নাছিমা হত্যা প্ররোচনার ন্যায় বিচার দেখে যেতে চায় তার পরিবার
তপু সারোয়ার: দাউদকান্দি উপজেলার সুন্দলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের আসন্ন ২০১৬ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থী নাছিমা আক্তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের অত্যাচার সইতে না পেরে আত্মহনন করে গত ৬ জুলাই। আত্মহত্যার পূর্বে ও এর আগে চিরকুট ও ডায়েরীতে তার উপর নির্যাতনের তথ্য লিখে যান আরও লিখে যান তার মৃত্যুর কারণ এবং কারা তার মৃত্যুর জন্য দায়ী।
এর আগে নাছিমা আক্তার তার উপর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য স্থানীয় সালিশিদের কাছে বার বার বিচার চেয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ন্যায় বিচার পাইনি বলে তারই হাতের লেখা চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে।
নিহত নাছিমা আক্তার মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখেন, “পৃথিবীতে আমি ন্যায় বিচার চেয়ে ও পাইনি। আমার এই মৃত্যুর জন্য আমার শ্বশুর মিলন, শ্বাশুরী শেফালী, স্বামী আলাউদ্দিন, আমার ফুফু শ্বাশুরী পিয়ারা, চাচা শ্বশুর দুলাল, জেঠা শ্বশুর শহীদ দায়ী। এই পৃথিবীতে বিচার না পেয়ে চলে গেলাম”।
নিহত নাছিমা আক্তারের বাবা রাসেল মিয়া জানান, তার মেয়ের সঙ্গে পার্শবর্তী বাড়ির মিলন মিয়ার পুত্র আলাউদ্দিনের সাথে ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মেয়ের জামাই আলাউদ্দিনকে প্রতি মাসে হাত খরচ বাবদ কিছু টাকা দিয়ে আসছি। পরে আলাউদ্দিন তার মেয়েকে যৌতুক বাবদ ২ লাখ টাকা এনে দিতে বলে। দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় তার মেয়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে আলাউদ্দিনসহ তার পিতা-মাতা, চাচা, জেঠা ও ফুফু শ্বাশুরীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে নিহত নাছিমা আক্তার বাবার বাড়ি চলে আসে। গত ১লা জুলাই নিহত নাছিমার স্বামী আলাউদ্দিন তার লোকজন নিয়ে নাছিমার বাড়িতে এসে জোরপূর্বক মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। আলাউদ্দিন তার বাড়িতে নিয়ে সারারাত নাছিমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে বলে জানান নিহত নাছিমার পরিবার । পরে ২ জুলাই নাছিমার মা সেলিনা বাদি হয়ে দাউদকান্দি থানায় অভিযোগ দায়ের করলে, ওই দিনই পুলিশ নাছিমা আক্তারকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে দাউদকান্দি গৌরীপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যের কোলে ঢলে পড়ে, পুলিশ এ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের তদবিরের কারনে পুলিশ তদন্তে প্রভাব খাটায় তদন্তে চলে আসে ধীর গতি, এমনটাই জানায় নাছিমার পরিবার। তারা আরও জানায় থানা পুলিশ তাদের মামলাটি প্রথমে রেকর্ড পর্যন্ত করতে চাইনি ।
২৬ জুলাই ২০১৫ পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং/০৩) এর ৯ক/৩০ ধারায় নারীকে হত্যা প্ররোচনা ও সহায়তা করার অপরাধে মামলা রেকর্ড করে দাউদকান্দি থানা পুলিশ ।
ইতিমধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুইজন বদলী হয়ে বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রঞ্জন। মুঠোফোনে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সে ফোন ধরেনি।
নিহত নাছিমা আক্তারের মা সেলিনার অভিযোগ আসামীরা তাদের অব্যাহত ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। মেয়ের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আসলাম চেয়ারম্যান বিচারের কথা বলে নানাভাবে সময় ব্যয় করে আমার মেয়েকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। পরে আসলাম চেয়ারম্যান আসামীদের বাঁচানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেলিনা আরও বলেন, আমি আমার মেয়ের হত্যার ন্যায় বিচার চাই।