অবশেষে সেই বির্তকিত ওসি আব্দুল হাই বদলী : জনমনে স্বস্তি

O.C Haiসুরমা টাইমস ডেস্কঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির নির্দেশে অবশেষে বহু বির্তকিত ওসি আব্দুল হাইকে বদলী করা হয়েছে । সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল হাইয়ের বিরোদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। তবুও অদৃশ কারিশমায় ওসি আব্দুল হাই ছিলেন বহাল তবিয়্যতে। গোয়াইনঘাট থানার শতাধিক নিরীহ জনগণের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আই.জি) কে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে গত ০৯/১০/১৫ইং নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ স্বম্বলীত আবেদনটির প্রেক্ষিতে পুলিশ হেড কোয়ার্টার তাকে বদলীর আদেশদেন। এই আদেশ গত কাল গোয়াইনঘাট থানায় এসে পৌছেছে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানিয়েছে। তার বদলীতে গোয়াইনঘাট থানার মানুষ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছে বলে জানাযায়। সুত্র জানায় এর আগে গত ৩১/৮/১৫ আইজিপি’স কমপ্লেইনটস মনিটরিং সেলে ও ১৬/০৫/১৫ইং এ্যাডিঃডিআইজি(ডিসিপ্লিন) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স আরো দুটি অভিযোগ করেন একাধিক ভ’ক্তভোগী। সুত্র জানায়, ওসি আব্দুল হাই ওই থানায় যোগদানের পর থেকে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, চোরাচালানি, ছিনতাকারীসহ নানা অপরাধে জড়িত সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তার কাছে বিচারের আশায় থানায় গেলে বিড়ম্বনার শিকার হন। ৫ জানুয়ারির পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় গ্রেফতার বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই সময় বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে আটক করার পর থানায় না নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন তিনি। ওসি আব্দুল হাই অর্থের পেছনে ছোটায় থানার সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত ২-৩ মাসে থানা এলাকায় প্রায়২০টি র্দুর্ধষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা আর জুয়া খেলা যেন ওই সীমান্ত এলাকার স্বাভাবিক চিত্র। এসব অপরাধ কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এছাড়াও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা রেকর্ড করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন সাধারন মানুষের কোথায়ও গিয়ে দাড়াঁবার স্থান থাকে না। ওসি আব্দুল হাইয়ের লাগামহীন দূর্নীতির অভিযোগ উর্ধ্বতন প্রতিটি দপ্তরে একাধিকভার লিখিত ভাবে অভিযোগ করার পরও অজানা কারনে তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়্যতে। ওসি আব্দুল হাইয়ের কাছে থানা বানিজ্য কেন্দ্র জনগণ হয় পণ্য। উক্ত থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা,চোরাচালান, জুয়ার আসর, যাত্রা-পালা ,ভারতীয় তীর লটারী( জুয়া), পাথরখনি, জলমহালের দখল ,অবৈধ স্টোন ক্রাশার মিল, চুরী-ডাকাতি, ড্রেজার মিশিন, সরকারী ভূমি দখল, পাহাড় কাটা,ও এহেন কোন অপকর্ম নেই যা হতে নিয়মিত মাশোহারা পান না তিনি। আইন হয়েছে উনার হাতে মানুষকে নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার। যার প্রমাণ গত ৩সেপ্টম্বর সিলেট পুলিশ সুপার ,বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন গোয়াইনঘাট থানার জাফলং এর বাসিন্ধা ওমর আলী। তিনি তার অভিযোগে উলে¬খ করেন গত ২৭/০৮/২০১৫ইং ওসি আব্দুল হাই ওমর আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে ৩,৫০,০০০(তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা চাঁদা দাবী করেন এবং টাকা না দেওয়ায় তাকে ১৫বার ইলেকট্রিক শর্ট দেওয়া হয়। কোন মামলায় কত টাকা দিতে হয় তা তার নিয়োজিত দালালরা সবাই জানে। শুধু তাই নয় , তার চাহিদা মতো টাকা না দিলে বাদীকে মামলা শেষ না করার জন্য হুমকী দিয়ে থাকেন এবং হুমকী দিয়ে সাধারন মানুষকে মামলার বাদী/অভিযোগকারী সাজানো হয়। মামলার ভয়ে পুরুষ শূন্য এই এলাকার বহু গ্রাম। নিরপরাধ মানুষ ওসির অন্যায় দাবী মিটাতে না পেরে মিথ্যে মামলার দায় নিয়ে ঘরছাড়া,ফেরারী জীবন অতিক্রম করছেন। মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বীরকুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। পাশা-পাশি একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সহ- সভাপতি। অপরাধি চক্রের বিরোদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করার কারনে তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে একটি মহল মাত্র ২০,০০০(বিশ হাজার ) টাকার বিনিময়ে ওসি আব্দুল হাইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় নারী নির্যাতনের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হাজতবাস করান ঐই শিক্ষক ও সাংবাদিক নেতাকে। ওসি আব্দুল হাই কোন ধরনের তদন্তছাড়াই মামলাটি রেকড করেন। এর পর মামলাটি ফাইনাল রির্পোট দিতে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করেন ওসি আব্দুল হাই ও তার আস্তাবাজন এস.আই জাকিরে মাধ্যমে। ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি মোবাইল ফোনে রেকর্ড রয়েছে। এই টাকা না দেওয়ায় ঐ শিক্ষককে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে জীবন দূর্বিষহ করে তোলা হয়। মামলার কারনে সরকারী স্কুলে যোগদান করতে পারতেছেন না তিনি। ফখরুল ইসলামের অপরাধ ওসি আব্দুল হাইয়ের চাহিদা মতো ৫০,০০০ হাজর টাকা ঘুষ না দেওয়া এবং তার বিরোদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা। বিগত ১৩/১২/২০১৪ইং স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় অবস্থিত অবৈধ স্টোন ক্রাশার মিল উচ্ছেদ করতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল। ক্রশার মিলের মালিক সন্ত্রসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদে আসা সরকারি গাড়ি ভাংচুর করেন। এ ঘটনায় ৩৫ জনকে এজহার নামীয় আসামী করে অজ্ঞাত ৩০০/৪০০ জনকে আসামী করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলাকে পুজিঁ করে গ্রেপ্তার বানিজ্যে নামেন ওসি আব্দুল হাই। সাথে উনার আস্তাভাজন এস.আই. ইউনুস। এজহার নামীয় আসামীদের বাদ দিয়ে গ্রেপ্তার করতে থাকেন শত শত নিরীহ মানুষ। নিজের সর্বস্ব উজাড় করে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে ওসির কবল থেকে মুক্তি পান অনেকে। এজহার নামীয় ২৫ জনকে বাদ দিয়ে নিরীহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ২৩ জনের নামে চার্জশীট দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার ও চার্জ শীট হতে অব্যাহতি, সব মিলিয়ে কোটি টাকার বানিজ্য করেন ওসি আব্দুল হাই। এ ঘটনাটি পি আই বি এর তদন্তাধিন রয়েছে। এ ঘটনার দায়ে ইতো মধ্যে ক্লোজড হন এস.আই ইউনুস আলী। কিন্তু বহাল তবিয়্যতে থেকে রাম রাজত্ব চালাতে থাকনে ওসি আব্দুল হাই। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কয়েক জন প্রতিবাদ করলে তাদেও নামে একাধিক শিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। বিগত নভেম্বরে গোয়াইনঘাটের তুবরী শিলচান জলমহালের ইজারা নিয়ে বিরোধ হয় দু’পক্ষের মধ্যে। এই ঘটনাকি পুজিঁ করে ইজারাদার দের কাছ থেকে দশ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে সৃজন করে মিথ্যে পুলিশ এসল্ট মামলা। আবারো গ্রেপ্তার আবারো অব্যাহতি। আবারো বানিজ্য। সিলেটের জৈন্তাপুরের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার বেলাল। তার অপরাধ তিনি ওসি আব্দুল হাইয়ের অন্যায়ের চিত্র তার লেখনির মাধ্যমে সংবাদপত্রে তুলে ধরেন। তার উপর নেমে আসে গাড়ি পোড়ানো মামলার খড়গ। সেই শুরু একর পর এক মামলা বাড়ছে। মুক্তি কোন পথে জানা নেই সাংবাদিক বেলালের। আবারো জাফলংয়ের সরকারী গাড়ি ভাংচুরের মামলার রেশ । সেই মামলার আসামী নিরীহ ব্যবসায়ী বিলাল আহমদ প্রতিবাদ করছিলেন। করেছেন একাধিক সংবাদ সম্মেলন। এতে পড়েন ওসি আব্দুল হাইয়ের রোশানলে। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তার মালার তালিকা। রেহাই পান নি তার গাড়ির চালকও। একে একে তিনটি মামলার দায় বয়ে বেড়াচ্ছেন এই গরিব গাড়ি চালক। ওসি আব্দুল হাইয়ের অন্যায় বহুবিধ। একের পর এক প্রেস কনফারেন্স ,মানববন্ধন, মৌন মিছিল, উর্ধ্বতন মহলে দরখাস্ত ,স্মারক লিপি প্রদান সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ স্বম্বলীত আবেদনটির প্রেক্ষিতে অবশেষে রেহাই মিলছে এই জনপদবাসীর। এই ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) জানান,এক সাথে তিন জন ওসি’র বদলী হয়েছে। এর মধ্যে ওসি আব্দুল হাই একজন। গোয়াইনঘাটের ওসি আব্দুল হাইকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে , এছাড়া কোম্পানিগঞ্জের ওসি দেলওয়ারহুসেনকে গোয়াইনঘাটে এবং সুনামগঞ্জ জেলা থেকে ওসি বায়েস আলমকে কোম্পানিগঞ্জের ওসি হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে।