হায়দারকে ‘জামাতি-সুশীল’ বলা ছড়াকার রিটনকে খোলাচিঠি

Haider Hossain & Lutfor Rahman Riton ISSUES - 02মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ১৯৭১-২০০১ এই তিরিশ বছরের প্রেক্ষাপটে শিল্পী হায়দার হোসেনের লেখা, সুর করা ও গাওয়া “তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি” বিখ্যাত এই গানটি বহুবছর পর সম্প্রতি হঠাৎ করেই অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনকে। বিপন্ন-বিষন্ন বোধ করে পহেলা ডিসেম্বর ২০১৫ ফেসবুক পোস্টে তিনি হায়দার হোসেনকে খোলাচিঠি লিখেছেন, যার শিরোনাম “তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি ! কিন্তু কেনো ?” দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জনপ্রিয় এই গানটির শৈল্পিক সমালোচনা না করে বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিজয়ের মাসে আবেগের রেললাইনে ‘ছড়াকারের বিবেক’ হয়েছে লাইনচ্যুত, জামাতী-সুশীলের খাতায় তুলে দেয়া হয়েছে শিল্পী হায়দারের নাম। পাঠক বন্ধুরা, একটু সময় নিয়েই এই প্রতিবাদী খোলাচিঠিটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী হায়দার হোসেন এবং প্রথিতযশা ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন দু’জনই বাংলাদেশের উজ্জল নক্ষত্র। হায়দার হোসেনের গানের প্রতিটি কথা যেখানে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের চিন্তার খোরাক এমনকি গবেষণার আধার, সেখানে বহুদিন পরে এসে গানটি ইদানিং শুনতে গিয়ে ছড়াকার সাহেব লাইন-বাই-লাইন যে বিকৃত ব্যাখ্যা শর্টকার্ট স্টাইলে চাপিয়ে দিলেন, তার কঠিন প্রতিবাদ জানাতেই এই প্রতিবাদী খোলাচিঠির সূত্রপাত। সূচনাতেই যা না বললেই নয়, জনাব লুৎফর রহমান রিটন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভালোবাসা আপনার চাইতে আমার কোন অংশেই কম নয়। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসলে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা যাবে না বা অন্ধভাবে সমর্থন করতে হবে এমন ধ্যানধারণা আপনার থাকতেই পারে, কিন্তু শিল্পী হায়দার তো কোন দলের আমলনামা বয়ান করেননি তাঁর গানে। তাহলে কেন এতো খটকা ?

স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারের অপব্যবহার যে কোন অমানুষ করতেই পারে, কিন্তু আপনার মতো একজন ‘ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সৃজনশীল’ মানুষের কাছে ঘুণাক্ষরেও তা আশা করিনি। কারণ আপনি লিখেছেন “কি দেখার কথা কি দেখছি ? কি শোনার কথা কি শুনছি ? কি ভাবার কথা কি ভাবছি ? কি বলার কথা কি বলছি ? তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি। – আমার খটকা লাগে কেনো আপনি তিরিশ বছর পর স্বাধীনতাটাকে খুঁজছেন ? গোলাম আজমের জামাত এবং খালেদা জিয়ার বিএনপি যে স্বাধীনতাটাকে খুঁজছিলো তার সঙ্গে আপনার স্বাধীনতাটাকে খোঁজার কোনো সামঞ্জস্য না থাকলেও আমার মধ্যে এক ধরণের বিপন্নতা আমি অনুভব করছিলাম। কারণ আপনার গানের কথায় বুঝতে পারছিলাম স্বাধীনতার তিরিশ বছর পর মানে তো ২০০১। নাকি এটা চারদলীয় জোটের শাসনামলের আখ্যান নিয়ে রচিত অর্থাৎ ২০০২ কিংবা তার পরবর্তী সময়ে ? কাহিনী যদি সেরকমও হয়, শঙ্কা আমার কাটবে না তাও”!

রিটন সাহেব, আপনার শংকা না কাটাই স্বাভাবিক। কারণ দুই দশক আগের আসল কাহিনীটা জানা থাকা সত্বেও সযত্নে এড়িয়ে গেছেন যে ! আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে, সেই নরঘাতক গোলাম আজমের জামাতকে বুকে-পিঠে নিয়ে আওয়ামী লীগ এক টেবিলে বসেছে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে খালেদা জিয়ার বিএনপি’র বিরুদ্ধে। হায়দার হোসেনের গানের সেই তিরিশ বছরের সময়কালের মধ্যেই তো ঘটেছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম সেই কালো অধ্যায়। ৯৬ সালের আওয়ামী লীগ-জামাত প্রেম-মহব্বত আমলে নিয়ে দেশপ্রেমিক শিল্পী ঠিকই গেয়েছিলেন, “কি দেখার কথা কি দেখছি ? কি শোনার কথা কি শুনছি ? কি ভাবার কথা কি ভাবছি ? কি বলার কথা কি বলছি ? তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি”। শিল্পী হায়দারের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আপনার চিন্তাচেতনার ফারাকটা ঠিক এখোনেই জনাব রিটন। সবই জানেন এবং বোঝেন, মাগার অনেক কিছুই লিখবেন না বা চাইলেও ‍লিখতে পারবেন না জনাব ! বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় আজ এটাই নির্মম বাস্তবতা !

রিটন ভাইসাহেব, জমিজমা সংক্রান্ত কোন বিরোধ শিল্পী হায়দারের সাথে আপনার নেই তো ? কারণ আপনি লিখেছেন, “মুজিব হত্যার আনন্দে আপ্লুত হয়ে গান রচনা সুর সংযোজন মিউজিক কম্পোজ ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন খান আতাউর রহমান। খান আতার তৈরি করা গানটি ছিলো জাতির জনক হত্যাকে বৈধতা দেয়ার একটি সুরেলা প্রচেষ্টা। ১৯৭১ থেকে ২০০১, স্বাধীনতার তিরিশ বছর পর ফের স্বাধীনতাটাকে খুঁজতে যাওয়া এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় পাকিস্তানী প্রেতাত্মার উপস্থিতি আমাকে বারবার খান আতার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়ি, এইটা আবার নতুন কোনো সুরেলা প্রচেষ্টা নয় তো ! স্বাধীনতার মাত্র চার বছর পর খান আতা খুঁজেছিলেন ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য’ আর আপনি তিরিশ বছর পর ‘স্বাধীনতাটাকেই খুঁজতে’ নেমেছিলেন !”- এইটা একটা ভালো আত্মঘাতী টোকা দিলেন ইতিহাসের পাতায় মিস্টার রিটন ! তবে খান আতার পথ ধরে ১৯৯৬ সালে সেই পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের উপর ভর করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তখনও কিন্তু আপনি কানাডায় চলে যাননি। দেশে থাকলেও তখন শঙ্কিত হননি কেন ?

আওয়ামী লীগের সাথে ৯৬ সালে রাজাকারদের আঁতাত স্বাধীন দেশে বেমানান ছিলো বলেই শিল্পী হায়দার তাঁর নতুন সুরেলা প্রচেষ্টায় গেয়েছিলেন, “কি দেখার কথা কি দেখছি ? কি শোনার কথা কি শুনছি ? কি ভাবার কথা কি ভাবছি ? কি বলার কথা কি বলছি ? তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি”। জনাব রিটন, অনিচ্ছা সত্তেও আপনাকে লাইন-বাই-লাইন পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট জবাব দিতে হচ্ছে শুধুমাত্র বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে। আপনি লিখেছেন “স্বাধীনতা কি বৈশাখী মেলা, পান্তা ইলিশ খাওয়া? জ্বী জনাব, এটা আমরা অর্জন করেছি। এটাকে বন্ধ করতে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা ফাটিয়ে হত্যা করেছিলো নিরীহ বাঙালিকে। বৈশাখী মেলার আয়োজন করা, ওখানে পান্তা-ইলিশ খাওয়া এবং রবিঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানটি গাইতে পারাই আমার স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি”। – আংশিক সত্য আংশিক মিথ্যা বলেছেন রিটন সাহেব ! কারণ বাংলা নববর্ষের সাথে পান্তা-ইলিশের যে দূরতম কোন সম্পর্ক নেই তা বাংলাদেশের হাইস্কুলের ছেলে-মেয়েরাও জানে বা বুঝতে শুরু করেছে এখন। রবিঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানটি গাইতে কি হায়দার হোসেন আপনাকে বা আমাকে নিষেধ করেছেন ?

শুধুমাত্র বৈশাখী মেলা আয়োজন করলে কিংবা বাংলা নববর্ষের সাথে সম্পর্কহীন পান্তা-ইলিশ খেলেই যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হবে না, সেটা বোঝাতে তথা দলকানাদের ‘কানে পানি’ দেবার সুরেলা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই হায়দারের কন্ঠে শোনা গিয়েছিল “স্বাধীনতা কি বৈশাখী মেলা, পান্তা ইলিশ খাওয়া” ? ভাই আমার লুৎফর রহমান রিটন, শিল্পী হায়দারের বেহুদা সমালোচনায় আপনি আরো লিখেছেন, “স্বাধীনতা কি বটমূলে বসে বৈশাখী গান গাওয়া ? অবশ্যই। সেই ষাটের দশকে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ হয়েছিলো এই বাংলায়। সেদিন, ওয়াহিদুল হক প্রমূখদের নেতৃত্বে ছায়ানটের ছায়াতলে সমবেত হয়েছিলেন বাঙালির মুক্তবুদ্ধি আর মুক্তচিন্তার অগ্রদূতরা। রমনার বটমূলে বসে বৈশাখী গান গাইতে পারার স্বাধীনতাই আমার স্বাধীনতা”। – কী অপ্রাসঙ্গিক কথামালার অযৌক্তিক ছড়াছড়ি রিটন সাহেব ! স্বাধীনতার গানই তো গেয়েছেন শিল্পী হায়দার, মুক্তবুদ্ধি আর মুক্তচিন্তার অগ্রদূতদের পথের কাঁটা হতে যাননি তিনি কোনদিনই।

রমনা বা যে কোন বটগাছের বটমূলে বসে আপনার বা আপনাদের মতো দলকানা শিল্পীরা কোনদিন ঘুষ-দুর্নীতি শেয়ারবাজার কেলেংকারি নিয়ে গান গাননি বলেই হায়দারের প্রতিবাদী উচ্চারণ, “স্বাধীনতা কি বটমূলে বসে বৈশাখী গান গাওয়া” ? সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা করতে গিয়ে বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার করে আপনি আরো জ্ঞান দিয়েছেন, “স্বাধীনতা কি বুদ্ধিজীবির বক্তৃতা সেমিনার ? নিশ্চয়ই। বুদ্ধিজীবির বক্তৃতা সেমিনার যাতে এইদেশে না হয় সেই জন্যেই তো পরাজয়ের পূর্বাহ্নে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তালিকা ধরে ধরে বুদ্ধিজীবি নিধনে মেতে উঠেছিলো নিজামী-মুজাহিদের রাজাকার আর আলবদর বাহিনি”। – কীসের মধ্যে কী, পান্তা ভাতে ঘি ভাইজান রিটন ! নিজামী-মুজাহিদরা বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘নর্দমার কীট’ এটা বাংলাদেশের যে কোন কানামাছিও খুব ভালো করেই জানে। অথচ এই রাজাকার আর আলবদরদের সাথেই ১৯৯৬ সালে প্রথমে আওয়ামী লীগ এবং পরে ২০০১ সালে বিএনপি অনৈতিক প্রেম-ভালোবাসা এমনকি নির্বাচনকে ঘিরে ‘হিল্লা-বিয়ে’ করতেও পিছপা হয়নি। নিজামী-মুজাহিদদের সাথে সখ্যতার মাপকাঠিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ঐতিহাসিকভাবেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ জনাব !

বাংলাদেশের ‘সো-কল্ড’ বুদ্ধিজীবিরা যেহেতু বছরের পর বছর ধরে এমনকি আজও প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেক্কারজনক লেজুড়বৃত্তি করে বিবেককে বন্ধক দিয়ে একাত্তরের শহীদ বৃদ্ধিজীবিদের রক্তের সাথে ‘ডিরেক্ট বেইমানি’ করে চলেছে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি আর নেতা-নেত্রীদের পদলেহন করাই যেখানে বাংলাদেশের আত্মস্বীকৃত ধান্ধাবাজ বুদ্ধিজীবিদের ‘মিশন এন্ড ভিশন’, সেখানে হায়দারের মতো গুণধর শিল্পীরা বসেবসে আঙুল চুষবেন, এমনটা কি করে ভাবতে পারলেন মিস্টার রিটন ! “স্বাধীনতা কি বুদ্ধিজীবির বক্তৃতা সেমিনার” ?- যথার্থই গেয়েছেন শিল্পী হায়দার হোসেন। বিবেককে বন্ধক না দিলে গানে না হোক, ছড়ায়-কবিতায়-লেখায়-রম্যরচনায় আপনিও তাই তুলে ধরতেন ভাই আমার ! হায়দার হোসেনের মতো আপনাকেও দূর থেকে চিনি জানি, ছড়াকার হিসেবে আপনার খ্যাতির তারিফও আমি করি। কখনো ভাবিনি, বিজেয়ের মাসে আপনার মতো গুনীজনকে এভাবে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে ‘স্বাধীনতা’ ইস্যুতে। কারণ হায়দারের মতো নিরীহ একজন খাঁটি দেশপ্রেমিককে আপনি ‘জামাতী-সুশীল’ বানাবার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

“স্বাধীনতা কি শহীদ বেদিতে পুষ্পের সমাহার” ? – হায়দার হোসেনের গানের এই অপ্রিয় সত্যকথনও ভালো লাগেনি আপনার, জনাব রিটন ! আপনি বয়ান করেছেন, “অতি অবশ্যই, একাত্তরে আমাদের শহীদ বেদি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো পাকি সৈন্যরা। ওখানে ফুল দেয়াকে ধর্মান্ধ ও যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসররা নাজায়েজ মনে করে, এখনও। অধর্মের কাজ বলে মনে করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পুজার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে” ? – হায় হায়, এটা কী করলেন রিটন সাহেব ! প্রবল জনপ্রিয় শিল্পী হায়দারকে ‘সাইজ’ করতে গিয়ে আপনি কিন্তু আবারো অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ‘পুশ’ করেছেন, যা হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বাড়াতে কবিরাজী ঔষধের মতোই ধ্বংসাত্মকভাবে কাজ করতে পারে। স্বরণশক্তি সমৃদ্ধ আপনার মতো একজন মানুষ কি করে ভুলে গেলেন, শুধু বিএনপি-জামাতের শাসনামলেই নয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীনও বাংলাদেশের বহু শহীদমিনার ও স্মৃতিসৌধ কলংকিত হয়েছে চিহ্নিত রাজাকার-আলবদর এবং তাদের বাল-বাচ্চাদের পদভারে।

আপনার-আমার মতো দেশপ্রেমিক নাগরিকরা যখন চোর-বাটপার টাউট-প্রতারক ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজদের সাথে একই কাতারে শহীদ বেদিতে যাই পুষ্পের সমাহার নিশ্চিত করতে, তখন “স্বাধীনতা কি শহীদ বেদিতে পুষ্পের সমাহার” ? – শতভাগ সত্য নয় কি জনাব ! খোলাচিঠিতে আপনি লিখেছেন, “স্বাধীনতা কি গল্প নাটক উপন্যাস আর কবিতা ? জ্বী স্যার, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় সঙ্গীত ছিলো, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি, নতুন একটি গানের জন্যে যুদ্ধ করি। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এই গানটি এখনও শিহরণ জাগায় রক্তে। আমি আমার গল্প লিখবো, নাটক লিখবো, উপন্যাস আর কবিতা লিখবো, এটাই তো আমার স্বাধীনতা জনাব !” – জ্বি জাঁহাপনা লুৎফর রহমান রিটন, আপনার গল্প-নাটক-উপন্যাস আর ছড়া-কবিতার দুর্গে মেধাবী শিল্পী হায়দার হোসেন কি পাকি-কামান দাগিয়েছেন ? প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ তো আপনার চাইতে অনেক বড়মাপের লোক ছিলেন। মৃত্যুর আগে হুমায়ূন আহমেদের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘দেয়াল’ সংশোধন করে প্রকাশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিল হাই কোর্ট।

লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কেন সঠিক ইতিহাস সরবরাহ করা হবে না, এই মর্মে শিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবের প্রতি রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট, মনে আছে নিশ্চয়ই রিটন সাহেব ! কৈ তখনতো কোন চেতনা ব্যবসায়ী হুমায়ূন আহমেদকে ‘জামাতি-সুশীল’ ট্যাগ দেয়নি ! বেঁচে থাকলে হয়তো আপনিই সেই অসাধ্যটি সাধন করতেন ! যে দেশের মাহামান্য আদালত তাঁর দেশের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিককে ‘সঠিক ইতিহাস’ সরবরাহ করতে তৎপর হয় শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্বার্থরক্ষায়, সে দেশে গল্প-নাটক-উপন্যাস আর ছড়া-কবিতার জোয়ার বইলেও খেটে খাওয়া মেহনতী জনতা স্বাধীনতার সুফল পাবে কেন ? নির্মম বাস্তবতা এটাই তো জনাব ! “স্বাধীনতা কি গল্প নাটক উপন্যাস আর কবিতা” ? – চৌদ্দ বছর আগে এমনটা লিখে হায়দার কী এমন মহাপাপ করলেন ? “স্বাধীনতা কি তথাকথিত গল্প নাটক উপন্যাস আর কবিতা” ? – আজকের প্রেক্ষাপটে এভাবে লিখতে পারাটাই বেশি গৌরবের নয় কি ? “স্বাধীনতা কি আজ বন্দী আনুষ্ঠানিকতা” ? – হায়দারের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দিয়ে আপনার মতো একজন সম্মানিত লোক পাবলিকলি ‘দিগম্বর’ হয়ে যাবেন, এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না আপনারই ভক্তকুল।

জনাব লুৎফর রহমান রিটন, খোলাচিঠির সারমর্ম হিসেবে আপনি লিখেছেন, “স্বাধীনতা কি আজ বন্দী আনুষ্ঠানিকতা ? নাহ্। শুধু আনুষ্ঠানিকতায় বন্দী নয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা আছে বলেই, পেয়েছি বলেই আপনি এই গান গাইতে পারছেন। স্বাধীনতা আছে বলেই আপনার হাতে গীটার। যন্ত্রাণুষঙ্গযোগে আপনি গান গাইছেন। স্বাধীনতা না এলে আপনি হতেন সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য”। শেম অন ইউ মিস্টার রিটন ! ধিক্ ধিক্ শত ধিক্। আপনার ছড়া ভালো লাগে, তাই সেই ভালোলাগা থেকে বিবেকে বাঁধে আপনাকে ‘চেতনা ব্যবসায়ী’ বলতে। আপনি রাজাকার-আলবদরদের দলভুক্ত নন, তাই আপনি এখনো আমার কাছে সম্মানের আসনে। তারপরও প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন আপনাকে না করলেই নয়। একাত্তরে স্বাধীনতা না এলে আপনি লুৎফর রহমান রিটন যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা মীর কাসেম আলীর ‘ডানহাত’ হিসেবে জামাতী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে চাকরি করতেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায় ? ‘সব সম্ভবের দেশ’ বাংলাদেশে অতীতে যেমন অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে, আগামীতেও হবে ভাইজান ! তাই মানুষকে সম্মান করতে শিখুন, নিজের সম্মান বজায় রাখুন।

“স্বাধীনতা কি ঢাকা শহরের আকাশচুম্বী বাড়ি” ? – শিল্পী হায়দার হোসেনের গানের এই অংশেও আপনার গাত্রদাহ, সৃষ্টি করেছে চর্মরোগ ! সমালোচনা করতেই যেহেতু হবে, তাই এ যাত্রায় পান্তাভাতে শুধু ঘি ঢেলেই আপনি ক্ষান্ত হননি, একাধারে মলমূত্রও ত্যাগ করেছেন ! লিখেছেন, “পরাধীন আমলে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা শহর ছিলো উন্নয়নবঞ্চিত শহর। পশ্চিমারা করাচি-লাহোর-ইসলামাবাদ-পিন্ডির পেছনে যতো ব্যয় করতো তার দশ ভাগের একভাগও ঢাকার পেছনে ব্যয় করতো না। স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই ঢাকায় স্থাপিত হয়েছে আকাশচুম্বী দালান। যা করাচি-লাহোর-ইসলামাবাদ-পিন্ডিতেও নেই”। খুব ভালো কথা জনাব রিটন ! রাজউকের প্লট আপনি পাবেন না তো ‘মাইনকার চিপা’ থেকে এসে কেউ পাবে না-কি ? রিটন সাহেব, মনে রাখবেন, গত ৪৪ বছরে লুটেরারা সব লুটপাট করে খেয়েছে বলেই আপনার-আমার তিলোত্তমা ঢাকার অধিকাংশ ভবনই মাথা উচুঁ করেছে ‘বিল্ডিং কোড’কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।

আপনাকে একটি সুসংবাদ(!) দেই, ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ পূর্বাচলে হতে যাচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ভবন ১৩০ তলা ‘কেপিসি বেঙ্গল টাওয়ার’। অথচ দেখুন, স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধুনিক হাসপাতাল নির্মিত হয়নি বা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সরকারি দল, বিরোধীদলের নেতারা নাক-কান হাঁটু-গলা চোখ-মাথার চিকিৎসা এমনকি অপ্রকাশিত যৌনরোগ সহ যে কোন রুটিন চেকআপের জন্যে আমেরিকা-ইংল্যান্ড-সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড ছুটে যাচ্ছেন, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা উড়াচ্ছেন ফ্রিস্টাইলে। “স্বাধীনতা কি ঢাকা শহরের আকাশচুম্বী বাড়ি” ? – সাহস করে বলার জন্য শিল্পী হায়দারকে তাই ‘লাল সালাম’ জানালে আপনার ইমেজ বাড়বে বৈ কমবে না মিস্টার ! আপনি টাইপ করেছেন, “স্বাধীনতা কি ফুটপাতে শোয়া গৃহহীন নর-নারী ? স্বাধীনতা কি হোটেলে হোটেলে গ্র্যান্ড ফ্যাশন শো ? – কেনো নয় ? তারকা হোটেলে গ্রান্ড ফ্যাশন শো আধুনিক পৃথিবীর চলমান সাংস্কৃতিক বাস্তবতারই একটি অংশ। সময়ের সঙ্গে ঐতিহ্যের নবায়নই আধুনিকতা। এরকম ফ্যাশন শোর আয়োজনের মাধ্যমে বিশেষত বহিঃর্বিশ্বে আমাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব”। শাবাশ ! রিটন সাহেব শাবাশ ! আপনি আসলেই ‘আধুনিক’ !

“স্বাধীনতা কি ফুটপাতে শোয়া গৃহহীন নর-নারী” ?- এই বাক্যটিরও তো সমালোচনা করতে পারতেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। না, সেটা করেননি, না করার জন্য ধন্যবাদ। বিশ্বসেরা ফ্যাশন শো’র সূতিকাগারে গত দুই দশক ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুবাদে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ঢাকার হাতে গোনা কয়েকটি গ্রান্ড ফ্যাশন শো ছাড়া বাংলাদেশের তারকা হোটেলগুলোতে যা হয়, তার সাথে দূর বহুদূর দিয়ে হেঁটে চলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। গৃহহীন নর-নারীদের ফুটপাতে রেখে হোটেলে হোটেলে গ্র্যান্ড ফ্যাশন শো বড্ডবেশি বেমানান বলেই হায়দার গেয়েছেন, “স্বাধীনতা কি হোটেলে হোটেলে গ্র্যান্ড ফ্যাশন শো” ? – ‘গ্র্যান্ড ফ্যাশন শো’ ইস্যূতে হায়দারকে ‘ধোলাই’ দিতে পারেন ঢাকার হাই-সোসাইটির লোকজন ? আাপনি তো হাই-সোসাইটির তেমন কেউ নন। একজন সাধারন মানুষ হিসেবে নিজেকে ‘প্রগতিশীল’ বা ‘আধুনিক’ প্রমাণ করার আরও অনেক ইস্যূ তো আশেপাশেই আছে, তাই নয় কি জনাব !

যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা, কথাটি আপনি জানেন আমিও জানি প্রিয় রিটন সাহেব। কিন্তু কাউকে ভালো না লাগলে তার পশ্চাৎদেশে অঙুলি চালনা করতে গিয়ে বুঝি মস্তিষ্কের গোবর দিয়ে হালচাষ করতে হবে ? নইলে ১৯৭১-২০০১ সময়কালের প্রেক্ষাপটে রচিত তথা ১৪ বছর আগের গানের সাথে আজ ২০১৪-১৫ সালে ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের গুলিয়ে ‘হোম-মেড’ ককটেল কেন বানালেন জনাব ! ককটেল যে আপনার হাতেই ফুটে গেলো, যে হাত দিয়ে সযত্নে লিখেছেন, “স্বাধীনতা কি দুখিনী নারীর জড়-জীর্ণ বস্ত্র ? স্বাধীনতা কি গজিয়ে ওঠা অভিজাত পান্থশালা ? স্বাধীনতা কি অন্নের খোঁজে কিশোরী প্রমোদবালা ? স্বাধীনতা কি নিরীহ লোকের অকারণে প্রাণদন্ড ? না, নিরীহ লোকের প্রাণদণ্ড নয়, তবে অতি অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের প্রাণদণ্ড। তিরিশ লক্ষ বাঙালি হত্যা, চার লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানী, লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগের বিচার আমরা পেতাম না কোনোদিনই। স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই ট্রাইব্যুনাল ওদের প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারছে এবং প্রাণদণ্ড কার্যকরও হচ্ছে। নিরীহ লোকের অকারণ প্রাণদণ্ডের ঘটনা আপনি কোথায় পেলেন” ?

ব্রাভো মিস্টার লুৎফর রহমান রিটন ! আপনাকেই হারিকেন দিয়ে খুঁজছে বাংলাদেশ। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করেছে এবং আইনের আওতাতেই সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করেছে আদালত। রায় কার্যকরের ক্ষেত্রেও আইনের ভেতরে থেকে সরকার কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। সবকিছু দিনের আলোর মতোই সত্য। কিন্তু আপনি মিয়াভাই রিটন, রাতের অন্ধকারকে হার মানিয়ে “স্বাধীনতা কি নিরীহ লোকের অকারণে প্রাণদন্ড” ? – হায়দারের পুরনো গানেরে সাথে কেন এই ভিত্তিহীন ত্যানা প্যাঁচালেন ? মাথাখারাপ হলে হেমায়েতপুর যেতে পারেন, খরচাপাতি লাগলে আমরা দেবো কিন্তু ক্যালকুলেশন ছাড়াই কথা বলা পরিহার করে দয়া করে মুখে লাগাম লাগান, কীবোর্ড সামলান জনাব ! ‘নিরীহ লোকের অকারণ প্রাণদণ্ড’ বলতে বহু বছর আগে শিল্পী হায়দার হোসেন তখনকার সমসাময়িক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ দিনে-দুপুরে খুন-খারাবিকেই বুঝিয়েছেন। আইন হাতে তুলে নিয়ে নিরীহ লোককে অকারণে হত্যা করা কি ‘প্রাণদন্ড’ নয় জনাব ?

রিটন সাহেব, শেষতক আপনি আপনার ‘শর্টনেস’ ঢেকে রাখতে পারেননি হায়দার হোসেনকে দেয়া খোলাচিঠির শেষাংশে। লিখেছেন, “স্বাধীনতা কি পানির ট্যাঙ্কে গলিত লাশের গন্ধ ? স্বাধীনতা কি হরতাল ডেকে জীবন করা স্তব্ধ ? স্বাধীনতা কি ক্ষমতা হরণে চলে বন্দুক যুদ্ধ ? স্বাধীনতা কি সন্ত্রাসী হাতে মারণাস্ত্রের গর্জন ? স্বাধীনতা কি অর্থের লোভে বিবেক বিসর্জন ? আজ নেই বর্গী, নেই ইংরেজ, নেই পাকিস্তানী হানাদার, আজো তবু কেন আমার মনে শূণ্যতা আর হাহাকার ? আজো তবু কি লাখো শহীদের রক্ত যাবে বৃথা ? আজো তবু কি ভুলতে বসেছি স্বাধীনতার ইতিকথা ? স্যার আপনার গানে রাজাকারের কথা নেই যে ! ঘাতক দালালের কথা ? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা কই ? এককথায় স্বাধীনতাবিরোধীদের কথা কোথায়, এই গানে ? তিরিশ বছর পরের বাস্তবতায় ‘স্বাধীনতা কি রাজাকারদের মন্ত্রী হবার গল্প’ কিংবা ‘স্বাধীনতা কি খুনির গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড্ডীন’ ধরণের একটি চরণও ঠাঁই পায়নি এই গানে। অথচ সেটা পেতে পারতো। তিরিশ বছর পরের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেটাই স্বাভাবিক ছিলো”। – একেই বলে আত্মঘাতী প্রলাপ ‘স্যার রিটন’ ! চলেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাই।

লুৎফর রহমান রিটন স্যার, ‘স্বাধীনতা কি রাজাকারদের মন্ত্রী হবার গল্প’ কিংবা ‘স্বাধীনতা কি খুনির গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড্ডীন’ এই অপ্রিয় সত্য কথাগুলো হায়দারের গানে নেই, কথা সত্য। এজন্য তাঁকে ‘ধিক্কার’ দেবার সৎসাহস আমার রয়েছে, ওপেনলি দিলামও। রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে এবং পতাকা তুলে দিয়ে বিএনপি অবশ্যই পাপ করেছিল এবং সেই পাপের প্রায়শ্চিত্তও করছে এখন। কিন্তু মিয়াভাই আমার, আপনি কি জানেন না, একই পাপ বিএনপি’র আগে করেছিল আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের আগেই অর্থাৎ হায়দারের গানের টাইমফ্রেমের ভেতরেই রাজাকার নুরুল ইসলামকে ধর্মমন্ত্রী বানিয়ে এবং তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ানোর কৃতিত্বের কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া ১০০ পার্সেন্ট হালাল ‘চেতনা ব্যবসা’ নয় কি জনাব ! নাকি সেই কলিকালের কথা ‘কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আমরা করলে’ এটাই হককথা ! রাজাকারদের মন্ত্রী বানাবার বাস্তবতা হায়দারের গানের শোভাবর্ধন করলে বিএনপি’র আগে আওয়ামী লীগই যে ফেঁসে যায়, ভাইটি আমার !

আপনি লিখেছেন, “এই গানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা সুশীল অবস্থান লক্ষ্যণীয়, যে অবস্থান আখেরে জামাতিদের পক্ষে চলে যায়”। বাহ ! কী অসাধারণ আপনার চিন্তা-চেতনা। আপনি বা আপনাদের মতো দলকানাদের জন্যই ‘সুশীল’ শব্দটির বিপরীত শব্দ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ‘দলকানা’। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ ইস্যু জিইয়ে রাখতে পারলেই টিকে থাকবে আপনাদের চেতনাব্যবসা, এটা এখন পাগল বা শিশুর মতো নিরপেক্ষরাও বুঝে। আপনি-আমি আজ মরে গেলে কয়েকদিন স্বরণ করার পরই ভুলতে বসবে সবাই, কিন্তু শিল্পী হায়দার হোসেন বহুকাল বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। “তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি”- গানটি কম করে হলেও তিনশ’ বছর প্রেরণা যোগাবে বাংলাদেশীদেরকে আরো বেশি দেশপ্রেমিক হতে, বাঙালিদের অনুপ্রাণিত করবে ‘খাঁটি বাঙালি’ হতে। শিল্পী হায়দার হোসেন যেহেতু ‘চেতনা ব্যবসায়ী’ নন, তাই দেশপ্রেমিক বাঙালি বা বাংলাদেশী মাত্রই আজ ২০১৫ সালেও প্রাণভরে গাইবেন, “চুয়াল্লিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি”।

পাঠক বন্ধুরা, হাতে যেহেতু অথেনটিক তথ্যপ্রমাণ আছে, তাই খোলাচিঠির ‘বিধি মোতাবেক ভুল-ক্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া’র সুযোগ নেই এখানে। তবে অপ্রিয় কথা ডিরেক্ট বলে যদি প্রিয় রিটন সাহেবকে আঘাত দিয়ে থাকি, সেটার জন্য আগাম দুঃখপ্রকাশ করলে আমার-আপনার হারাবারও যে কিছু নেই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। বিজয় দিবসের আগাম শুভেচ্ছা !