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।

তিনি জানান, এই সংসারে তাদের ৩টি সন্তান। এর মধ্যে দুটি সন্তান জীবিত আছে। রাফিয়া নামে চার মাসের কন্যা সন্তানকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করেছে মেয়েটির বাবা আইয়ুবসহ অন্যরা। গত ১০ ডিসেম্বর স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে প্রথমে তাকে নেশা জাতীয় ঔষধ সেবন করায়। এরপর তার চার মাসের সন্তান রাফিয়াকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তার স্বামী আইয়ুব আলী হাওলাদার, তার মেঝভাই ইউছুফ আলী হাওলাদার, বড় ভাইয়ে স্ত্রী সেতারা বেগমসহ কয়েকজন। এরপর কখনও গাছে বেঁধে, কখনও ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে, কখনও ঘরের আড়ায় ঝুঁলিয়ে বেদম মারপিট করে তাকে আটকে রাখা হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে বাগেরহাট এসে বাবার বাড়ির লোকদের সহায়তায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।

বর্ণনার একপর্যায় শারমিন জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে থাকেন, সে ওদের হাত থেকে বেঁচে আসলেও তার ছোট মেয়েকে মেরে কবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তার কোনও বিচার হয়নি। একপর্যায়ে কাঁপতে থাকে সে। নেশা জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর কারণে তার এমন হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ঘটনাস্থল নাজিরপুরে হওয়ায় তার প্রভাবশালী স্বামীর পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করতে পারেন নি।

নির্যাতিতার ভাই শাহেদ আলী জানান, তিনি নাজিরপুর থানায় মামলা করতে গেলে ওসি ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে নিয়ে তাদের গ্রামে গিয়ে মিটিয়ে ফেলার জন্য বলে।

এ বিষয়ে নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, থানায় কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। তবে ওই মহিলা (শারমিন আক্তার ) একজন পাগল। সে নিজে তার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে বলে তাদের (পুলিশের) কাছে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নির্যাতিতার স্বামী আইয়ুব আলী হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।