ধানি জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল: ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য চা বাগানে

Tea Garden Workerহবিগঞ্জ প্রতিনিধি: ডানকান ব্রাদার্সের চান্দপুর চা বাগানের ধানি জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন আশপাশের আরো ১০ চা বাগানের শ্রমিক। শনিবার থেকে এসব বাগানেও সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে সার্বিকভাবে চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাগান মালিকরা।

ধানি জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রোববার থেকে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থিত ডানকান ব্রাদার্সের চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিকরা। শনিবার থেকে কাজ বন্ধ করে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পাশের আমু, জগদীশপুর, লস্করপুর, দেউণ্ডি, তেলিয়াপাড়া, নালুয়া, বৈকণ্ঠপুর, সুরমা, চাপাইছড়া ও চন্ডীছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা। এছাড়া বন্ধ রয়েছে চান্দপুরের ফাঁড়ি বাগান জোয়ালভাঙ্গা, বেগমখান ও রামগঙ্গা চা বাগান। শনিবার এসব বাগান থেকে প্রায় চার হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে জড়ো হন চান্দপুর চা বাগানের ধানি জমিতে।

জানা গেছে, এখন বাগানগুলোয় প্রুনিং (পাতা সংগ্রহের পর গাছ ছেঁটে ছোট রাখা) চলছে। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে প্লাকিং (গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ) বন্ধ হয়ে গেলে পূর্ণ মাত্রায় প্রুনিং শুরু হবে। শ্রমিকদের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভের ফলে বাগান থেকে কোনো পাতা সংগ্রহ হচ্ছে না। ফলে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাগান মালিকদের সংগঠন।

ডানকান ব্রাদার্সের পরিচালক, বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য ও বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, এভাবে একের পর এক বাগান বন্ধ হতে থাকলে চা উৎপাদনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এ সিদ্ধান্তে শ্রমিকদের পাশাপাশি বাগানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারকে বলেছি, এ জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল না করতে। আশপাশে খাসজমি রয়েছে। সরকার চাইলে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সেখানে স্থানান্তর করতে পারে।

জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয় গত ২৬ আগস্ট অকৃষি খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত মামলার মাধ্যমে চুনারুঘাটের চান্দপুর টি জি মৌজার ৫১১ দশমিক ৮৩ একর জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে বন্দোবস্তের প্রস্তাব অনুমোদন করে। ২১ সেপ্টেম্বর ১/১ খতিয়ানে রেকর্ড সংশোধন করা হয়। আর ২১ নভেম্বর তা বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চা শ্রমিকদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (শেড)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, ১৮৯০ সাল থেকে বংশপরম্পরায় এ জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন শ্রমিকরা। জঙ্গল পরিষ্কার করে তারা এখানে চাষাবাদের গোড়াপত্তন করেন। তাই কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়া, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জমি হস্তান্তরের সিদ্ধান্তে ফুঁসে উঠেছেন শ্রমিকরা। সরকারের উচিত এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।

২৩টি চা বাগান নিয়ে গঠিত লস্করপুর ভ্যালি। চা শ্রমিকদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের লস্করপুর ভ্যালির সভাপতি অভিরত বার্তি বলেন, বাগানের এ ধানি জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আজ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে। সাতদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে আমরা লাগাতার কর্মসূচিতে যাব। ভ্যালির সব চা বাগান বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী চান্দপুর চা বাগানে মোট ১ হাজার ৯৫৫ জন শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ১ হাজার ৬৫৫ ও অস্থায়ী ৩০০ জন। শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যসহ বাগানে বসবাসরত মোট জনসংখ্যা ৮ হাজার ৮৩৩ জন। এর মধ্যে যারা বাগানে কাজ করেন, তারা শুধু দৈনিক ৮৫ টাকা হারে মজুরি পান। বাকি যাদের বাগানে কাজ নেই, তারা এ জমির ওপর নির্ভরশীল।