শাল্লা ভুমি অফিসে ভুয়া কাজ কারবার : লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রতারনার ফাঁদ

HITACHI HDC-1499Eশাল্লা প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা ভুমি অফিস যেন ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। অবাধে চলে ঘুষের লেনদেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এখানে ঘরে বাইরে দালাল ছাড়া কোন কাজই হয় না। টাকা ছাড়া ফাইল নড়াচড়া করে না। ভুমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মূল্য, তালিকা সম্বলিত সাইনবোর্ড ও কাগজ সরবরাহের নির্ধারিত সময়ের উল্লেখ শুধু লোক দেখানো। তালিকার মূল্যের ৫০/৬০ গুন বেশী টাকা আর মাসের পর মাস পিছনে ঘুরে ভুক্তভোগীরা কাজ আদায় করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে শত গুন বেশি টাকা দিয়েও হয়রানির শিকার হচ্ছে । এসব যেন দেখার কেউ নেই। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভুমি অফিসের নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি ও ঘুষ বানিজ্যের ভয়াবহ চিত্র। দালাল পরিবেষ্টিত শাল্লা উপজেলা ভুমি অফিসে দালালদের কোন কাজই অসাধ্য নয়। জমির বৈধ মালিক যেই হোক, চাহিদা মত টাকা আর দাগ খতিয়ান নং দিলেই হয়ে যায় অন্যের। আবার বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও ঘুষের রেটে হেরফের হলে প্রকৃত ভুমি মালিকদের হতে হয় হয়রানির শিকার । নামজারীর জন্য সরকারের নির্ধারিত ফিকে উপেক্ষা করে সেখানে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকার নিচে কোন কাজেই হাত দেয়না অফিসের সার্ভেয়ার। শাল্লা ভুমি অফিসে সার্ভেয়ার মোনায়েম হোসেন থাকাকালীন অবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। তার এই দুর্নীতিতে উপজেলা পরিষদের জায়গাগুলো টাকার বিনিময়ে অন্য জনের নামে হয়ে গিয়ে ছিল। পরবর্তীকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ বিন ইকরাম আসার পরে পরিষদের জায়গাগুলো উপজেলার আওতায় আনে। শুধু তাই নয় এই দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার উপজেলার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে গেছে লাখ লাখ টাকা। এই ঘটনা ঘটার পরও থেমে থাকেনি ভুমি অফিসের ঘুষ বানিজ্যের খেলা। সার্ভেয়ার মোনায়েম বদলী হওয়ার পর সার্ভেয়ার হাফিজুর রহমান আসার পরে ঘুষ বানিজ্যের খেলা যেন দ্বিগুন হয়ে গেল। তার এই দুর্নীতিতে অতিষ্ট সাধারন মানুষ। ভুমি অফিসের কর্মচারী মিলে গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জানা যায়, এদের নেই কোন লুকোচুরি, লাজলজ্জা, ভয় ভীতি। এমনভাবে ঘুষের দরদাম চলে এ যেন তাদের ন্যায্য পাওনা। দাবিমত টাকা দিলে ভুমি সংত্রান্ত নানা তদন্ত প্রতিবেদন, সার্ভে রিপোর্ট আর নামজারী খতিয়ানের মাধ্যমে গোপনে একজনের জমি রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে অন্যজনের নামে। এসব অনিয়মের বেড়াজালে সর্বসান্ত হচ্ছে শাল্লার সাধারন মানুষ। জাল দলিল, পর্চা, মৌজা ম্যাপ(নকশা) একই জমি বহুজনের কাছে বিক্রি। রেকর্ডের সময় নির্ধারিত লোকের অনুপস্থিতিতে তার জমি নিজের অংশের মধ্যে ঢোকানোসহ নানা দুর্নীতির সঙ্গে পরিচিত ভুক্তভোগীরা। দলিল পত্র ঠিক থাকলে টাকা কম হাঁকা হয়। এদিক সেদিক হলে আর রক্ষা নেই। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলেও নিস্তার মেলেনি সাধারন মানুষের। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, টাকার বিনিময়ে দুর্বলতার খবর প্রতিপক্ষের কাছে পাচার করা হচ্চে। এমনকি রর নিচে বিন্দু না পড়লেই টাকার অংক বেড়ে যায় কয়েক হাজার। শুধু তাই নয় ইউনিয়ন ভুমি অফিসেও একই ধরনের চিত্র ভেসে আসে। ইউনিয়ন ভুমি অফিসের দিলোয়ার হোসেনের সাথে সরেজমিনে পরিচয় ছাড়া ভুক্তভোগীদের কাগজ পত্র নিয়ে নামজারী করার জন্য গেলে, সে বলে নামজারী করতে তিন হাজার টাকা লাগবে এক টাকাও কম হবে না। কি কারনে তিন হাজার টাকা লাগবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্ভেয়ার স্যারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়ে এই কাজ করাতে হবে। তা না হলে নামজারি করা যাবে না। শাল্লায় এ্যাসিল্যান্ড না থাকায় ভুমি অফিসে রাম রাজত্ব কায়েম করছে হাফিজুর রহমান। এব্যপারে হাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে, তিনি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। এমনকি তার নামটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম আপনাকে বলবো কেন? এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ বিন ইকরামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সরকারের নিয়মনুযায়ী নামজারিতে টাকা লাগে ১ হাজার ১শ। এখানে যদি এই ফির উপরে কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে এর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।