টরন্টোতে ‘ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ইনিশিয়েটি’ এর আয়োজন: “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে” – বাংলাদেশের কথা
সদেরা সুজন সিবিএনএ।। টরন্টো শহরে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ এলাকার তরুণ সমাজকে সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে, এবং তাদের মাঝে নেতৃত্বগুন ও নিজের শিকড়ের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসাকে আরো সংহত করার স্বপ্নকে বুকে নিয়ে বাংলাদেশ সেন্টার এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসেস (বি.সি.সি.এস), টরন্টো এর অঙ্গ সঙ্গঠন হিসাবে “ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওয়াই.ই.আই)” এর আত্মপ্রকাশ হয় ২০১৫ এর শুরুর দিকে। কমিউনিটির কিছু তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা এর পরামর্শক হিসাবে থাকলেও এই সংগঠনটির সদস্য এবং নেতৃত্ব সম্পূর্ণই কমিউনিটির স্কুল কলেজ পড়ুয়া তরুন প্রজন্মের হাতে। অল্প সময়েই বয়স্কদের বিনামূল্যে কম্পিউটার শিক্ষার কোর্স পরিচালনা এবং অন্টারিও সরকার ও মূলধারার বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মিলে মসজিদে/মন্দিরে অর্গান ডোনেশনে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচী পরিচালনাসহ বিভিন্ন জনকল্যানমূলক কাজে সংগঠনটির ব্যাপক সম্পৃক্ততা কানাডার মূলধারার বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠনের নজরে এসেছে এবং প্রশংসা কুড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ই নভেম্বর বি.সি.সি.এস মিলনায়তনে আয়োজিত হয় “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে” অনুষ্ঠানটি। উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মকে বাঙালীর হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। অনুষ্ঠানে শিশু কিশোরদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন কবি আসাদ চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ “ডেইলি ষ্টার” এর কলাম লেখক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সমাদৃত “বাংলাদেশ – পলিটিকাল ল্যান্ডস্কেপ” গ্রন্থের রচয়িতা ডক্টর মোজাম্মেল খান; এবং বাংলাদেশের ঘাসফুল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত “আলো আঁধারের একাত্তর” গ্রন্থের রচয়িতা মুক্তিযোদ্ধা সেরাজুল কাদের। দেশাত্মবোধক গান আর কবিতায় সাজানো এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয় টরন্টোতে বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত শিশু কিশোররা। মিফতাহুল মোহনা আর রাইদাহ ফায়রূজ এর দুটি একক এবং সিম্ফনি সঙ্গীত একাডেমীর শিক্ষার্থীদের দুটি দলগত পরিবেশনা, আর রূপক রায় এর আবৃতি সবাইকে মুগ্ধ করে।
কবি আসাদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে শিশু-কিশোরদের জন্য সহজ ভাষায় বাংলাদেশের বুকে হাজার বছরের পুরানো বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিতে বাঙালীর অসাধারণ সব কীর্তি, নোবেল বিজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের থেকে শুরু করে বাহান্ন সালের ভাষা আন্দোলন, একাত্তর এর স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা তুলে ধরেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর অসামান্য ত্যাগ এর কথা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতার গল্প, মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে লক্ষ লক্ষ মানুষের মরণপণ সংগ্রাম ও সীমাহীন আত্মত্যাগের কথা উপস্থিথ শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের আলোড়িত ও আবেগপ্রবণ করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা সেরাজুল কাদের মিলনায়তনের বড় পর্দায় স্থিরচিত্র আর কবিতার মিশেলে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য উপস্থাপনা প্রদর্শন করে বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী অনেক মুহূর্তকে উপস্থিথ শিশু-কিশোরদের চোখের সামনে নিয়ে আসেন। ডক্টর মোজাম্মেল খান তাঁর বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পটভূমি, বিভিন্ন বাধা বিপত্তি এবং মানবতার সম্মানের জন্য এই বিচারের প্রয়োজনীয়তার কথা সহজ ভাষায় শিশু-কিশোরদের সামনে তুলে ধরেন। বাঙালী অধ্যষিত ড্যানফোর্থ এলাকার সিটি কাউন্সিলর জ্যানেট ডেভিস তাঁর বক্তব্যে বহু ভাষা আর সংস্কৃতির দেশ কানাডাতে শিশু-কিশোরদের জন্য এমন একটি অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়ার জন্য বি.সি.সি.এস এবং ওয়াই.ই.আই এর নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে ওয়াই.ই.আই এর পক্ষ থেকে সমাজসেবামূলক কাজে ব্যাপক অংশগ্রহনের জন্য ভিক্টোরিয়া পার্ক কলেজিয়েট স্কুল এর ছাত্রী মিফতাহুল মোহনা এবং স্যার উইলফ্রেড লরিয়ের কলেজিয়েট স্কুল এর ছাত্রী রাইফাহ নাজাহাহ খান কে “ওয়াই.ই.আই ভলান্টিয়ার অফ দ্যা ইয়ার” পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ওয়াই.ই.আই এর নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদকেও সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজন, ব্যবস্থাপনা ও সঞ্চালনার দায়ীত্বে ছিলেন ওয়াই.ই.আই (YEI) এর ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট এবং টরন্টোতে প্রস্তাবিত স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মানকল্পে গঠিত সংগঠন (OTIMLDM) এর সাধারণ সম্পাদক রিজওয়ান রহমান। তাকে সহযোগিতায় ছিলেন বি.সি.সি.এস এর পরিচালক মন্ডলীর সভাপতি হাসিনা কাদের, পরিচালক মন্ডলীর সদস্য ডক্টর মাহবুব রেজা, টরন্টোর জনপ্রিয় ফটোগ্রাফার শাহাদাত হোসাইন পলাশ এবং সঙ্গীত শিল্পী মুক্তি প্রসাদ।