আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামায়াতের ১০ অবৈধ পশুর হাট

poshur hatসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটে কোরবানীর অবৈধ পশুর হাট বসতে দেওয়া হবেন না বলে পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষিত। বরং অবৈধ ভাবে কোরবানীর হাট বসিয়ে প্রায় কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব লোপাটে নেমেছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতারা। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতারা জোট বেধে অনন্ত ১০ টি অবৈধ পশুর হাট বসিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। অথচ ১০টি হাট সিলেট সিটি করপোরেশন কিংবা সদর উপজেলা পরিষদ থেকে বৈধভাবে ইজারা দেওয়া হলে সরকারি কোষাগারে কোটি টাকার উপরে জমা পড়তো। শুধুমাত্র সদর উপজেলা থেকে এবার যে ৪টি পশুর হাট নগরীর বাইরে ইজারা দেওয়া হয়েছে তা থেকে সরকারি কোষাগারে প্রায় ২০ লাখ টাকা জমা পড়েছে। সরকার দলের নেতারা বলছেন, অবৈধ এ হাটগুলোতে বৈধতা দেওয়া হলে সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়তো তেমনি বৈধ ইজারাদাররাও লাভবান হতো।
জানা গেছে, প্রতিবছরই সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় বিপুল সংখ্যক অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়। আর এ কারণে সরকার প্রতিবছর বড় অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হয়। গত বছরের মতো এবারো সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীতে কোনো পশুর হাট ইজারা দেয়নি। সিলেট সদর উপজেলা থেকে ৪টি হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো শাহপরান গেইট, এভারগ্রীন মাঠ, মিরাপাড়া ও লাক্কাতুরা পশুর হাট। এ ৪ হাট ইজারায় সরকার প্রায় ২০ লাখ টাকার রাজস্ব পেয়েছে।
এবারো সিলেট নগরীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা জোট বেধে বেশ কয়েকটি পশুর হাট বসিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ সদর উপজেলা খেলার মাঠে বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতারা এলাকাবাসীর নামে পশুর হাট বসিয়ে মাইকিং শুরু করেছেন। গত ৪ বছর ধরে এ স্থানে সরকার দলের নাম ভাঙ্গিয়ে পশুর হাট পরিচালনা করে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান পাপ্পু, আওয়ামী লীগ নেতা মোশাহিদ আলীর ভাই শামীম আহমদ, ছাত্রদল নেতা শাহ সাইদুর রহমান হিরুসহ বিএনপি জামাতের লোকজন। একই ভাবে গত বছর সরকার দলের লেবাসে নগরীর উপশহরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের প্রবেশ পথে ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাহের ইজু, শ্রমিকলীগ নেতা শামীম ইকবাল, অর্থমন্ত্রীর সহকারী ও ১৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ সিরাজ অবৈধ হাট বসিয়েছেন। এছাড়া কয়েদীর মাঠে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী উরফে মামা খন্দকার, ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুমিন, ছড়ারপাড়ের কালাম ও তার লোকজন পশুর হাট বসিয়ে ব্যবসা করছেন।
এদিকে নগরীর পাঠানটুলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজের পিএস ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাব্বির খান, কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরানের ভাই অবৈধ পশুর হাট বসানোর প্রস্ততি নিচ্ছেন। নগরীর রিকাবীবাজারে ভিআইপি সড়কে গত বছরের মতো সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রকিব বাবলু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে পশুর হাট বসানো হচ্ছে। নগরীর এমসি কলেজ রোডে আনন্দ সংসদ মাঠে তাতীদল নেতা আবদুল গফফার, আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকার, সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে চলছে অবৈধ পশুর হাট।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবছর নগরীতে কোনো পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ কোনো হাট পরিচালনা করলে তার অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। সিসিক সূত্র জানায়, নগরীতে কোনো অবৈধ হাট বসলে তা উচ্ছেদের দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। এ ব্যাপারে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান পাপ্পু দাবি করে বলেন, আমি পশুর হাটের সাথে জড়িত নই। মেলা বাবলু পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে। সবকিছু সেই নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে তিনি গত ৪ বছর হাটের সাথে জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করেন।
অর্থমন্ত্রীর সহকারী ও ১৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ সিরাজ পশুর হাটে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেন, অর্থমন্ত্রীর ইমেজ নষ্ট করতে একটি চক্র এ কাজ করছে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমি সব সময় অবৈধ পশুর হাটের বিরুদ্ধে অবস্থান করে এসেছি। কেউ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ হাট বসালে পুলিশের দায়িত্ব তাদের উচ্ছেদ করা। সরকার চাইলে এ সকল অবৈধ হাটে রাজস্ব নির্ধারণ করে আদায় করতে পারে।
এদিকে সিলেট নগরীতে যাতে কোনো অবৈধ পশুর হাট না বসে তার জন্য এসএমপি কমিশনার কামরুল আহসান ৬ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনার কথা স্বীকার করে বিমানবন্দর থানার ওসি গৌছুল হোসেন বলেন, অবৈধ পশুর হাটের ব্যাপারে পুলিশ জিরো টলারেন্স। যেকোনো মূল্যে শাহী ঈদগাহর অবৈধ পশুর হাটসহ সকল বিমানবন্দর থানা এলাকার সকল অবৈধ হাট ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।
জালালাবাদ থানার ওসি আকতার হোসেন বলেন, তার থানা এলাকায় কোনো অবৈধ হাট বসতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ অবৈধ হাট বসায় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।