নবীগঞ্জে নারী কেলেংকারী ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক মেম্বার খুন

আহত ১০, গ্রেফতার ৪

Modhu-Miahউত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ থেকে: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুস্তমপুর টোলপ্লাজার নিকটে নারী কেলেংকারীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় প্রতিপক্ষের হামলায় প্রান গেল জনপ্রিয় সাবেক মেম্বার মধু মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তির। এ ঘটনার পর পরই উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গুরুতর আহতরা হল, ভুট্রো মিয়া (৩৫), জামাল মিয়া (৩৪), জয়নাল মিয়া (৫৫), কয়েছ মিয়া (২৫), রুহেল মিয়া (২৫), আব্দুল ওয়াহিদ (৪০), আব্দুল কালাম (৪৫), নিজাম উদ্দিন (৪০) ও আলী হোসেন (৩৮)। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৪জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হল, আব্দুল মন্নান, আজির উদ্দিন, খোকন মিয়া ও মোজাক্কির হোসেন। এলাকার একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে হারানোর শোকে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আব্দুল বাতেন খান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদ আলীসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামের ধর্নাঢ্য ব্যক্তি জাহির উদ্দিনের মালিকানাধিন একটি বিলাস বহুল বিল্ডিংয়ে একটি কক্ষ গত ০২ অক্টোবর শুক্রবার ভাড়া নেয় কুর্শি গ্রামের মনির উল্লাহর পুত্র হাফিজ মিয়া ও কসবা গ্রামের জনৈকা চাঁদনী আক্তার নামের যুবক-যুবতি। তারা বিল্ডিংয়ের মালিককে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয়। এক পর্যায়ে বিবাহের কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। গত ৪ অক্টোবর রবিবার বিকালে ভাড়াটিয়া বাসা স্থানীয় লোকজন হাজির হয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে সাবেক মেম্বার মধু মিয়ার জিম্মায় নেয়া হয়। পরে উক্ত মধু মিয়া স্থানীয় লোকদের নিয়ে পুলিশ ফাড়িঁতে আটককৃতদের নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদ আলী ও মেম্বার জমির আলীসহ আটককৃতদের আত্বীয় স্বজনরা পুলিশের কাছ থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুচলেকা রেখে ছাড়িয়ে আনেন। এ ঘটনায় কিবরীয়া চৌধুরী সম্পাদিত “ আমাদের নবীগঞ্জ ডট কম” নামের একটি অন লাইন পত্রিকায় বিল্ডিংয়ের মালিক জাহির উদ্দিনকে জড়িয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ফলে জাহির উদ্দিন তার দীর্ঘ দিনের প্রতিপক্ষ মধু মিয়ার ওই সংবাদে ইন্দন রয়েছে মর্মে সন্দেহ করেন। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইন ও ফেইসবুকে ছড়ানো হয়। এতে ওই ঘটনার সংবাদ কর্মী ও মধু মিয়া মেম্বারের লোজনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রভাবশালী জাহির উদ্দিনের লোকজন। এরই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টার সময় জাহির উদ্দিনের লোকজন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবেদক কিবরীয়া চৌধুরীকে রুস্তমপুর টোলপ্লাজায় পেয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানার চেষ্টা করে। এ নিয়ে জাহির উদ্দিনের লোকজনের সাখে কিবরীয়া চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় তাদের তোপেরমূখে পড়ে কিবরীয়া চৌধুরী এলাকার প্রিয় মুখ সাবেক বারবারের নির্বাচিত মেম্বার মধু মিয়াকে জরুরী কাজ আছে মর্মে ফোন করে ঘটনাস্থলে আনে। এতে জাহির উদ্দিন ও তার লোকজন আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে মোটরসাইকেল যোগে ছটকে পড়ে সংবাদকর্মী কিবরীয়া। ওই সময়ে উত্তেজিত জাহির উদ্দিন,তার ছেলে জাবেল মিয়া, ও তার লোক ভুট্টু মিয়া, ইসলাম উদ্দিন, জুনেদ মিয়া ও ফয়েজ মিয়াসহ ২০/৩০ জনের একদল হামলাকারী দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে মধু মিয়াকে প্রানে হত্যার উদ্যেশ্যে মারপিট করে। এ সময় হামলাকারীদের কবল থেকে পিতা মধু মিয়াকে রক্ষা করতে পানিউমদা রাগিব রাবেয়া কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র মামুন এগিয়ে আসে। এমনকি হামলাকারীদের কবল থেকে পিতাকে বাচাতে হাত জোর করে প্রানভিক্ষা চায়। এতেও হামলাকারীরা ছাড় দেয়নি মধু মিয়াকে। পিতাকে বাচাতে গিয়ে সেও গুরুতর আহত হয়। এ সময় হামলাকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে মহাসড়কে মধু মিয়ার রক্তাক্ত নিথর দেহ ফেলে গিয়ে হইহুল্লোড় ও মিছিল দিয়ে গ্রামের ভেতর চলে যাওয়ার সময় মধু মিয়ার লোকজন এগিয়ে আসলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেঁ। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়। আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে মুমুর্ষ অবস্থায় মধু মিয়াকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় রাত প্রায় ৩টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মধূ মিয়া। এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ রাতেই উল্লেখিত ৪ জনকে আটক করে।
এ ব্যাপারে নিহতের মেয়ে শিফা বেগম জানান, তার পিতা সাবেক মেম্বার মধু মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনার আগে হৈবতপুর গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে কিবরীয়া চৌধুরী ফোন করে মধু মিয়াকে ডেকে নেয়। এর কিছুক্ষন পরই প্রতিপক্ষের লোকজন কর্তৃক তার বাবার রক্তাক্ত জখমের খবর পান।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আব্দুল বাতেন খান জানান, নারী সংক্রান্ত একটি ঘটনা স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানাগেছে। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। এলাকার আইনশৃংঙ্কলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে মামলার ও তদন্তের প্রেক্ষিতে অপরাধিদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে যারাই জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যাবে কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা।