বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ : পল্লবসহ ছাত্রলীগের ৮০ জনকে আসামি করে মামলা

গুলিবর্ষণ, দলীয় কার্যালয়ে আগুন, ওসিসহ আহত ১০

Beanibazarসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ বিয়ানীবাজার পৌর এলাকায় গত রাতে ছাত্রলীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে থানার ওসিসহ উভয় পক্ষের অন্ততঃ ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক জামাল গ্রুপকে লক্ষ্য করে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পল্লব গ্রুপ বেশ কয়েক রাউন্ড বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পল্লব গ্রুপ ও জামাল গ্রুপ একে অন্যের অফিসে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করেছে। পরে শহরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় পল্লবসহ ছাত্রলীগের ৮০ জনকে আসামি করে থানায় পুলিশ এসল্ট মামলার দায়ের করা হয়েছে। সৃষ্ট ঘটনায় এক গ্রুপ অপর গ্রুপকে দায়ী করেছে।
একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের বিবদমান এ দু’ গ্রুপের কর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে কলেজে দু’ গ্রুপের মধ্যে মৃদু ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার জের ধরে রাত ৮টার দিকে দক্ষিণ বিয়ানীবাজারের জনতা মার্কেটে পাশাপাশি অবস্থিত জামাল গ্রুপ ও পল্লব গ্রুপের পৃথক বৈঠক চলে। রাত ৯ টায় হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আবুল কাশেম পল্লব তার গ্রুপের কর্মীদের নিয়ে জামাল গ্রুপের অবস্থানে এসে গালাগাল শুরু করেন। তখন বিক্ষুব্ধ জামাল গ্রুপের কর্মীদের তাড়া খেয়ে পল্লব নিজ অবস্থানে চলে যান।
এ নিয়ে শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা। সাথে সাথে পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আপোষ আলোচনায় প্রথমে পল্লব গ্রুপ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এর পরপরই জামাল গ্রুপ মিছিল নিয়ে উত্তর বাজারের দিকে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে পল্লব গ্রুপের কর্মীরা প্রথমে জামাল গ্রুপের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা অফিসে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাংচুর করে।
পরে পল্লব গ্রুপের কর্মীরা উত্তর বাজারের দিকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে থাকে। এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হন। আহত হন তদন্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমানসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তা। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, উত্তর বাজার থেকে মিছিল নিয়ে ফিরে জামাল গ্রুপের কর্মীরা পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে যেতে চাইলে বারবার পুলিশী বাধার সম্মুখিন হয়। এক পর্যায়ে তারা দলীয় কার্যালয়ে যায় এবং ভাংচুর দৃশ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এ সময় পল্লব গ্রুপকে লক্ষ্য করে তারা ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে এবং বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পল্লব গ্রুপের কার্যালয় ভাংচুর করে।
রাত ১২টায় পর্যন্ত জামাল গ্রুপের কর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে। তবে, পল্লব গ্রুপের কর্মীদের তাদের কার্যালয় বা আশপাশ এলাকায় দেখা যায়নি।
অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি এলাকায় বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিয়ানীবাজার থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফজলুল আলম বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জামাল ও পল্লব গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে পল্লব গ্রুপের আঘাতে পুলিশ কর্মকর্তারা রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানার এসআই মিজান বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
এসআই ফজলুল বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। এরপরও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে দাঙ্গা পুলিশসহ টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জামাল গ্রুপ বা পল্লব গ্রুপ কারোরই বক্তব্য পাওয়া যায়নি।