জুড়ীর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ও আ’লীগ আহবায়কের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারে সংবাদ সম্মেলন

press confarens.17.11.2015মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা আজির উদ্দিন আহমেদের নানা অপরাধ-অপকর্ম, নির্যাতন-হয়রানীর প্রতিকার চেয়ে মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আজ ১৭ নভেম্বর উপজেলার শিলুয়া গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত স্থানীয় গোয়ালবাড়ী ইউপি’র সাবেক সদস্য প্রয়াত দীগেন্দ্র কুমার দেবের পুত্র দিবেন্দু দেব টলু। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান- একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রিীয় ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ এবং উপজেলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বনে গেছে। তার প্রয়াত পিতা দীগেন্দ্র কুমার দেব ২০/০৪/১৯৬০ইং থেকে ৩১/০৩/১৯৭২ইং পর্যন্ত মোট ১৩ বছর গোয়ালবাড়ী ইউপি’র সদস্য ছিলেন। তিনি আক্ষেপ করে জানান- দূর্ভাগ্য তাদের, দূর্ভাগ্য তার পরিবারের। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে তাদেরকে নিজ গ্রামছাড়া হতে হয়েছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিযুক্ত শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ওবর্তমানে জুড়ী উপজেরা আওয়ামীলেিগর আহবায়ক আজির উদ্দিন আহমেদ ও তার কতিপয় সহকারীদের দ্বারা। আজির উদ্দিন আহমদ ও তার পরিবার তার পিতৃব্যের যৌথ সম্পত্তির সাথে তার ইউপি সদস্য পিতার নামীয় সম্পত্তি অর্পিত ঘোষিত করায়- যা সম্প্রতি বেআইনী ঘোষিত হয়েছে আদালতে। সেই সম্পত্তির কিয়দংশ ১৯৭৩ইং সালে উক্ত আজির উদ্দিনের বড়ভাই মখলিছ উদ্দিন ও ভাগ্না ইসলাম উদ্দিন গংদের নামে বন্দোবস্ত নেয়া হয় এবং বনোবস্তের বদৌলতে অনেক বেশী ভূমি আত্মসাৎ করে তাদের বাড়ির সামনে রাইছ মিল বসিয়েছিল- যা পরে উচ্ছেদ করে পুলিশ। উল্লেখ্য- অর্পিত সম্পত্তি ঘোষনা বে-আইনী ঘোষিত হবার পর তার জেঠা প্রতুল চন্দ্র দেব ১৯৭৩ইং সালে সিলেটের ২য় সাবজজ আদালতে মামলা (নং- টিএস ১৩৩/১৯৭৩ শত্রু সম্পত্তি সংক্রান্ত) দায়ের করেন এবং মামলা চলাকালেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন- যে মামলাটি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন হবার পর কার্যকারিতা হারায়। আজ পর্যন্ত আমাদের পরিবারের উপর যে সকল দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আক্রমণ হয়েছে, এর পিছনে আছে এই আজির উদ্দিন এবং তার পরিবার। তার এই ঘৃন্য ভূমিকার কারণ হলো- এরা মূলতঃ বাংলাদেশী নয়। তার দাদার বাড়ী ভারতের করিমগঞ্জ জেলার (কাছাড়) পাথারকান্দি থানায় এবং নানার বাড়ি উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা থানার পুতনী গ্রামে। ১৯৫০ সালের দিকে স্ত্রী-সন্তানসহ তার পিতা ইছবর আলী ভূমি বিনিময় করে রিফিউজি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। কলহ ও মারামারির কারণে রিফিউজি প্রতিবেশি ও সহঅংশীদার আং হাছিবের সাথে থাকতে না পেরে লোচন এর বাড়ী কিনে এরা স্থানীয়দের সাথে মিশে যায়। আজির উদ্দিনের দাদারা সবাই এখনও ভারতের করিমগঞ্জ জেলায় তাদের আদি বাড়ীতেই বসবাসরত। তাই আজির উদ্দিনের মানসিকতা দ্বিজাতীয়তা তত্বের মানসিকতার সাথে সম্পর্কিত। সেই মানসিকতা প্রসূত াতিগত বিদ্বেষের কারণে আজির উদ্দিনরা দিবেন্দু দেব টলুদের সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তিভূক্ত করিয়ে তার বড়ভাই মখলিছ উদ্দিন এবং ভাগনা ইসলাম উদ্দিন তা বন্দোবস্তো নেয় এবং বন্দোবস্তীয় ভূমি হিসেবে বন্দোবস্ত বহির্ভূত দিবেন্দু দেব টলুদের ভূমিতে রাইছমিল বসায়- যা পরবর্তীতে পুলিশী এ্যাকশনে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় (মিস মামলা নং ৫২/০৫ (জুড়ী)। সম্প্রতি উক্ত স্থানে জনৈক আং হাসিম বেচা একটি টং ঘর বানিয়ে দোকাম এবং এর পাশে গরুছাগলের একটি অবৈধ খোঁয়াড় নির্মাণ করেছে। এ ঘটনায় মামলা হলে তদন্তকারী দল ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। আজির উদ্দিন রূপী ‘নূর হোসেন’ এর হাত থেকে রক্ষা পেতে মানবতার খাতিরে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দিবেন্দু দেব টলু সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান। আজির উদ্দিনের উত্থানের বিস্ময়কর কাহিনীর বর্ণনায় দিবেন্দু দেব টলু জানান- তার বাড়ি সীমান্তের পৌনে এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সে সহজেই ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানে ঘোরাফেরা করত। ১৯৯৮ সালে হঠাৎ শোনা যায় সে নাকি মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সে রাষ্ট্রিীয় ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। অথচ শিলুয়া গ্রামের পাশের মাগুরা গ্রামের শহীদ তৈয়ব আলীর সন্তানরা আজ দেশছাড়া। উপজেলার বাবু সিংহের গাঁও সাগরনাল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহিদ তার পিতা শহীদ জামির মোহাম্মদ ওরফে জামিল আহমদের হত্যাকারী রাজাকার ডাকাইত মকলুকে নিজ বাড়িতে আশ্রয়-পোষণ ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বণে গিয়ে রাষ্ট্রীয় ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিগত ১৫/০৩/২০১০ইং ও পুণরায় ১৭/৫/২০১০ইং তারিখে আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনির উদ্দিন বাবুল (গেজেট নং ১৪৬৩, মুক্তি নং ০৫০৪৪০০৭৪, ভারতীয় নং- ২৮২৪১), তাকে পাকিস্তানপন্থী, রাজাকার বান্ধব, হুজি বা হরকাতুল জিহাদী জঙ্গী, ভারতীয় জঙ্গী উলফা ইত্যাদির এজেন্ট ও টাকার বিনিময়ে এদের হয়ে কাজ করা এবং ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বণে যাওয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। ১৯৭৪ সালে রক্ষী বাহিনী তার ভাই মখলিছকে দুইটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করে। এসময় আজির উদ্দিন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। পরে খোন্দকার মোস্তাক আহমদের মন্ত্রীসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন এমন একজন সিলেটের রাজনৈতিক নেতার সহায়তায় ও আজির উদ্দিনের তৎপরতায় মখলিছ ছাড়া পায়। যে কোন ঘটনায় আজির উদ্দিন থাকে নেপথ্যে। পরে চরম মুহুর্তে সে আত্মপ্রকাশ করে, এটাই তার চরিত্র। তার সাথে মণিপুরী উলফাদের ঘনিষ্টতা অনেক পূর্ব থেকেই ছিল এবং এজন্য অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত নেয়ার সময় জনৈক নীলমনি সিংহ ছিল তার সহঅংশীদার। আজির উদ্দিনের পরিবার থেকে যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, তার সবগুলোই পরিবারই জামাত ঘরানার এবং তার ভাতিজি জামাই একজন জামাতি ও নাশকতা মামলার আসামী। এমনকি মখলিছ উদ্দিনের ছেলেরাও জামাতের সাথে সম্পর্কিত। এসব কারণে এলাকার সাধারণ জনগণ ভীত ও আতংকিত। তাই তার বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী পাওয়া যায় না। তার ভাই মখলিছ ছিল একসময় লিবিয়া প্রবাসী এবং সেখানে তার সখ্য হয় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজর ডালিম গংদের সাথে। এটা অনেকেই জানেন না যে, মেজর শরীফুল হক ডালিম ছিলেন স্থানীয় কুকীরতল সাবসেক্টর কমান্ডার- যা লাঠিটিলা সীমান্তের ঠিক ওপারে ভারতে অবস্থিত। ৭১ এর পর তিনি লাঠিটিলা বি.ও.পি তে প্রায়ই আসতেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ডালিমের ছত্রছায়ায় জুড়ী এলাকার অনেকেই লিবিয়া গিয়ে কোটিপতি হয়েছিলেন এবং এদের মধ্যে মখলিছ উদ্দিনও সম্ভবত একজন। ১৯৮৬ সালে প্রণীত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় (কুলাউড়া থানা) তার নাম ছিল না। কুলাউড়া থানার মুজিব বাহিনী (বি.এল.এফ) এর তালিকায় তার নাম নাই। জুড়ী এলাকায় শতকরা ৪৫ ভাগ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। এখানে ‘এথনিক কিনিসিং’ বা সম্প্রদায়গত ভাবে সংখ্যা লঘূ উচ্ছেদ করা হলে স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্প্রসারণ এর চরম সুবিধা হবে- যা হচেছ আজির উদ্দিনের মূল লক্ষ্য। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে দিবেন্দু দেব টলুর পরিবার তার বাড়ীর কাছাকাছি হওয়ায় তারা এর প্রথম শিকার হয়ে উৎপীড়িত হচ্ছেন। দিবেন্দু দেব টলু বলেন- আমরা নিরীহ, শান্তিপ্রিয়, এদেশের প্রাচীন কাল থেকে বসবাসকারী আদি বাসিন্দা। কেবলমাত্র সনাতন ধর্মালম্বী বলে আমরা নিপীড়িত হয়ে রাষ্ট্রীয় আইনের আশ্রয় নিলে সেখানেও এই আজির উদ্দিন তার দলীয় পদবী ও মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া পদবী ব্যবহার করে প্রশাসনকে স্তব্ধ করে রাখে। তদন্ত পূর্বক আজির উদ্দিন আহমেদের ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল, তার নেয়া রাষ্ট্রীয় ভাতা সূদসহ আদায়, তার দলীয় পদ বাতিল ও তার নানা অপরাধ-অপকর্মের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় প্রতিকার প্রাপ্তির জন্য দিবেন্দু দেব টলু সাংবাদিকদের সক্রিয় সহযোগীতা কামনা করেন।