লন্ডনে ইউকে জমিয়তের বিরাট জনসভা

রাজনীতিতে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে উম্মাহর নেতৃত্বদান উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মুসলমানদের দ্বীনি দায়িত্ব

2 3৭ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে পূর্বলন্ডনের ওয়াটার লিলি হলে অনুষ্ঠিত এই বিশাল গণ সমাবেশে বাংলাদেশ ইউরোপ ও পাকিস্তানের শীর্ষ জমিয়ত নেতৃবৃন্দ, সর্বস্তরের উলামায়ে কেরাম, সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং আপামর মুসলিম জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করেন। জনাকীর্ণ এই জনসভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব ও সাবেক এমপি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মাওলানা শাহিনূর পাশা চৌধুরী। জমিয়তে উলামা ইউকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা শুয়াইব আহমদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তান এর সেক্রেটারী জেনারেল ও কেন্দ্রীয় সকারের মন্ত্রী মাওলানা আবদুল গাফুর হায়দরী। বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ সিনেটর হাফিজ হুসাইন আহমদ, জমিয়তের প্রবীন নেতা মাওলানা আবদুস শহীদ গলমুকাপনী, জমিয়তে উলামার উপদেষ্টা মাওলানা শায়খ আসগর হোসেন, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা শায়খ তরীকুল্লাহ, মাওলানা মাওদুদ হাসান, জমিয়তে উলামা ইউকের সহ সভাপতি মুফতি আবদুল মুনতাকিম, শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মুর্শেদ, আলহাজ্ব শামছুজ্জামান চৌধুরী, আলহাজ আবদুল জলিল চৌধুরী, মাওলানা আবদুর রহমান (হল), আলহাজ্ব সাজিদ আলী মেনন, আলহাজ্ব সদরুজ্জামান খান, কাউন্সিলর আয়াস মিয়া, মাওলানা আবদুর রব, জমিয়তে উলামা ইউকের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, কবি আবু সুফিয়ান চৌধুরী, রচডেল শাখা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা সৈয়দ জুনায়েদ আহমদ, জমিয়তে উলামা ইউকের ট্রেজারার হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, মাওলানা আশফাকুর রহমান, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা শামীম আহমদ, হাফিজ মুশতাক, মাওলানা মাসুদুল হাসান, মাওলানা আবদুল্লাহ ও মাওলানা ফখরুদ্দীন বিশ্বনাথী, মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তাগণ বর্তমান মুসলিম বিশ্বের করুণ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন যে দুনিয়ার কোন অপশক্তি ইসলাম মুসলমান এবং মসজিদ মাদ্রাসার অস্তিত্বকে শেষ করতে পারবেনা। ইসলাম টিকে থাকার জন্য এসেছে। সুস্থ, গঠন মূলক রাজনীতিতে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে উম্মাহর নেতৃত্বদান উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মুসলমানদের দ্বীনি দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা আমাদের পতনের কারণ। বক্তাগণ জমিয়তে উলামা বিশ্বব্যাপী উত্থান ও প্রভাবশালী দ্বীনি খেদমতের বিবরণ তুলে ধরে উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মুসলমানগণকে জমিয়তের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী বলেন বাংলার যমীনে মসজিদ মাদ্রাসা, ইসলাম, মুসলমান, কোরআন-হাদীস এবং সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে যত ষড়যন্ত্রই করা হোক, কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। জুলুম নির্যাতন, বিষোদগার, হত্যা, গুম, আল্লামা আহমদ সফি সহ বরেণ্য উলামায়ে কেরাম নিয়ে অবমাননাকর ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কোন কিছুই ইসলামের অব্যাহত বিজয় যাত্রাকে স্তদ্ধ করতে পারে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন বিশ্বের সর্বত্র ধর্মীয় রাজনীতি বিদ্যমান রয়েছে, অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি করা যাবে না, এমন ষড়যন্ত্র বরদাশত করার প্রশ্নই আসে না, ভারত বর্ষের স্বাধীনতার পুরো ইতিহোস তুলে ধরে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন শায়খুল হিন্দ হযরত মাহমুদুল হাসান (রাহ:), শায়খুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী ও জমিয়তে উলামা’র কুরবানী না হলে স্বাধীনতার সূর্য উপমহাদেশে উদয় হত না। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন যে, উলামায়ে কেরাম এবং দাঁড়ি টুপি ওয়ালা হলেই স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা রাজাকার গালি দিবেন না। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জানপ্রাণ আজো সবার আগে কুরবান করার মত মানসিকতা কেবল উলামায়ে কেরামের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। সাবেক এমপি মাওলানা শাহিনূর পাশা চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই জন্য স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি যে এখানে ৯৫ ভাগ মুসলমানদের বৈধ ও গণতান্ত্রিক সেন্টিমেন্টের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ইসলাম ও মুসলমানদের মৌল বিশ্বাস নিয়ে চল্ চাতুরি ও গভীর ষড়যন্ত্র করা হবে। আমরা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামী স্বাতন্ত্র রক্ষার জন্য বৈধ, শান্তিপূর্ন ও গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। এ অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার কোন অধিকার কারো নেই। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের জেনারেল সেক্রেটারী কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান মন্ত্রী, মাওলানা আবদুল গাফুর হায়দরী তাঁর বক্তব্যে বলেন উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মুসলমানদের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতা, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ সিনেটর মাওলানা হাফিজ হুসাইন আহমদ তাঁর বক্তব্যে বলেন আমি বিশ বছর পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ছিলাম, স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের উপর মারাত্মক জুলুম করা হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশকে এক পাল্লায় এবং পূর্ব পাকিস্তানের একটি প্রদেশকে অপর পাল্লায় রেখে অসংগতিপূর্ণ পরিমাপ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। অথচ কালিমায়ে তায়্যিবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহর স্লোগান নিয়ে যখন মুসলমানদের জন্য উপমহাদেশে আলাদা রাষ্ট্র কায়েমের প্রশ্ন এসেছে তখন বাঙ্গালী জাতি তাদের ভাষা, বর্ণ, কালচার সব কিছু ভূলে গিয়ে পাকিস্তানের জন্য সর্বাগ্রে ত্যাগ তীতিক্ষার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। কিন্তু এই কোরবানী কে মূল্যায়ন করা হয়নি। আজ প্রায় ৪৪ বছর। আমি অকপটে লজ্জিতবোধ করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য। জানিনা, আমি লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর আমার এই বক্তব্যের কারণে আমাকে নিয়ে কে কি বলবে। তবে একটি বিষয়য়ের প্রতি মনযোগ আকর্ষণ করতে চাই, পাকিস্তানে স্যাকুলার পার্টিগুলোর শত দাপট থাকা সত্ত্বেও সেখানকার উলামায়ে কেরাম আজো এমন পজিশনে আছেন যে আইনের ইসলামী দফাগুলো এবং সংবিধানের ইসলামী চেহারার দিকে কেউ কোন দিন বাকা চোখে তাকাবার সাহসও করতে পারবেনা। বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা ও উলামায়ে কেরামের প্রভাব আরো বেশি হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে উলামায়ে কেরামের স্বরব ও প্রভাব সৃষ্টিকারী অংশগ্রহণ না থাকায় আজ বড় করুণ পরিণতি দেখতে হচ্ছে।