একটি সেতুর অভাবে রাজনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার ৩ লাখ মানুষের চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি

kusiara.b.বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর-বালাগঞ্জ রাস্তার খেয়াঘাট বাজারে কুশিয়ারা নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুটি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষ যুগ-যুগ ধরে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। সেতু না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা যোগে ৩টি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয়রা এখানে একটি সেতুর জন্য অনেকবার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কাছে ধর্না দিয়েছেন। আন্দোলন, বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেছেন। অবহেলিত এ অঞ্চলের লোকজনের দাবি, কুশিয়ারা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে শুধু রাজনগর-বালাগঞ্জ নয়, পার্শ্ববর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ ও ওসমানীনগর থানার মানুষও উপকৃত হবে। এসব অঞ্চলের মানুষ সিলেট, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের পাশাপাশি শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা পাবে। এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে এখানে একটি সেতু নির্মানের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরিদর্শনে এসেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের প্রকৌশলী অধ্যাপক সুজিত কুমার বালা ও অধ্যাপক তারেকুল ইসলাম। তারা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কুশিয়ারা তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনও করেছিলেন। এরপর ২ বছর কেটে গেলেও এখনো শুরু হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ।
স্থানীয়রা জানান, কুশিয়ারা নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা এবং উত্তর পার্শ্বে নদী পার হলেই সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদর। নানান কাজের জন্য রাজনগর, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার মানুষকে সিলেট ও মৌলভীবাজারে যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে রাজনগর উপজেলার উত্তর পার্শ্বের ফতেহপুর, উত্তরভাগ, পাঁচগাঁও ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য রাজনগর উপজেলা বা মৌলভীবাজার জেলা সদরের চেয়ে বালাগঞ্জ এবং সিলেটের সঙ্গেই যাতায়াত সহজ। এতে তাদের অর্থ ও সময় দুটোই বাঁচে। কিন্তু সেখানে একটি সেতু না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পেশাজীবি মানুষ নৌকা দিয়ে কুশিয়ারা পার হয়ে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এছাড়া স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও রোগীসহ সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যখন নদীর পানি বেড়ে উঠে তখন তীব্র স্রোতে খেয়ানৌকায় পারাপার হয়ে ওঠে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ । তখন বিভিন্ন ঘাটে নৌকাডুবির মতো মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। সেতুর অভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় শিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এ এলাকার মানুষ দিনে-দিনে পিছিয়ে পড়ছে।
খেয়াঘাট বাজার কমিটির সভাপতি খালেদ উদ্দীন আহমদ জানান, রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের খেয়াঘাটে একটি সেতু বদলে দিতে পারে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। সেতু হলে মৌলভীবাজার ও সিলেটের সাথে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রুবাইয়াত জামান জানান, এই সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় রিপোর্ট একনেকের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা যাবে।