গুলি করলেন ছাত্রলীগ কর্মী, প্রক্টরের অডিও ফাঁস

Capture2ডেস্ক রিপোর্টঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মহিদুর রহমান রাসেল। এদিকে ব্যাপারটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহার বিরুদ্ধে।

গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একজন ছাত্রলীগ কর্মীর মধ্যে মোবাইল কথোপকথনের একটি একটি অডিও ক্লিপ থেকে বোঝা গেছে যে ঘটনার দায়িত্ব নিতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। গত শুক্রবার রাতে গুলি ছোঁড়ার এ ঘটনা ঘটলেও রোববার তা জানাজানি হয়।

মারধর ও গুলি ছোঁড়ার এ ঘটনার পর ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে আসেন। উপাচার্য বরাবর লেখা এ আবেদন গ্রহণ করেন প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। পরবর্তীতে অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী গতকাল রোববার দুপুরে প্রক্টর কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রক্টর কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা। এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রকে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে প্রক্টর কার্যালয়।

গত শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে ফার্মেসি বিভাগের রজত জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান চলাকালে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিলনায়তনস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল আলম।

এ সময় অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন তাঁর বন্ধু ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম সিফাত ও হাসান মাহমুদ ফরিদসহ আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় কোনো যানবাহন না পেয়ে মিলনায়তনের সামনে থাকা একটি গাড়ির চালককে চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে অনুরোধ জানায় ওই শিক্ষার্থীরা। এতে চালক রাজি হলেও গাড়িতে ওঠা নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়।

সিফাতকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে নিজেই গাড়িতে উঠতে চান ফার্মেসি বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মহিদুর রহমান রাসেল। তিনি এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মাইদুল ইসলাম সিফাতের কোমরে লোহার চেইন দিয়ে আঘাত করেন রাসেল। এ সময় পাশে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে চার-পাঁচটি ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন রাসেল।

এ ব্যাপারে মাইদুল ইসলাম সিফাত ও হাসান মাহমুদ ফরিদ অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল সিফাতকে মারধর করেন এবং কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন। পরে ভয় পেয়ে তাঁরা দৌড়ে হলে চলে যান এবং বিষয়টি বড় ভাইদের জানান।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে মহিদুর রহমান রাসেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই দিন বিভাগের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম আমি। এ ধরনের কোনো ঘটনায় আমি জড়িত ছিলাম না। পরদিন সকাল বেলা আমার কক্ষের সামনে লিখিত অভিযোগ পাই। এ নিয়ে কিছুই জানি না আমি।’

তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমি অস্ত্র কই পাব আর কিভাবেই বা গুলি করবো?’

অন্যদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক বশিরুল হকের মধ্যে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ পেয়েছে। এতে এ ঘটনার দায়িত্ব না নিয়ে ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিকে দায়ী করে শিক্ষার্থীদের ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে প্রক্টরের বিরুদ্ধে।

কথোপকথনে শোনা গেছে, প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলছেন, ‘চেয়ারম্যানরে ভালোমত কইরা ধর। একবারে ধর।’

ফার্মেসি বিভাগের সভাপতিকে উদ্ধৃত করে ‘ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখা প্রশাসনের দায়িত্ব’ বশিরুল হকের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর বলেন, ‘কিচ্ছু দায়িত্ব না, ওরে ধরে আটকাই থোও (রাখো) ওনে (ওখানে)। বল যে, এর বিচার না হইলে আমরা উঠব না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফার্মেসি বিভাগের এক শিক্ষক জানিয়েছেন যে এ ক্লিপ প্রকাশের প্রেক্ষিতে রোববার দুপুরে একটি অনানুষ্ঠানিক সভা করেছেন বিভাগের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ ব্যাপারে জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই সভায়। এ ব্যাপারে জানতে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডুকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

প্রকাশিত অডিও ক্লিপ সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহাকে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনিও ফোন ধরেননি। সাংবাদিক পরিচয় জানিয়ে এসএমএস করলেও তার কোন জবাব দেননি প্রক্টর।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম রোববার রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটা অডিও ক্লিপের ব্যাপারে শুনেছি। তবে এখনো তা হাতে পাইনি বলে বিস্তারিত কিছু জানি না বিধায় এ ব্যাপারে এখনই কোন মন্তব্য করতে পারছি না’।