জৈন্তাপুরে মামা-ভাগ্নির প্রেমের খবর ফাঁস করায় খুন হয় স্কুলছাত্র পুলক
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটে ভাগ্নির সঙ্গে প্রেম ছিল ঘাতক আবদুল কুদ্দুসের। আর এই প্রেমের বিষয়টি জানতো পুলক। মামা-ভাগ্নির প্রেম ও অভিসারের ডুয়েট ছবিও ছিল পুলকের কাছে। সেই অসম প্রেমের বিষয়টিও পুলক মেনে নেয়নি। গোপন প্রেমের বিষয়টি জানিয়ে দেয় এলাকার কয়েকজনের কাছে। আর প্রেমের বিষয়টি ফাঁস করে দেয়ায় পুলকের উপর ক্ষেপে উঠে কুদ্দুস। দুনিয়া ছাড়া করার পরিকল্পনা করে। আর পরিকল্পনা করেই তারা পাখিটিকি হাওরে নিয়ে খুন করে পুলককে।
ওদিকে, ঘাতক স্বপনের প্রেম ছিল এক মেয়ের সঙ্গে। সেই মেয়েকে বাদ দিয়ে আরেক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে স্বপন। সেটি জানতো কুদ্দুস। স্বপনের নতুন প্রেমের তথ্য ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে স্বপনকে খুনের মিশনে নিয়ে যায় কুদ্দুস। কুদ্দুসকে খুনের মিশনে সহায়তা করতে যায় ভাই শাহাব উদ্দিন শাবু। সিলেটের জৈন্তাপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থী পুলক চন্দ্র রাউত খুনের ঘটনার ৮ দিন পর গ্রেপ্তার হওয়া তিন ঘাতকই প্রথমে পুলিশের কাছে এবং পরে আদালতে এসব তথ্য জানিয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
গতকাল সিলেটের আদালতে তারা তিনজন খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা জানায়, ‘গোপন প্রেমের তথ্য ফাঁস করায় পুলকে হাওরের নির্জন স্থানে নিয়ে খুন করি। এরপর লাশ কচুরিপানার নিচে গুম করে চলে আসি।’
সিলেটের জৈন্তাপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার রাতে থানায় রেখে আব্দুল কুদ্দুস, শাহাব উদ্দিন শাবু ও স্বপন বিশ্বাসকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলককে পূর্ব বিরোধে খুন করা হয়েছে বলে স্বীকার করে।
তবে, জিজ্ঞাসাবাদের শেষপর্যায়ে তারা পুলিশ জানায়, গোপন প্রেমের বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ার কারণেই খুন করা হয়েছে পুলককে। পুলক প্রেমের সব ঘটনা জানতো। তার কাছে ছবিও ছিল। সে কয়েকজনের কাছে বিষয়টি জানিয়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে।
এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাওয়ার পর গতকাল দুপুরে জৈন্তাপুর থানার এসআই মিন্টু চৌধুরী হাজতে থাকা তিন আসামি কুদ্দুস, সাবু ও স্বপনকে নিয়ে আসেন সিলেটের আদালতে। বিকাল ৩ টার থেকে সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুদরত-ই-খোদার আদালতে তাদের হাজির করা হলে তারা স্ব-ইচ্ছায় খুনের দায়ে স্বীকারোক্তি দেয়।
প্রথমে কুদ্দুস খুনের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দেয়। পরে তার ভাই শাবু এবং শেষে স্বপন বিশ্বাস স্বীকারোক্তি দেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত আদালত তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ঘাতক তিনজনই জৈন্তাপুরের চারিকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। নিহত পুলকও তাদের সহপাঠী। আর যাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তারাও একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের এই প্রেমের বিষয়টি স্কুলের অনেক শিক্ষার্র্থীরই জানা ছিল। পুলক শেষে গোপন প্রেমের খবর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে জানিয়ে দিয়েছিল।
এদিকে, আদালতে ঘাতকরা জানায়, ১০ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সারি এলাকা থেকে তারা পুলককে নিয়ে আসে হরিপুর এলাকায়। সেখান থেকে তারা তাকে নিয়ে যায় পাখিটিকি হাওরের কাছে। আর ওখানে যাওয়ার পর প্রেমের বিষয়গুলো নিয়ে পুলকের সঙ্গে তারা কথা বলা শুরু করে। এবং গোপন বিষয়টি ফাঁস করে দেয়ার কারণ জানতে চায়। আর এসব কথাকাটাকাটির জের ধরে একপর্যায়ে কুদ্দুস গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ধরে পুলকের। এ সময় শাবু ও স্বপন পুলককে জাপটে ধরে। একপর্যায়ে পুলক নিস্তেজ হয়ে পড়লে তার লাশ গুম করার চেষ্টা চালানো হয়। পরে লাশটি চিরতরে গুম করে ফেলতে তারা পাখিটিকি হাওরে কচুরিপানার নিচে লাশটি লুকিয়ে রাখে।
এরপর তারা তিনজন চলে আসে। খুনের ঘটনার সময় পুলকের হাতে ছিল একটি দামি মোবাইল ফোন। ওই মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসে কুদ্দুস। ওই মোবাইল ফোন থেকে তারা পুলকের পিতার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার মুক্তিপণ আদায় করে। এবং পুলক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে বলে জানায়।
এরপর পিতার জিডি’র প্রেক্ষিতে সিলেটের জৈন্তাপুর থানা পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারে ঘাতক কুদ্দুস ব্যবহার করেছে পুলকের মোবাইল ফোন। এরপর পুলিশ কুদ্দুসকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। পুলক অপহরণের ৭ দিন পর বুধবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কুদ্দুসকে গ্রেপ্তার। তার স্বীকারোক্তি মতে গ্রেপ্তার করা হয় কুদ্দুসের ভাই শাহাবউদ্দিন শাবুকে। সর্বশেষ স্বপনকে পুলিশের তুলে দিয়েছেন তার পিতা মাতা।
এদিকে, গতকাল সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনজনের স্বীকারোক্তি গ্রহণের পর তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিন্টু চৌধুরী জানিয়েছেন, এখন তিনজনের বক্তব্য যাচাই-বাছাইয়ের পর খুব দ্রুত আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। পুলিশ পুলক নিখোঁজের প্রথম দিন থেকে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য খারাপ পুলিশ ছেলেটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারেনি। তবে, ঘাতকদের যাতে শাস্তি হয় পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত চালাবে।