সন্ত্রাসবাদের সাথে মুসলিম কম্যুনিটির কোন সম্পর্ক নেই

বাংলাদেশী মুসলিম সেন্টার পরিদর্শনে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র ব্লাজিও

জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বক্তব্য রাখছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। ছবি- এনা।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বক্তব্য রাখছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: প্রথমবারের মত বাংলাদেশী কম্যুনিটির মধ্যে এলেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। ২০১৩ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম বারের মত বাংলাদেশী কম্যুনিটির সান্নিধ্যে আসেন তিনি। বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে মেয়র ব্লাজিও এসে পৌঁছান সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে। এর আগেই প্রবাসী বাংলাদেশী মুসলিম কমউিনিটি ও নেতাদের পদভারে পুরো মুসলিম সেন্টার ও এর আশপাশ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এর পর পরই শুরু হয় আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের পালা।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সভাপতি ডা. ওয়াহেদুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসাইনের সঞ্চালনায় উপস্থিতি সবার উদ্দেশ্যে নিজের ভাষায় ‘আসসালামু আলাইকুম’ সালাম দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন মেয়র বিল ডি ব্লাজিও।
গত ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার কুইন্সের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে নিউইয়র্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। এসময়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্রের বড় সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বলে জানান মেয়র।
মুসলিম কমিউনিটির নেতাদের দাবির মুখে ঈদে সরকারী ছুটি ঘোষণার পর এবারে সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে হালাল খাবার সরবারহ আরো বাড়ানোর পাশাপাশি, ছোট ব্যবসা, এবং ফুড ভেন্ডারশিপ (ফুটপাতের ব্যবসা) থেকে ট্যাক্স এবং অন্যন্য শুল্ক কমানোর আশ্বাসও দেন নিউইয়র্ক সিটির জনপ্রিয় এ ডেমক্রেটিক রাজনীতিক।
ভয়াল নাইন/ইলেভেন’র কথা স্মরণ করে সিটি মেয়র বলেন, আমি বিশ্বাস করি ঐ সময়ে অনেক নিরাপরাধ মুসলিম অভিবাসীকে নিউইয়র্ক ছাড়তে হয়েছে। এটা আমাদের কাম্য নয়। তিনি বলেন, জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে স্বাগত জানায় নিউইয়র্ক সিটি। তাই তো নিউইয়র্ক এত মহৎ, এত বিশাল। মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবন উন্নয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মূল ধারার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করার জন্য জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারকে ধন্যবাদও দেন ব্লাজিও।

যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের সবচে শক্তিশালী পুলিশ বিভাগ এনওয়াইপিডির কথা উল্লেখ করে ব্লাজিও বলেন, প্রায় ৯ শতাধিক মুসলিম পুলিশ সদস্য নিউইয়র্কের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। যাদের মধ্যে অসংখ্য বাংলাদেশীও রয়েছে। এটাই প্রমাণ করে যে মুসলিমরা নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সন্ত্রাসবাদি কিংবা মুসলিম বিদ্ধেষী মনোভাব বিষয়ে মেয়র বলেন, কেউ যেন ধর্মীয় কারণে প্রতিহিংসা এবং বিড়ম্বনার স্বীকার না হয়, সে জন্য আমার প্রশাসন অঙ্গিকারাবদ্ধ। তবে, মুসলিম কমউিনিটি এবং সিটি গভর্নমেন্ট এর সাথে সম্পর্কন্নয়ন জরুরী বলেও জানান তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া রিফিউজি এবং মুসলিম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন রাজনীতিবিদরা সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন, এসব বিষয়গুলো উড়িয়ে দিয়ে ব্লাজিও আশ্বাস দেন ‘বাংলাদেশী কমিউনিটি ও মুসলিম কমিউনিটির ও তার নিজের এবং সিটি প্রশাসনের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করবেন বলে জানান তিনি। এসময়ে তিনি সাম্যের এবং সব ধর্ম-বর্ণের সম-অধিকারের কথা তুলে ধরেন। নিউইয়র্কে কোথাও কোন মুসলিম কিংবা অন্য কোন সম্প্রদায় ‘হেইট ক্রাইম’র শিকার হলে তা বরদাশত করা হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন সিটি মেয়র। তিনি জানান, সন্ত্রাসীরা গণতন্ত্র চায় না, সহ অবস্থান চায় না, উন্নয়ন চায় না। তাই শান্তি এবং গণতন্ত্র সুসংহত করতে বাংলাদেশী কমিউনিটির ভূমিকা আরো জোরদার করার কথা বলেন মেয়র। এ সময় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীদের সক্ষমতা বাড়াতে ছোট ব্যবসা, ফুড ভেন্ডারশিপ থেকে ট্যাক্স এবং অন্যন্য শুল্ক কমানোর কথা বলেন মেয়র।

এদিকে মেয়র বিল ডি ব্লাজিওকে কাছে পেয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারের পরিচালক এবং মুসুল্লিরা। অনুষ্ঠান শেষে মেয়রের আগমন এবং মুসলিম বিদ্বেষ এর সাম্ভব্য সময়ে বাংলাদেশ তথা মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এসে একাত্মতা প্রকাশ করায় বাংলাদেশীদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন আয়োজক ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা।
উদ্যোক্তারা জানান, মেয়র তাদের মাঝে আসায় অনুপ্রাণিত এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটি। জ্যামাইকা কুইন্স এর দায়িত্বে থাকা ১০৭ ডিভিশন এর ক্যাপ্টেন ও এনওয়াইপিডি এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশী সহকর্মীদের সাথে নিয়ে কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করছেন তারা। মেয়ররের পরিদর্শনে বাংলাদেশী পুলিশ সদস্যরাও তুলে ধরেণ তাদের অনুভূতির কথা। অনুষ্ঠানে জ্যামাইকার মুসলিম নেতারা বাংলাদেশীদের পাশে থাকার জন মেয়র ব্লাজিও কে ধন্যবাদ জানান। পরে মেয়রকে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পক্ষ থেকে।