খুনের সাথে যেন ভন্ডামীরও বিচার হয়

Kamrul_Killerসিলেটের সামিউল আলম রাজন । জীবিত অবস্থায় রাজনের নাম আমরা কেউ না জানলেও ওর মরার পর সবাই জেনেছিলাম । রাজন মারা যায়নি; ওকে মেরে ফেলা হয়েছে । খুঁটির সাথে বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে প্রকাশ্যে খুন করা হয়েছে । পিপাসার্ত হয়ে একটু পানি খাওয়ার আকুতি করলে পাষন্ডরা পানি তো দেয়নি বরং অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ঘাম খেতে বলেছে । রাজনের শত আহাজারির পরেও কামরুলের নেতৃত্বে কতিপয় পাষন্ড বাঁচতে দেয়নি এই নিষ্পাপ শিশুটিকে । রাজন হত্যার ভিডিওটি দেখে চোখের পানি ফেলেনি এমন মানুষ বোধহয় এদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না । শুধু এদেশের মানুষের কথা বলছি কেন; গোটা বিশ্বের যারাই এ হত্যাকান্ডের ঘটনা দেখেছে তাদের বিবেক ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল । মানুষ এমন পাষন্ড কি করে হতে পারে ? ফেসবুক, অনলাইন পোর্টাল, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় এ হত্যাকান্ডটির বিরুদ্ধে সবাই রুখে দাঁড়িয়েছিল । বিশ্ববাসী সেদিনগুলোতে দেখেছিল বাঙালীর ভিন্ন চিত্র । আমরাও যে কালেভদ্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি তার প্রমাণ দিয়েছিলাম রাজন খুন হওয়ার পর ।
পুলিশকে ঘুষ দিয়ে রাজন হত্যার মূল হোতা ও প্রধান আসামী সৌদি আরব পালিয়ে গিয়েছিল । আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগ-সাজোশ করে কামরুল দেশ ছেড়ে পালাতে পারলেও সৌদি পৌঁছার সাথে সাথেই সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা তাকে আটক করে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে সেখানকার পুলিশের কাছে হস্তানন্তর করে । অবশেষে দীর্ঘদিনের আইনি প্রক্রিয়া শেষে ইন্টারপোলের সহোযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরব থেকে খুনী কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে । সরকারের এ সফলতায় দেশবাসী অকৃপণ চিত্তে সরকারের প্রতি ‍কৃতজ্ঞ । এখন শুধু অপেক্ষা খুনী কামরুলের শাস্তি দেখার । পাষন্ড কামরুলের ছবি দেখে আবার জাগতে শুরু করেছে এদেশের সচেতন মানুষ । সবাই শুধু খুনী কামরুলের সর্বোচ্চ দন্ড চায় । দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কামরুলসহ রাজন হত্যায় অভিযুক্ত সকল আসামীর শাস্তি নিশ্চিত হওয়া একান্ত আবশ্যক কেননা গোটা দেশবাসী খুনীদের শাস্তি দেখার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে । রাজন হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রাপ্তির মাধ্যমে দেশে শিশু হত্যার সংখ্যা কমে আসবে । দেশে বর্তমানে শিশুদের ওপর বিশেষ করে গৃহ-পরিচারিকাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলছে; রাজন হত্যার সুষ্ঠু বিচার হলে এ ধরণেরও অপরাধও কমে আসবে ।
পত্রিকা ও টিভিতে খুনী কামরুলের ছবি দেখে চরমভাবে মেজাজ খারাপ হয়ে আছে । একটি নিষ্পাপ শিশু হত্যা করতে যার বুক কাঁপেনি, শিশুটি পানি পানের আর্তনাদ করায় যে পাষন্ড ঘাম খেতে বলেছে, জীবন্ত একটি কোমলমনা শিশুর ওপর ভ্যান চুরির অপবাদ এনে লৌহদন্ড দিয়ে যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেরেছে সেই অমানুষটি দাঁড়ি রেখেছে, টুপি মাথায় তুলেছে, সাদা রঙের চাদর জড়িয়েছে । দেখলে মনে হয় যেন একজন ইমাম সা’ব ! এমন জঘন্য একজন খুনী এ পোশাক ধারণ করে পক্ষান্তরে তার পশু সূলভ মানসিকাতার ওপর ধর্মীয় ব্যানার ঝুলিয়েছে । খুনীর মূল অপরাধের সাথে ধর্মকে ব্যবহার করার এ ভন্ডামীর শাস্তিও নিশ্চিত করা জরুরী । কামরুল একজন খুনী । অবশ্য খুনীরও আবার প্রকারভেদ থাকে । রাজনকে হত্যা করে কামরুল খুনীর সর্ব নিকৃষ্ট অবস্থানের প্রমাণ দিয়েছে । মৃত্যুদন্ড ছাড়া অন্য কোন শাস্তিই ওর জন্য যথার্থ না । প্রশ্ন জাগে, এমন একজন খুনীর কি একবারই মৃত্যুদন্ড যথেষ্ট । ওর অপরাধ বিচারে ওকে হাজার বার মৃত্যুদন্ড দেয়া আবশ্যক-দেশবাসীর এমনটাই চাওয়া । ইস ! তেমন সুযোগ যদি থাকত ? রাজনের হত্যাকারীদের দিয়েই শিশু হত্যার বিচার শুরু হোক । আমরা রাজনের সকল খুনীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই । একজন মা যদি তার খুনী সন্তানকে পুলিশের কাছে তুলে দিতে পারে তবে আমরা কেন খুনীর সর্বোচ্চ শাস্তির স্বাক্ষী হব না ? সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে আইন যেন কোন কার্পণ্য না করে ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
Faceboo.com/rajucolumnist/