মৃত্যুর আগের দিন মেয়েকে শেষ যে কথা বলেছিলেন মন্ত্রী মহসিন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সদ্য প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর ছোট মেয়ে সৈয়দা সাবরিনা শারমিন তাঁর বাবাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণমূলক একটি পোষ্ট করেছেন। শনিবার প্রথম প্রহরে করা এই পোষ্টে উঠে এসেছে মহসিন আলীর ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক ইচ্ছার কথা।
পৃথিবী ছাড়ার আগে বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট শারমিন বাবার সব কাজে দায়িত্ববান হওয়ায় তাকে ছেলের মত মনেও করতেন তিনি।
শারমিন মনে করেন তাঁর বাবা এখন বঙ্গবন্ধু ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বেহেশতেই আছেন। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের উদ্দেশ্যে সৈয়দা সাবরিনা শারমিনের পোষ্টটি হবহু তোলে দেয়া হল:
তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। কিন্তু বাবা বলতেন আমি নাকি উনার ছেলে। সবার সাথে আমাকে মেয়ে না বলে ছেলে হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন। অনেক দায়িত্ব আমাকে পালন করতে বলতেন। যেমন পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, দেশব্যাপী সাড়া জাগানো বোনের বিয়ে, দেশ-বিদেশে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, বাবার সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজ, পারিবারিক ব্যবসাসহ অনেক কিছুই আমাকে করতে হতো।
সর্বশেষ বাবা অসুস্হ হলে আমিই বাবাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং সার্বক্ষণিক বাবার পাশে থেকে চিকিৎসাসহ সকল বিষয় দেখাশোনা করি। বাবা ধীরে ধীরে সুস্হ হয়ে ICU থেকে CCU তে স্হানান্তরিত হয়েছিলেন। নিজের খাবার নিজেই খেতে পারছিলেন। ডাক্তারদের অনেক আশাবাদী করে তুলেছিলেন।
আসল ঠিকানায় যাওয়ার আগেরদিন আমাকে বলেন, “তুমি আমাকে ভালবাসনা?”
আমি বলি, “বাবা, অনেক ভালবাসি তোমাকে। অনেক, অনেক, অনেক।”
বলল, “তাহলে আমাকে দেশে নিয়ে যাও। সেখানে প্রিয় মানুষদের কাছে গেলেই অামি সুস্হ হয়ে যাব। এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের শেষ না করে অামি পৃথিবী ছেড়ে যাব না।”
একজন রণাঙ্গনের সম্মুখ সৈনিক হিসেবে বাবার স্বপ্ন ছিল এদেশ একদিন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার মুক্ত হবে। উড়বেনা আর তাদের গাড়ীতে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকা।
চেয়েছিলেন দেশে ফিরেই পবিত্র হজ্জ্বে যাবেন। প্রিয় মক্কা আর প্রিয় নবীর রওজা থেকে ফিরেই বাস্তবায়ন করবেন সমাজকল্যাণের নতুন নতুন পরিকল্পনা। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে বাবাকে মহান আল্লাহ্ তায়ালা নিয়ে গেলেন, আল্লাহর প্রয়োজনে আরও বড় কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য। আমি পারলামনা পূর্বের মত বাবাকে সুস্হ অবস্হায় ফিরিয়ে আনতে।
না বাবা, আমি কিন্তু হারিনি। তুমিতো আল্লাহর কাছেই গিয়েছো। আমি ফিরে এসেছি তোমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে, তোমার প্রিয় ভালবাসার মানুষগুলোর কাছে। তোমার মতই নিজেকে উৎসর্গ করব তাদের কল্যাণে।
তোমার প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, “তুমিতো বাবা হারিয়েছ। আর আমি হারিয়েছি আমার এক সৎ সাহসী মুজিবসেনাকে, যিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পৃষ্ঠপোষক ও আমার পাহারাদার।”
আমিও কথা দিলাম তোমাকে বাবা, তোমার শেখানো মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, একজন মুজিবসেনা হয়ে তোমার প্রিয় নেত্রীর পাহারাদার হব। জনকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে সত্যিই আমি প্রমাণ করব আমি তোমার ছেলে। আমি জানি, তাতেই তোমার আত্মা শান্তি পাবে। আর আমাকে শক্তি জোগাবে তোমার সারা জীবনের অর্জন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান আর কোটি মানুষের চোখের জল।
ভালো থেকো বাবা। অনেক ভাল। কারণ তোমার অনেক প্রিয় আদর্শের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধারাতো এখন তোমার কাছেই আছে। যাদের জন্য তুমি নিয়মিতই চোখের জল ফেলতে। আমি জানি বাবা, তুমি বেহেশতে তাদেরই খুঁজে ফিরবে। সেখানেও তুমি নিজেকে বিলিয়ে দিবে বাবা.. বাবাগো..