অন্ধকারে রিকশা থামিয়ে গণধর্ষণ : অপমানে স্বামী নিরুদ্দেশ

Gang Rape Rapeসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সন্ধ্যায় রিকশায় করে বোনের বাসায় যাচ্ছিলেন এক গৃহবধূ। পথে রিকশাচালক মুঠোফোনে তাঁর ১০ সহযোগীকে ডাকেন। এরপর তাঁকে এক জায়গায় নিয়ে সবাই ধর্ষণ করেন।
এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। জানাজানি হলে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গৃহবধূ মামলা করেন। এরই মধ্যে গৃহবধূকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন স্বামী। গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবারের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায়।
গৃহবধূর পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূ রিকশায় করে তাঁর বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম কৌশলে মুঠোফোনের মাধ্যমে তাঁর ১০ সহযোগীকে এক জায়গায় জড়ো করান। এরপর একটি জঙ্গলের সামনে যান ওই রিকশাচালক। সেখানে চালক ও তাঁর সহযোগীরা রিকশাসহ গৃহবধূকে জোর করে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জাহাঙ্গীর ও তাঁর সহযোগী তারেক আহমেদ, হামিদ মিয়া, সাইফুল ইসলাম, খালেক মিয়া, ফালু মিয়া, আল-আমিন ও রনিসহ ১১ জন তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ (ভিডিও) করা হয়। পরে ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অসুস্থ অবস্থায় গৃহবধূকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাড়ি ফিরে ভয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ এ ঘটনা পরিবারের কাউকে জানাননি। পরদিন শুক্রবার সকালে মুঠোফোনে ওই ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। এর পরপরই গৃহবধূকে ছেড়ে চলে যান তাঁর স্বামী। বিকেলে ডাংগা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইকবাল মোল্লা ও যুবলীগের স্থানীয় নেতা আরিফুল ইসলামের উপস্থিতিতে সালিস বৈঠক হয়। সেখানে অভিযুক্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মঙ্গলবারের মধ্যে জরিমানা পরিশোধ করতে বলা হয়।
খবর পেয়ে রোববার রাতে অভিযুক্ত তাহের মিয়া (২৫) ও হামিদ মিয়াকে (২৭) আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার রাতে ধর্ষণের শিকার নারী বাদী হয়ে মামলা করেন।
এলাকার এক তরুণ বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকার চিহ্নিত বখাটে। তাঁরা এলাকার মেয়েদের সব সময়ই উত্ত্যক্ত করেন। ভয়ে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
ডাংগা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইকবাল মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, সালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল জরিমানা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই তো মামলা দায়ের ও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ জন্য টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
ধর্ষণের ঘটনার সালিস কীভাবে করলেন—জবাবে তিনি বলেন, ‘মূলত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সালিসটি হয়। আমি পরে যোগ দিয়েছি। মেয়ের মা আর বোনজামাইয়ের জোরাজুরিতেই সালিসটি হয়েছে। আমরা করতে চাইনি।’
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোমবার রাতে ভিকটিম (গৃহবধূ) নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে আজ (মঙ্গলবার) আদালতের মাধ্যমে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।