কানাইঘাটে যৌতুকের বলি ৩ সন্তানের জননী হাজিরা বেগম : স্বামী, দেবর ও শাশুড়ী পলাতক : শ্বশুর গ্রেফতার

Joutukকানাইঘাট প্রতিনিধিঃ সিলেটের কানাইঘাটে যৌতুক লোভী স্বামীকে বিদেশে যাওয়ার টাকা এনে দিতে না পারায় স্বামীর নির্যাতনে নির্মম ভাবে খুন হয়েছেন ৩ সন্তানের জননী হাজিরা বেগম। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার উপজেলার ২নং লক্ষিপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির সিমান্তবর্তী কালীনগর (নুনছড়া) গ্রামে। খবর পেয়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং সুরত: হাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য ওমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় নিজ গ্রামের জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাযা শেষে পঞ্চায়েতি গোরস্থানে নিহতের লাশ সমাহিত করা হয়। এঘটনায় নিহতের ভাই ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ০৬, তাং- ০৫/০৮/২০১৫ইং। মামলায় হাজিরার স্বামী জহির আহমদ (৩০), দেবর শরিফ আহমদ (২৫), শ্বশুড় আব্দুল আজিজ (৬৫), শ্বাশুড়ী সুফিয়া বেগম (৫৫) কে আসামী করা হয়েছে। এঘটনায় পুলিশ হাজিরার শ্বশুড় আব্দুল আজিজ (৬৫) কে গ্রেফতার করেছে। গতকাল সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর সার্কেল) ধিরেন্দ্র কুমার চক্রবর্তী সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
মামলার বিবরণ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলাধীন ২নং লক্ষিপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের মেয়ে হাজিরা বেগম (২৪) কে ২০০৪ সালে একই ইউপি’র নুনছড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ এর পুত্র জহির আহমদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী, শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ী যৌতুকের জন্য হাজিরা বেগমের উপর চালাত নির্যাতন। হাজিরা বেগম কোলের ৩টি অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যৎ সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে তাদের দাবী মোতাবেক পিত্রালয় থেকে যৌতুক বাবত নগদ টাকা স্বামীকে এনে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এনিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার গ্রাম্য শালিশ বিচার ও হয়েছে। সম্প্রতি স্বামী জহির আহমদ বিদেশে যাওয়ার জন্য স্ত্রী হাজিরা বেগমকে তার পিত্রালয় থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। স্বামীর নির্যাতন এবং নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হাজিরা বেগম পিত্রালয়ে গিয়ে দরিদ্র পিতা মাতার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাইলে তারা উক্ত যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। হাজিরা বেগম পিত্রালয় থেকে স্বামীর দাবীকৃত যৌতুকের টাকা আনতে না পারায় স্বামী, শ্বশুর এবং শ্বাশুড়ী মিলে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে লাশের গলায় গামছা পেচিয়ে বসত ঘরের তীরের সাথে ঝুলিয়ে রাখে এবং পরদিন ৫ আগষ্ট বাহির থেকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে পরিবারের সবাই পালিয়ে যায়।
ঐদিন সকাল ১১টার দিকে হাজিরা বেগমের স্বামী জহির আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী হাজিরা বেগমের মৃত্যুর কথা শ্বশুড় বাড়ীর লোকজনকে জানায়। খবর পেয়ে হাজিরার ভাই ফখরুল ইসলাম ও তার আত্বীয় স্বজনেরা হাজিরার স্বামীর বাড়ীতে গিয়ে দেখতে পান হাজিরাকে খুন করে গলায় ওড়না পেচিয়ে পা মাটির সাথে রেখে ঘরের তীরের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার নিহত হাজিরা বেগমের লাশ ময়না তদন্ত শেষে নিজ বাড়ীতে আনা হলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। নিহতের লাশ এক নজর দেখার জন্য গ্রামের শত শত মহিলারা ভিড় জমান। এসময় নিহতের ৩টি অবুঝ শিশু ফৌজিয়া বেগম (৮), আবুল কালাম (৫) ও আবুল ফয়েজ (৩) মৃত মায়ের শরীর জড়িয়ে ধরে মা মা বলে আহাজারি শুরু করে। এসময় উপস্থিত লোকজন ও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোর দাবী জানান।
এব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইন্চার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্যান্যদের গ্রেফতারের জন্য জোর পুলিশি তৎপরতা চলছে।