মৌলভীবাজার এনডিএফ’র কর্মীসভা

সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ আয়োজিত এক কর্মীসভায় সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল দেশ প্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়। গতকাল রাতে শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যারয়ে মৌলভীবাজার জেলা এনডিএফ আয়োজিত কর্মীসভায় বক্তারা আরো বলেন দেশের চলমান রাষ্ট্রীয় ও দলীয় তথা সামগ্রিক সন্ত্রাস ও নৈরাজিক পরিস্থিতি শ্রমিক-কৃষক-জনগণকে আরও বিপর্যস্ত করে চলেছে। এক্ষেত্রে মহাজোট ও ২০ দলীয় জোট সামনে আসলেও এর জন্য দায়ী এদের প্রভূ সাম্রাজ্যবাদ। এ সমস্যা নিছক মহাজোট ও ২০ দলীয় জোটের বিষয় নয় বরং চলমান বৈশ্বিক মন্দা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বাজার ও প্রভাববলয় পুর্নবন্টনের প্রশ্নে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলকে নিয়ে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিফলন। বৈশ্বিক মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাজার ও প্রভাব বলয় পুর্নবন্টন নিয়ে মুদ্রাযুদ্ধ, বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউক্রেন, ইরাক-সিরিয়া তথা লেভান্তি-এ, ইয়েমেনে, লিবিয়া-আফ্রিকায় আঞ্চলিক যুদ্ধ বিস্তৃত হয়ে বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নয়াউপনিবেশিক ভারতকে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান, রাশিয়া ও পুঁজিবাদী চীন স্বীয় স্বার্থে কাজে লাগাতে চায়। ভারতও উভয় পক্ষের সাথে তাল মিলিয়ে এতদ্বাঞ্চলে স্বীয় স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এ প্রেক্ষিতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপলে নির্বাচন ও সরকার গঠনে ভারত প্রভূ সাম্রাজ্যবাদের সাথে সমন্বিত হয়ে ভূমিকা নিয়ে চলে। রাশিয়া ও চীন ভারতকে রিক, ব্রিকস, সিস প্রক্রিয়ায় এসসিও’র(ঝঈঙ) সদস্য করতে সচেষ্ট। আবার যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এশিয়া-প্যাসিফিক পলিসির প্রেক্ষিতে লিঞ্চপিন(খরহপযঢ়রহ) রাষ্ট্র হিসেবে চীনের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। এতদ্বাঞ্চলে মার্কিনের প্রাধান্য থাকলেও রাশিয়া ও চীনের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়টি সামনে আসে। এতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন প্রাধান্য হারাতে চায় না তেমনি রাশিয়া ও চীন ক্ষমতায় অধিস্থিত করতে পিছপা নয়। সাম্রাজ্যবাদী স্বীয় স্বার্থে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত করতে চায়। বাংলাদেশে চলমান সংঘাতের মূল কারণ এখানে নিহিত। অথচ এই প্রকৃত সত্যকে আড়াল করা হচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কাপ্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন তার প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে চায় তেমনি সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও পুঁজিবাদী চীন তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার উপায় তাদের নেই। তাই চলমান সন্ত্রাস ও নৈরাজিক পরিস্থিতির সমাধান না হয়ে আকাঁবাঁকা গতিপথে জটিল রূপে অগ্রসর হচ্ছে, যার প্রকাশ ঘটছে দেশী-বিদেশী নাগরিক হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে। এনডিএফ জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ নূরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির। জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্টিত কর্মীসভায় বক্তব্য রাখেন এনডিএফ নেতা আফজাল চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমেদ, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর মোঃ জসিম উদ্দিন ও সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি তারেশ বিশ্বাস সুমন, দর্জি শ্রমিক সংঘ জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শিমূল দাশ, রিকশা শ্রমিক সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক কিসমত মিয়া, নির্মাণ শ্রমিক সংঘের জমির আলী, মনা মিয়া, মোঃ জসিমউদ্দিন, শাহিন মিয়া প্রমূখ। সভা থেকে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে এনডিএফ ঘোষিত ১৩ দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার আহবান জানান। সভায় আগামী জানুয়ারী’১৬-এর মধ্যে ২য় জেলা সম্মেলন সফল করার সিদ্ধান্ত হয়।