সিলেটে কঠোর নজরদারিতে জামায়াতের প্রতিষ্ঠান
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্টানের উপর কঠোর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে বসে বিভিন্ন অপকর্মের ছক কষা হয়। তাই এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্টানের তালিকাও প্রকাশ করা হয়। সে প্রকাশিত তালিকাতে সিলেটে জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্টান সমূহের নাম প্রকাশিত হয়। এদিকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বেশ কিছু এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি নিরাপত্তা দিচ্ছে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সূত্রে জানা যায়, সিলেটে জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্টান গুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা পাওয়ার পর পরই প্রতিষ্টান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে নজরদারিতে রেখেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এমনকি কারা কোন প্রতিষ্টানের সাথে জড়িত আর প্রতিষ্টান গুলো কারা পরিচালিত করছেন এবং তাদের অর্থের উৎসও কারা যোগান দিচ্ছেন সেসব তালিকা তৈরী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়াও ২৯ অক্টোবর জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পলী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে পাঠানো আদেশে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ চার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবের কাছে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন নথিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নামে এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এনে তা নিজেদের সংগঠনের কাজে ব্যয় করার পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য করার কাজে ব্যবহার করছে।
সিলেটে নজরদারির আওতায় আনা জামায়াত-শিবির পরিচালিত প্রতিষ্টানগুলো হচ্ছে-ইসলামী ব্যাংক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, রেটিনা, ইবনে সিনা মেডিকেল হসপিটাল, মা-মনি ক্লিনিক, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট ক্যাডেট মাদরাসা, সিলেট রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মিশন ডেভেলপারস, সোনারগাঁ হাউজিং, ইয়ুথ গ্রæপ, মিশন গ্রæপ, আল-হামরা শপিং সেন্টার, রাজমহল, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কো.লি, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অনাবিল, সৌদিয়া, আবাবিল, ছালছাবিল, ফুয়াদ আল খতিব মেডিকেল ট্রাস্ট, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, সিএনসি, ফুলকুড়ি আসর, ফোকাস, কনসেপ্ট, ওমেকা। এছাড়াও সিলেট নগরীতে পরিচালিত জামায়াত-শিবিরের কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও তাদের সুদি ব্যবসার তালিকা তৈরী করে সেগুলোকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নির্দেশনা পাওয়ার পর পরই গোয়েন্দা পূর্বের তৈরী তালিকাটি একটু হালনাগাদ করতে হয়েছে। তালিকার বাহিরেও নামে-বেনামে গড়ে উঠা জামায়াত- শিবিরের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্টানের উপর কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়াও তিনি আরো জানান, শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কমর্রত জামায়াত-শিবিরপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সক্রিয়। জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমিতি থেকে সংগঠনের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি জঙ্গিদেরও অর্থায়ন করা হয়।
সিলেট মেট্রাপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) রহমত উলাহ জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি হওয়ার পর সিলেটে জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। এদিকে আজতের হরতালকে ও রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত যে কোন ধরণের নাশকতা মূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে সন্দেভাজন ব্যক্তিদের তলাশী করা হচ্ছে।