কাউন্সিলর শানুর ছোট ছেলেকে কুপিয়ে জখম : গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শাহানারা বেগম শানুর ছোট ছেলেকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় আহত শানুর ছোট ছেলে রায়হান ইসলামকে (২২) কে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
রোববার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে রামদার আঘাতে বাম হাতের আঙ্গুল খুঁইয়েছেন কাউন্সিলর শানু। রোববার রাত ১১ টার দিকে রায়হানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। গত সপ্তাহে কারাগার থেকে ছাড়া পান রায়হান। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর শানুর বড় ছেলে সোহানকে একই ভাবে কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত সোয়া ৮ টার সময় শানুর শেখঘাটস্থ ৫২/৪ খুলিয়াপাড়ার বাসা থেকে পাপ্পু নামের এক যুবক রায়হানকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পর শেখঘাট এলাকার গরম দেওয়ান (রহ.) মাজারের পাশে মা ভেরাইটিজ স্টোরের পাশে গেলে রায়হানকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে কয়েকজন যুবক।
ছেলের পেছন পেছন ঘরে থেকে বের হয়ে শাহানারা বেগমও ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। তাঁর বাম হাতের একটি আঙ্গুলে রামদার আঘাত লেগেছে।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। এর আগে শানুর আরেক ছেলে সোহানকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। শানু অভিযোগ করেন, তাঁর অপর ছেলে সোহানকে যারা হত্যা করেছে তারাই রায়হানকে কুপিয়েছে।
কোতয়ালী থানার লামাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) বেনু চন্দ্র দে বলেন, এ ঘটনায় কারা জড়িত তা জানা যায়নি। তবে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্ব শক্রতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদল নেতা কামাল হত্যা মামলার আসামি রায়হান গত সোমবার জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান।
ওসমানী হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, চোখে চুনা ছিনানোর ফলে রায়হানের দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কুপানের ফলে রায়হানের বাম পা প্রায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাড়ি কুপানের আঘাত রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাজার সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানের সামনে আড্ডারত অবস্থায় ৮/১০ জন দুর্বৃত্ত তাকে কুপিয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরিভাবে তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, রায়হানের দুই হাত, পিঠ ও পায়ে কোপ রয়েছে। তবে বাম হাতের ক্ষত বেশি হওয়ায় হাতটি কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আহত রায়হানের দাদী সামচ্ছুন্নাহার জানান, গতকাল রবিবার রাত ৮ টার দিকে পাপ্পু নামের এক ছেলে রায়হানকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তাকে কুপানোর খবর দিয়ে ছেলেটি লাপাত্তা হয়ে যায়। তবে কারা এ কাজ করেছে এখন পর্যন্ত বলতে পারছি না। দুর্বৃত্তরা তার মা শানুকে কুপিয়ে আহত করেছে। গতকাল রাতে এ্যাম্বুলেন্সযোগে ডাক্তারদের পরামর্শে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে তার দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে আর ডান পা ও ডান হাত কেটে ফেলা হতে পারে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমদ জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনাস্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ জানুয়ারি একই এলাকায় একইভাবে হামলায় নিহত হন শানুর ছোট ছেলে সোহান (১৮)। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর খুলিয়াপাড়ায় ছাত্রদল নেতা কামাল আহমদকে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর শানুসহ তার পরিবারের ৮ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় নিহত কামাল আহমদের স্ত্রী হ্যাপি বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।