বার কাউন্সিল নির্বাচন আজ

Bangladesh Bar Councilসুরমা টাইমস ডেস্কঃ কয়েক দফা পেছানোর পর আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ও আইন পেশার সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ ২৬ আগস্ট বুধবার। এ নির্বাচনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুপ্রিমকোর্ট বারের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। প্রচারণার জন্য উচ্চ আদালত চত্বরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন ‘নীল’ প্যালেন ও আওয়ামী আইনজীবীদের ‘সাদা’ প্যানেলের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণাও চলছে ব্যাপকভাবে। ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের প্যানেল। বিজয় ছিনিয়ে আনতে নানা পরিকল্পনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সরকার সমর্থক ও বিএনপি সমর্থক দুই প্যানেলের প্রার্থীরা।
এ দুই প্যানেল ছাড়াও অনেক আইনজীবী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ভিন্ন মতাদর্শের আইনজীবী সংগঠনের ব্যানারে। তবে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সরকার সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল।
মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের অন্যতম প্রার্থী ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
অপরদিকে, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারসহ তাদের দলের কয়েকজনকে আইনজীবীদের কাছে ভোট চাইতে দেখা যায়।
বুধবার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রসহ সারা দেশের সব জেলার দেওয়ানি আদালতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী সারা দেশের ৪৩ হাজার ৩০২ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
এর আগে গত ২০ মে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এক আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন পিছিয়ে ২৭ মে দিন ধার্য করা হয়। এরপর আবারো হাইকোর্টের এক আইনজীবী বার কাউন্সিল নির্বাচন ২০১৫-এর তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করলে শুনানি করে তা তিনমাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ আদেশের পওর স্থগিতাদেশ চেয়ে বার কাউন্সিল আপিল করলে ভোটার তালিকা হালনাগাদের শর্তে আপিল বিভাগ প্রথমে ১৩ আগস্ট তারিখ ধার্য করেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেলের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৬ আগস্ট নির্বাচনের তারিখ ধার্য করে দেন আপিল বিভাগ।
নির্বাচনে ১৪টি সদস্য পদের জন্য চূড়ান্তভাবে ৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৪ জন সদস্যের মধ্যে সারাদেশে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাতজন এবং দেশের সাতটি অঞ্চলের স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে সাতজন নির্বাচিত হবেন। একজন আইনজীবী সাধারণ আসনের সাতজন এবং নিজ অঞ্চলের একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
জানা গেছে, সাধারণ আসনে সাতজন সদস্যের বিপরীতে ৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাতটি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির সাতটি সদস্যপদে মোট ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ নির্বাচনে সাধারণ আসনে সাতটি সদস্য পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আরেকজন উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট বোরহানউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া।
অন্যদিকে সাধারণ আসনে সরকার সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বার কাউন্সিলের সাবেক নেতা সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট পরিমলচন্দ্র গুহ (পিসি গুহ), অ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্না ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম।
সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল ছাড়াও ঐক্যবদ্ধ আইনজীবী সমাজ নামে আরেকটি প্যানেল দেয়া হয়েছে। এ প্যানেলে আছেন ড. কামাল হোসেনের অনুসারী নেতা ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, শাহ মো. খসরুজ্জামান, একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, সরওয়ার ই-দীন, মো. হেলাল উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম।
তিন প্যানেলের বাইরে যারা আছেন তাদের মধ্যে সাধারণ আসনে হলেন- মো. ইস্রাফিল, মো. ইউনুস আলী আকন্দ, নাসির উদ্দিন আহম্মেদ অসীম, আবুল কালাম আজাদ, আবুল হোসেন, এনামুল কবির হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন মল্লিক, মাহবুব মিয়া, শওকত হায়াত, সামছুল হক, সুলতান এ সবুর।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘এ নির্বাচন নিয়ে আমরা আশাবাদী। ইতোমধ্যে আমরা এ নির্বাচনের জন্য দেশের সকল বারে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেছি। আশা করছি সকল আইনজীবী আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’
জানতে চাইলে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি আইনজীবীদের পাশে সব সময় ছিলাম, আছি। আমি আমার শত ব্যস্ততার মধ্যেও আইনজীবীদের সময় দেয়ার চেষ্টা করি, তাদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করি। এ বারের নির্বাচনে সাধারণ আসনে আইনজীবীরা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে আমি আশাবাদী।’
উল্লেখ্য, ১৫ সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত বার কাউন্সিল নির্বাচন প্রতি তিনবছর পর অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে পদাধিকার বলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। বাকি ১৪ জন আইনজীবীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ১৪ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে থাকেন।