যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ : পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের উৎসব চলছে : পুলিশ ডাকাডাকি

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আহবানে বিভক্ত সাধারণ সভা

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের ডাকা সাধারণ সভায় নেতৃবৃন্দ। ছবি- এনা।
সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের ডাকা সাধারণ সভায় নেতৃবৃন্দ। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির একটি অংশ গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে সাধারণ সভা আহবান করে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে সাধারণ সভা করে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের মধ্যে বিরোধী দীর্ঘদিনের হলেও গত সপ্তাহে তা প্রকাশ্য রূপলাভ করে। একজন আরেকজনের ডাকা সাধারণ সভাকে অবৈধ বলছেন। সভাপতি বলেন, সভাপতির অনুমতি ব্যতিত সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সভা ডাকতেন পারেন না। তার ডাকা সভা অবৈধ এবং ঐ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও অবৈধ। সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, দলের গঠনতন্ত্র মেনেই আমি সাধারণ সভা ডেকেছি। এটা কোনভাবেই অবৈধ হতে পারে না। সিদ্ধান্তও অবৈধ নয়।

ড. সিদ্দিকুর রহমানের ডাকা সাধারণ সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ। ছবি- এনা।
ড. সিদ্দিকুর রহমানের ডাকা সাধারণ সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ। ছবি- এনা।

সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের ডাকা সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। সাধারণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা আইরীন পারভীন, কার্যকরি কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিউদ্দিন দেওয়ান, আব্দুল হাসিব মামুন, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাজী এনাম, নূর আলম চৌধুরী, শিরিন আখতার দিবা, মোজাহিদুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান টুকু, এম এ করিম জাহাঙ্গীর, ড. আব্দুল বাতেন, তৈয়বুর রহমান টনি, ডেনি চৌধুরী, অহিদুর রহমান মুক্তা, শরাফ সরকার, মোস্তফা কামাল পাশা, শামসুল আবেদীন, আজিজুর রহমান সাবু, মইনুল হক, হাজী নিজাম উদ্দিন, মিসেস তরফদার, হারুন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, নূর নবী চৌধুরী, মোহাম্মদ মহসীন রিপন, নূরুল আফসার সেন্টু, শামসুল ইসলাম কলিন্স, আজহারুল ইসলাম মিয়া, আতাউল গনি আসাদ, আশরাফুজ্জামান, শহীদ হাসান, রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারি, খোরশেদ খন্দকার, আলাউদ্দিন জাহাঙ্গীর, জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
সাধারণ সভায় ব্যাপাক আলাপ- আলোচনার পর সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ ছাড়াও সাধারণ সভায় সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনার সময় প্রায় ৪ লাখ ডলার উত্তেলন করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সভাপতি তার কোন হিসাব দেননি। এ ছাড়াও সভাপতির বিরুদ্ধে চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনেন তারা। তারা বলেন, দলের দায়িত্ব পালন করবেন কীভাবে তিনি বলতে গেলে প্রায় সারা বছরই বাংলাদেশে থাকেন। দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে সিদ্দিকুর রহমান নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিতর্কিতদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। কমিটি অন্তর্ভুক্ত করার পরও তিনি তা সাধারণ সভা করে অনুমোদন নেননি। কোন এক অজ্ঞাত কারণে গত তিন বছরে তিনি সাধারণ সভা করেননি বার বার তাগিদ দেয়ার পরও।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের সাধারণ সভা পর সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে। সাধারণ সভায় গন্ডগোলের আশংকায় ব্যাপক সিকিউরিটি রাখা হয়। সিকিউরিটি রাখার পরও সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সাধারণ সভায় ঢুকার চেষ্টা করেন। কিন্তু নেতা এবং সিকিউরিটির লোকজনের কারণে তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে তারা জুইস সেন্টারের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। পরিস্থিতি জটিল এবং উক্তপ্ত হলে জুইস সেন্টারে সাধারণ সভা যারা করছেন তাদের পক্ষ থেকে পুলিশ ডাকা হয়। পুলিশ এসে যারা বাইরে বিক্ষোভ করছিলেন তাদের তাড়িয়ে দেন।
জুইস সেন্টারের সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, শামসুদ্দিন আজাদ, লুৎফুল করিম, আবুল কাশেম, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা আইরীন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, আব্দুর রহিম বাদশা, চন্দন দত্ত, শাহ মোহাম্মদ বখতিয়ার, সোলায়মান আলী, কাজী কয়েস, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, মাহবুবুর রহমান টুকু, আব্দুল মালেক, সাহানা রহমান, হিন্দাল কাদির বাপ্পা, মজিবুল মাওলা, সুজন আহমেদ সাজু, কামাল উদ্দিন, এস এম আলম বিপ্লব, আশফাক মাসুক, আব্দুস শহীদ দুদু, জহিরুল ইসলাম, হোসেন সোহেল রানা, গাজী মোহাম্মদ আলী, আকতার আহমেদ চৌধুরী, এম আনোয়ার, রেজাউল করিম চৌধুরী, আব্দুল হামিদ, কাজী আজিজুল হক খোকন, জুয়েল আহমেদ, কামরুল আলম হীরা, মজিবুর রহমান, শাহীন আজমল প্রমুখ।
সাধারণ সভায় ব্যাপক আলাপ- আলোচনা শেষে সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয় এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও হাজী এনামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই তিন জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে।
উল্লেখ্য, দুটো সাধারণ সভার মধ্যে সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের ডাকা সাধারণ সভায় সাংবাদিকদের শুধু ছবি তোলার সুযোগ দেয়া হয় কিন্তু সিদ্দিকুর রহমান কর্তৃক ডাকা সাধারণ সভায় সাংবাদিকদের ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়।