অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে এবার প্রধানমন্ত্রী কেন যাননি ?

PM Sheikh Hasina & Migrants Day ISSUES - 02মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের স্বার্থরক্ষা এবং তাঁদের পরিবার পরিজনদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ‘১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ উপলক্ষ্যে ঢাকায় আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিলেও এবারই ঘটলো ব্যতিক্রম। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রধান অতিথির আসনটি ‘দখল’ করে নেন এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু কেন এই ব্যতিক্রম ? কী এর নেপথ্যে ?
অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানমালা যেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই অলংকৃত হয়ে এসেছে প্রতিবছর, সেখানে প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে গত ৬ মাস আগে বিদায় নেয়া ‘ব্যর্থমন্ত্রী’ কেন কিভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে, তাও আবার প্রধান অতিথি হিসেবে ! অভিবাসী দিবসে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি দেড় শতাধিক দেশে বসবাসরত এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে একদিকে যেমন হতাশ করেছে, পাশাপাশি প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের ঘাড় থেকে ‘মোশাররফ ভুত’ এখনো না নামায় ইতিমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। ক্লিন ইমেজের প্রবাসী মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ব্যক্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
‘রেমিটেন্সের উৎস’ এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ন্যায্য দাবীদাওয়া বাস্তবায়িত হোক বা না হোক, তাঁদের পরিবারবর্গের অধিকার সংরক্ষিত হোক বা না হোক, প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরব উপস্থিতিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখে আসছিলেন প্রবাসীরা। কিন্তু কেন এমন নেক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হলো এবার ? অনুসন্ধানে জানা যায়, টানা সাড়ে ৬ বছর প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং ‘সোকল্ড প্রমোশন’ জাস্টিফাই করতেই খন্দকার মোশাররফ হোসেন সুকৌশলে এই জঘন্য কাজটি সম্পাদন করেন, নিশ্চিত করেন প্রবাসীদের ‘প্রেস্টিজিয়াস’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি। শুধুমাত্র পারিবারিক কারণেই এর আগেও বহুবার তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে সফল হয়েছেন বলে অভিযোগ।
সাম্প্রতিককালে ফরিদপুরে হিন্দুবাড়ি দখল করেও বহাল তবিয়তে থাকা প্রতাপশালী মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ চাননি বলেই আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে এবার আসেননি বা আসা হয়ে উঠেনি প্রধানমন্ত্রীর, প্রবাসী কল্যান ভবনের নির্ভরযোগ্য সূত্র এমনটাই নিশ্চিত করেছে। ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা বলছেন, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে বসে তিনি খেটে খাওয়া প্রবাসীদের আজ কী এমন কল্যান করবেন যিনি সাড়ে ৬ বছর প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুখ-দুঃখের সাথী হতে পারেননি ঘুণাক্ষরেও। ভুল পলিসি জি-টু-জি চাপিয়ে দিয়ে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ধ্বংস করেছেন বাংলাদেশের শ্রমবাজার। প্রতারক আদমব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার ব্যর্থতা ঢাকতে মাথাব্যথার জন্য মাথাই কেটে ফেলেছিলেন।
সৌদিআরবে লাখ লাখ কর্মী যাবার ‘ভূয়া সংবাদ’ বারবার দিয়েছিলেন খন্দকার মোশাররফ। দেশটিতে বছরের পর বছর বিভিন্ন দেশের নারী শ্রমিকরা ভয়াবহ যৌন নিগ্রহের শিকার হলেও তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের অবলা নারীদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে, যদিও শেষতক তার এই মরণখেলায় সাড়া পড়েনি বাংলার গ্রামেগঞ্জেও। ১৫০টির বেশি দেশে শ্রমিক পাঠাচ্ছে সরকার, এমন ‘ভিত্তিহীন তথ্য’ তিনি দিয়েছেন খোদ জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার রেকর্ড ভঙ্গ হয় খন্দকার মোশাররফের দায়িত্বপালনকালীন সময়ে। এতোসব ব্যর্থতা সত্বেও শুধুমাত্র সেই পারিবারিক কারণেই মন্ত্রীসভা থেকে ছিটকে পড়া দূরে থাক, উল্টো এলজিআরডি মন্ত্রণালয় বাগিয়ে নেন তিনি। একাত্তরে ফরিদপুরের কুখ্যাত নুরু রাজাকারের পুত্র তিনি। এবারের অভিবাসী দিবসকে সুপরিকল্পিতভাবে কলংকিত করার জন্য বিজয়ের মাসে তাই প্রবাসীদের সর্বোচ্চ ঘৃণা।