এবার ইতালিতে বিনা টাকায় কর্মী পাঠানোর প্রস্তাব

musharrofসুরমা টাইমস ডেস্কঃ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের পর এবার ইউরোপের অন্তর্ভূক্ত ইতালিতেও বিনা টাকায় কর্মী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে, আনুষ্ঠানিকভাবে ও বৈধ প্রক্রিয়ায় ইতালিতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইতালির পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী সেন. ভেনোদোত্তো দেলা ভেদোভার সঙ্গে বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই প্রস্তাব দেন।
ইস্কাটন গার্ডেন প্রবাসীকল্যাণ ভবনে মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতালি প্রতিবছরই মৌসুমি কিছু কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেয়। কিন্তু এটা কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয় না। দেশটির পররাষ্ট্র উপমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, ইতালি সরকার প্রতিবছর কতজন কর্মী নিতে চায়, কোন কোন কাজে কর্মী নিতে চায় সে বিষয় আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে আমরা সে অনুযায়ী কর্মী পাঠাবো। প্রয়োজন হলে ইতালিতে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে ইচ্ছুকদের আলাদা তথ্যভা-ার (ডাটাবেস) করা হবে। পাশাপাশি তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেবো।’
ইতালিতে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজারের মতো বাংলাদেশি বসবাস করে উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘ইতালির উপমন্ত্রী যে সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তা হচ্ছে, তাদের দেশে লোক যায় ঠিকই। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর এদিক-সেদিক চলে যায়। আশেপাশে দেশগুলোতে পাড়ি জমায়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশের সদস্য হিসেবে ইতালি সরকারকে এ জন্য বিভিন্ন দেশের কথা শুনতে হয়। তারা এ ধরনের ঘটনায় বিব্রত হন।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু অবৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মীদের নানাভাবে ভুল তথ্য দিয়ে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি পাঠায়। তাদের বেশির ভাগই মৌসুমী কর্মী। একটা সময় যখন তারা বেকার হয়ে যান তখন অবৈধভাবে পাশ্ববর্তীদেশে পাড়ি জমান। তাই ভবিষ্যতে এ সমস্যা এড়াতে ইতালি সরকারকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি আনুষ্ঠানিকভাবে ও বৈধ প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো ব্যবস্থা করতে।’ তিনি বলেন, ‘কর্মীরা যাওয়ার আগেই জেনে বুঝে যাবেন। তবে অভিবাসন ব্যয় অবশ্যই শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলেছি। উপমন্ত্রীও এসব শুনে খুশি হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দেশে ফিরেই এ নিয়ে আলোচনা করবেন এবং শিগগির ইতালির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে।’
ইতালিতে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের বৈধ করার বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনাÑজানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা তো আর আমাদের লোকদের অবৈধ বলতে পারি না। তবে জিজ্ঞাস করেছি সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি তারা হচ্ছে। জবাবে ভেনোদোত্তো দেলা জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে গত পাঁচ বছরে ইতালির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওদের নিজের লোকজনই অনেক বেকার হয়ে গেছে। তবে এখন তারা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে অবশ্যই বাংলাদেশিসহ অন্যদের ব্যাপারেও তারা উদ্যোগী হবে। যারা ওখানে অবস্থান করছেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’
এর আগে বৈঠক শেষে বের হয়ে ইতালির পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী সেন. ভেনোদোত্তো দেলা ভেদোভা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যে কারণে ইতালিতে অভিবাসীদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশি নয় অন্যদের ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে এ সমস্যা শিগগির কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। তখন অভিবাসীকর্মীদের বৈধ করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেব আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পাল মা, ইতালির পররাষ্ট্র উপমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান লরেনজো গালানতি, ঢাকায় ইতালি দূতাবাসের উপ প্রধান এডমনডো ফ্যালকোনি। বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার, যুগ্মসচিব মো. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।