প্রতিবন্ধীতার কাছে হার মানেনি কুলাউড়ার কিশোর হাবিবুর
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
জন্মের পর থেকেই হাবিবুর রহমানের (১৪) দুই হাতে কোনো আঙ্গুল নেই। তবুও তার হাতের লেখা খুবই সুন্দর। লেখাপড়ায়ও ভালো। প্রতিবন্ধিতাকে হার মানিয়ে এগিয়ে চলছে সে। হাবিবুর এবার কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজার দারুস সুন্নাহ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেডিসি) পরীক্ষা দিচ্ছে। সে একই উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের নর্ত্তন গ্রামের বাসিন্দা আইয়ূব আলী ও হাছনা বেগমের ছেলে এবং স্থানীয় চৌধুরী বাজার কুতুব শাহ দাখিল মাদ্রাসায় পড়ে।
সোমবার ১৬ নভেম্বর সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষা কেন্দ্রের ৮ নম্বর কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে হাবিবুর। আঙ্গুল ছাড়াই দুই হাতে চাপ দিয়ে কলম ধরে সে উত্তরপত্রে লিখছে। পরীক্ষা শেষে তার সঙ্গে কথা হয়। আঙ্গুল ছাড়া লেখালেখি করতে কষ্ট হয় কি না জানতে চাইলে হাবিবুর বলে উঠল, ‘লেখাপড়া করতে অইলে তো কষ্ট করা লাগব। আগে আগে কষ্ট অইতো। এখন আর হয় না।’ সে বাইসাইকেল চালিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করে। বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের পরীক্ষা কেন্দ্রেও বাইসাইকেলে আসা যাওয়া করছে। এমনকি কারও সাহায্য ছাড়াই দুই হাত দিয়ে সে ভাত খেতে পারে। ফুটবল তার পছন্দের খেলা। এবতেদায়ী পরীক্ষায় সে জিপিএ ৩ দশমিক ৫২ পেয়েছে। জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার ব্যাপারে হাবিবুর দৃঢ় আশাবাদী। বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায় সে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব আবদুল মোন্তাকীম জানালেন, প্রতিবন্দ্বি হিসেবে হাবিবুরকে পরীক্ষায় অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়।
হাবিবুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চৌধুরী বাজার কুতুব শাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ আইয়ূব আনসারী বলেন, ‘হাবিবুর লেখাপড়ায় ভালো। তার বাংলা ও ইংরেজি লেখা খুবই সুন্দর। আমরা তার প্রতি যতœশীল। তার জন্য আমাদের দোয়া আছে।’
হাবিবুরের মা হাছনা বেগম মুঠোফোনে জানান, তাঁর স্বামী আইয়ূব আলী কাতার প্রবাসী। দুই-তিন বছর আগে হঠাৎ করে তিনি (আইয়ূব) অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভালোমতো কাজ করতে পারেন না। চিকিৎসায় বেশ খরচ লাগে। যে টাকা দেশে পাঠান তাতে সংসার চলে না। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেঝো মেয়ে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন।